সোমবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে এ যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ছাগলনাইয়া উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে ফেনীর ছাগলনাইয়া ও ভারতের ত্রিপুরায় চালু হয়েছিল সীমান্ত হাট।
বাংলাদেশি ক্রেতাদের পছন্দসই ভারতীয় নানা পণ্য ক্রয় করতে ২০০ ডলারের সীমা পেরিয়ে গেলেও ভারতীয় ক্রেতারা আধা কেজি মাছ আর ২০ টাকার শুঁটকি মাছ ক্রয় পণ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতো। কালেভদ্রে ভারতীয় কোনো ক্রেতা ৭ কেজির বেশি পণ্য নিয়ে ভারতে ঢুকতে চাইলে ভারতের কাস্টমস ক্রেতা থেকে সেসব পণ্য কেড়ে রেখে দেওয়ার অভিযোগ উঠে। ভারত তাদের ২ হাজার ৮০০ জন ক্রেতাকে হাটে আসার কার্ড দিলেও প্রতি বাজারে মাত্র ১ হাজার ২০০ জনকে ঢুকতে দিতো। আর বাংলাদেশের অগণিত ক্রেতা ঢুকে প্রতি বাজারে কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য কিনে আনছে। ভারতীয় ক্রেতা ঢুকতে না পারায় বাংলাদেশের পচনশীল পণ্যগুলো বিক্রি না হওয়ায় প্রতি মঙ্গলবারের বাজারে লাখ লাখ টাকার পণ্য নষ্ট করে ফেলে আসতে হয়।
এছাড়া বাংলাদেশের কালোবাজারিরা প্রতি হাটে চট্টগ্রাম ও এর আশপাশের জেলাগুলোতে কোটি কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য চোরাই পথে এনে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে। রয়েছে স্বর্ণ চোরা চালান করার অভিযোগ। ভারতীয় মাদকবিক্রেতারা প্রতি হাটে মাদকের টাকা আদায় করে এক সপ্তাহ পর পরের হাটে ভারতে ঢুকার অভিযোগ রয়েছে।
এ রকম একজন ভারতীয় মাদকবিক্রেতাকে ছাগলনাইয়া থানা পুলিশ আটক করে কারাগারে পাঠান বলে ওসি মুর্শেদ জানান। এতোসব অভিযোগের ভিত্তিতে চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সীমান্ত হাটে তাদের ২৭টি দোকান বন্ধ করে দেয়। দীর্ঘ একমাস বন্ধ থাকার পর টনক নড়ে দু’দেশের বাজার পরিচালনা কমিটির। বাজারে স্থিত অবস্থা ফিরে আনতে সোমবার সীমান্তহাট দরবার হলে এক যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় উপরের অভিযোগগুলো নিয়ে বিশদ আলোচনার পর মঙ্গলবার থেকে বাজার পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত হয়। সভায় বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ফেনী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এডি এম আক্তার উন নেচা শিউলী। তাকে সহযোগিতা করেন ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিদা ফাতেমা চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এম মুর্শেদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. কামরুজ্জামান, কাস্টমস কর্মকর্তা (সুপারেন্টেন্ড) প্রদীব দেওয়ান, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সুদ্বীপ রায় পলাশ, রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রবিউল হক মাহবুব, মধুগ্রাম বিওপির কোম্পানি কমান্ডার রফিক উদ্দিন।
ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ত্রিপুরার এডি এম সন্তোষ দাস, সিডি এম বিপ্লব দাস, ডিডিও সঞ্জিব চাকমাসহ অন্যান্য।
এডি এম শিউলী তার বক্তব্যে বলেন, সীমান্ত হাটে ভারতীয় মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি হয়, এটি রোধ করার আহ্বান জানান তিনি।
ইউএনও শাহিদা ফাতেমা বলেন, হাতের তৈরি এবং গার্মেন্টেস পণ্য বিক্রি করার বিধান থাকলেও সে নিয়মের ব্যত্যয় হচ্ছে।
ওসি মুর্শেদ বলেন, সীমান্ত হাট দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার হচ্ছে। ভারতীয় মাদকবিক্রেতারা প্রতি বাজারে বাংলাদেশে ঢুকে তরুণ সমাজকে নষ্ট করছে। প্রশাসনকে ব্যস্ত রাখায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুব সীমান্ত হাটে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে উভয় দেশের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধি আতাউর রহমান সভায় বলেন, সীমান্ত হাটে অসম বাণিজ্য চলছে। ভারতীয় অংশের ক্রেতাদের সীমাবদ্ধতা তুলে দিয়ে বাজার উন্মুক্ত করার আহ্বানসহ বিভিন্ন দাবি জানান।
ভারতের এডি এম সন্তোষ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তার দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় এখন থেকে কোনও অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না।
এ বাজারগুলো ব্যবসায়িক উদ্দেশে চালু করা হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, দু’দেশের সম্প্রীতির বন্ধনের উদ্দেশ্যে এগুলো চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের ক্রেতা বাড়ানোর দাবিটি তিনি মানতে পারবেন না বলেও জানান।
ভারতীয় ব্যবসায়ী প্রতিনিধি শংকর ভৌমিক বলেন, ভারতীয় কাস্টমস ভারতের ক্রেতাদের হয়রানি করে অল্প কয়দিনে ৫০ লাখ টাকার বাংলাদেশি পণ্য লুটপাট করে। যার প্রমাণ তার হাতে রয়েছে দাবি করে তিনি ভারতীয় এডি এমের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন। জবাবে ভারতীয় এডি এম বলেন, তার সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
** অবস্থান কর্মসূচিতে অচল ছাগলনাইয়া সীমান্ত হাট
বাংলাদেশ সময়: ১৯১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৯
এসএইচডি/আরবি