বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা সুপ্রিম কোর্টের আদেশের প্রতি সম্মান রেখে ভবন নির্মাণ শুরু করেছি। তবে নির্মাণ কাজে একটু সময় বেশি লাগতে পারে।
তিনি বলেন, উত্তরায় বরাদ্দ পাওয়া জায়গায় নতুন ভবনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে ১৩ তলা ভবনের ৬৫ শতাংশ ফ্লোর স্পেস বিক্রি শেষ হয়েছে। বাকি ৩৫ শতাংশ বিক্রির প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
‘ভবনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চললেও বর্তমান ভবন ছাড়ার আগে নতুন ভবন ব্যবহার উপযোগী হবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে নতুন ভবনের কাজ কতটুকু অগ্রগতি হয়, তার ওপর নির্ভর করবে। আমরা এখান থেকে চলে যাবো এটা নিশ্চিত। তবে আমরা আরো কিছুদিন এ ভবনে থাকলে দেশের তেমন কোনো ক্ষতি হবে বলে মনে হয় না। ’
এ অবস্থায় নতুন করে সময় বাড়ানোর জন্য আদালতের কাছে আবেদন করা হবে কি-না? এমন প্রশ্নের উত্তরে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘আমাদের হাতে আরো দুই-তিন মাস সময় আছে। সময় বাড়ানোর জন্য আবেদনের বিষয়ে এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না। ’
তিনি বলেন, স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব ভবনে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আর ভাড়া অফিসে যাওয়ার মতো আমাদের সাধ্য নেই। কারণ সাড়ে ৪০০ স্টাফ নিয়ে ভাড়া ভবনে যাওয়া সম্ভব না। তাই একটু সময় বেশি লাগলেও নিজস্ব ভবনেই যাবো। তবে নতুন ভবন সম্পূর্ণ নির্মাণের আগে বর্তমান ভবন ভাঙা হলে রফতানি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আলাপচারিতায় বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কারওয়ান বাজারে বর্তমান ভবনের বিভিন্ন ফ্লোর যাদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে তাদের নতুন ভবনে স্থান দেওয়া হচ্ছে। নির্মাণে সহযোগিতা হিসেবে তাদের কাছে অগ্রিম কিস্তি নেওয়া হয়েছে। প্রতি বর্গফুটের দাম ধরা হয়েছে ১০ হাজার টাকা। এই দরের সঙ্গে বর্তমান ভবনের বিক্রি করা মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। তিনটি ব্যাংক ছাড়া ভবনের বিভিন্ন ফ্লোর যাদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে তারা সবাই বিজিএমইএ-এর সদস্য।
জানা গেছে, উত্তরায় নির্মাণাধীন নতুন ভবনের তৃতীয়তলা পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে। ২০২০ সাল নাগাদ মালিকানা বুঝিয়ে দেওয়া হবে। উত্তরায় তৃতীয় প্রকল্পে ১৭নং সেক্টরে ১১০ কাঠা জমি বাজার মূল্যের অর্ধেক মূল্যে বিজিএমইএ-কে বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। নতুন ভবনে আন্তর্জাতিকমানের সব সুযোগ-সুবিধা রাখা হচ্ছে।
এর মধ্যে পোশাক খাতের গবেষণা ও উন্নয়ন, প্রদর্শনী কেন্দ্র, ক্রেতা এবং বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক উপযোগী হল, সুইমিং পুল ও অ্যাপারেল ক্লাব উল্লেখযোগ্য। নতুন ভবনটি কারওয়ান বাজারের বর্তমান ভবনের তুলনায় আকারে দ্বিগুণ বড়।
এদিকে বিজিএমইর পক্ষ থেকে ফ্লোর স্পেস ক্রেতাদের ইজারা দেওয়া নিয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সঙ্গে চলে আসা বিরোধ শেষ পর্যন্ত মিটেছে। ইজারা দলিলের সংশ্লিষ্ট ধারাটি বাতিল করেছে রাজউক। ফলে গত মাস থেকে ফ্লোর বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষমতা পেয়েছে বিজিএমইএ।
কারওয়ান বাজারের বিজিএমইএ ভবন নিয়ে একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। পরে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে (সুয়োমোটো) এ বিষয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
এ রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে ভবনটি ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে রাজউককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
২০১৩ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এরপর বিজিএমইএ-এর পক্ষ থেকে আপিল করার অনুমতি চেয়ে (লিভ টু আপিল) আবেদন করা হয়। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর প্রকাশিত হয়।
এ রায়ের কপি পাওয়ার পর ৮ ডিসেম্বর বিজিএমইএ রিভিউ আবেদন দাখিল করে। ২০১৭ সালের ৫ মার্চ এ রিভিউ আবেদন খারিজ করেন আপিল বিভাগ। এরপর ভবন সরাতে তিনবছর সময় চেয়ে আবেদন করে বিজিএমইএ।
এ আবেদন নিষ্পত্তি করে ২০১৮ সালে আপিল বিভাগ ৬ মাস সময় দিয়েছিলেন বিজিএমইএ-কে।
বাংলাদেশ সময়: ০৫২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৯
জিসিজি/এমএ