বাণিজ্যমেলায় দর্শণার্থীদের মতে, মেলাটির নামকরণ অনুসারে এতে পর্যাপ্ত পরিমাণ আন্তর্জাতিক বাজারের পণ্য থাকার কথা। কিন্তু এবারের মেলায় তা খুব একটা চোখে পড়ছে না তাদের।
এ বিষয়ে এলেক্স রুবেল নামে এক দর্শণার্থী বাংলানিউজকে বলেন, আমি গত ১৫ বছর ধরে ঢাকায় বসবাস করছি। প্রতিবার আমি এই মেলায় অনেক আনন্দের সঙ্গে আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অংশগ্রহণ করি এবং কেনাকাটা করি। অন্যান্যবার মেলায় বিদেশি পণ্যের সমাহার দেখি যা আমার কাছে মেলার মূল আকর্ষণ হিসেবে মনে হয়। কিন্তু এবার তা দেখছি না। মেলায় বিদেশি প্যাভিলিয়নের সংখ্যা খুবই কম। এক্সক্লুসিভ পণ্য বলতে তেমন কিছু দেখছি না। তাছাড়া ‘ফরেন প্যাভিলিয়ন’ লেখা প্যাভিলিয়নের ভেতরে সব দেশি পণ্যের স্টল। এসব স্টলে দু’একটি বিদেশি পণ্য পাওয়া হয়তো যাচ্ছে। কিন্তু তা সারাবছর আমি দেশ থেকেও কিনতে পারি। আবার মনে রাখতে হবে আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ বিদেশে গিয়ে পছন্দসই জিনিসপত্র কিনতে পারে না। তাদের কাছে এই মেলাই অনেক আনন্দের কারণ হয় এ কারণে।
এই দর্শণার্থীর এমন তথ্যের প্রমাণ মিলছে মেলার বিদেশি পণ্যের প্যাভিলিয়নগুলোতে। এর মধ্যে এ ধরনের একটি প্যাভিলিয়নের বাইরে অংশেই দেখা যায় ‘কেয়ার মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল’র একটি স্টল।
জানতে চাইলে হাসপাতালটির আইটি বিষয়ক কর্মকর্তা সাইফুজ্জামান বাবু বাংলানিউজকে জানান, আমরা মেলার স্টলের জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু কোনো বরাদ্দ পায়নি। কেননা আমাদের আবেদন করতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে এই স্তরটি আমড়াখালী গেলে এবং আমাদেরকে বুকিংয়ের সুযোগ দেওয়া হয়। দুই স্টলগুলো নিতে অন্যান্য স্টলে তুলনায় বেশি খরচ হলেও আমরা নিয়েছি। বিদেশি প্যাভেলিয়নের ভেতরের হলেও তাতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কারণ স্টলটি ভেতর নয় একেবারে মেলার রাস্তার সঙ্গেই।
এদিকে অন্য আরেকটি ফরেন প্যাভিলিয়নে গিয়ে দেখা যায় ইরানি পণ্যের স্টল। যেখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ইরানি খাদ্যদ্রব্য, মসলা, চকলেট, আচারসহ বিভিন্ন রকমারি ও সাজ-সজ্জার পণ্য।
জানতে চাইলে এই ইরানি পণ্যের স্টলের বিক্রেতা সেন্টু বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এখানে যা যা পণ্য আছে সব ইরান থেকে আগত। কিন্তু আমাদের দেশের অভিজাত শপিংমল এ দোকান রয়েছে। যেখানে আমরা সারাবছর আমাদের পণ্য বিক্রি করি। মেলা উপলক্ষে আমাদের এমন কোনো পণ্য নেই যেটা সারাবছর আমাদের দোকানে পাওয়া যায় না।
এছাড়া এসব বিদেশি প্যাভিলিয়নে রয়েছে দেশীয় দামী বিভিন্ন ধরনের পণ্য। এসব দেশীয় পণ্যের ভিড়ে আবার হাতে গোনা দু’একটি বিদেশি পণ্যের দোকানও পাওয়া গেছে। তেমনই একটি ভারতের কাশ্মীরি শাল ও কাপড়ের দোকান। যদিও এই প্যাভিলিয়নের পাশে ভারতের আলাদা বিশাল প্যাভিলিয়ন রয়েছে।
কাশ্মীরি ওই স্টলের বিক্রেতা নেওয়াজ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসেছি। বিক্রি ভালো হচ্ছে। প্রতিবার আসার ইচ্ছা আছে।
এ বিষয়ে ফয়সাল রহমান নামে আরেক দর্শণার্থী বলেন, মেলায় বিদেশি পণ্য বিক্রির নামে ভালো ধান্দাবাজি চলছে। যেসব জায়গায় দেশওয়ারি আলাদা আলাদা দেশের নামে স্টল কিংবা প্যাভিলিয়ন রয়েছে সেগুলোতে সেসব দেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এ ধরনের স্টলের সংখ্যা খুবই কম। বাণিজ্যমেলায় আমাদের সবচেয়ে বড় আশা এই আন্তর্জাতিক পণ্যগুলোর ক্ষেত্রেই থাকে। এবার এসে আশাভঙ্গ হয়েছে। যদিও দেশীয় পণ্যের বিরাট সমাহার এবং আকর্ষণীয় অফার এবার বাদ যায়নি। কিন্তু সর্বোপরি বলা যায় ঢাকার বাণিজ্যমেলা তার ঐতিহ্য হারিয়েছে।
রোমেলা নামে আরেক দর্শণার্থী বলেন, হাস্যকর লেগেছে চায়নিজ পণ্যের স্টলে। আমার দেশে তো সবই চায়নিজ আর ভারতীয় পণ্য। এখানে রান্না ও ঘরের কাজে ছোট ছোট যন্ত্রপাতি দেখালাম তা বাসে বা ফুটপাতে বিক্রি করে। এগুলো এতো দাম দিয়ে এখান থেকে কেন কিনবো?
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৯
এমএএম/এএটি