খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির জন্য ব্যাংকগুলোর নজরদারি, পরিচালনায় সংকটকে দায়ী করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহ উদ্দিন। তিনি বলেন, জনতাসহ আরও কয়েকটি ব্যাংক ঋণ বিতরণে নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করেছে, যা অপ্রত্যাশিত।
যে ১৪টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে সেগুলো হলো-জনতা, এবি, ইসলামী ব্যাংক, মধুমতি, ন্যাশনাল, এনআরবি, এনআরবি গ্লোবাল, শাহ জালাল ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স, ফারমার্স ব্যাংক, ট্রাস্ট, ইউনিয়ন ব্যাংক ও মেঘনা ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০১৮ সালে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। বর্তমানে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৭ হাজার ২২৫ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৫ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা।
২০১৮ সালে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ১৯ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা বা ২৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আর জনতা ব্যাংকের বেড়েছে ৫৮ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অমান্য করে ক্রিসেন্ট লেদার ও আনন চেক্স গ্রুপকে বিতরণ করা ঋণ আদায় না হওয়ায় জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক বেড়েছে।
২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করা চতুর্থ প্রজন্মের ফারমার্স ব্যাংক নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ঋণ বিতরণ করায় নানামুখী সমস্যায় পড়েছে। বছর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা। আগের বছর ফারমার্স ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৭২৩ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে ফারমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এহসান খসরু বলেন, ২০১৮ সালে নতুন কোনো ঋণ বিতরণ করা হয়নি। পুরনো ঋণ আদায় করতে নানা রকম উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ফারমার্স ব্যাংকের খেলাপি ঋণের জন্য আগের পরিচালনা পষর্দ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে দায়ী করে তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ আদায় কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
ট্রাস্ট ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১৬৪ দশমিক ৫০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা। আগের বছর ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৫৭৮ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ মঈনুদ্দিন বলেন, কিছু ঋণগ্রহীতা আদালতের স্থগিতাদেশ এনে খেলাপি হওয়া ঠেকিয়েছিলেন। গত বছর সেই আদেশ বাতিল হওয়ায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে।
২০১৮ সাল শেষে প্রথম প্রজন্মের ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। আগের বছর ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ১ হাজার ৬১১ কোটি টাকা।
বছর শেষে চতুর্থ প্রজন্মের মধুমতি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৮ কোটি টাকা। আগের বছর মধুমতি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ৯ কোটি টাকা।
মেঘনা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭২ কোটি টাকায়। ২০১৭ সালে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৯৩ কোটি টাকা।
মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদিল ইসলাম বলেন, আমাদের ব্যাংকের খেলাপি ঋণ অন্যান্য ব্যাংকের চেয়ে কম। খেলাপি ঋণ আদায়ে আমরা একটি ইউনিট গঠন করেছি। এবছর অনেক ঋণ আদায় হবে।
২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৩ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। আগের বছরে ছিল ২ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা। এবি ব্যাংকের খেলাপি ১ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা, আগের বছর ছিল ৯৬৮ কোটি টাকা। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ১ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা, ২০১৭ সালে খেলাপির পরিমাণ ছিল ৯০৯ কোটি টাকা। শাহ জালাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ২১ কোটি টাকা, আগের বছর ছিল ৬৩০ কোটি টাকা। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের খেলাপি ১০৮ কোটি টাকা, ২০১৭ সালে ছিল ৬১ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৮০ কোটি টাকা, আগের বছর ছিল ৩১ কোটি টাকা। এনআরবি ব্যাংকের খেলাপি হয়েছে ৯১ কোটি টাকার ঋণ। ২০১৭ সালে খেলাপি ঋণ ছিল ৫৫ কোটি টাকা।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ব্যাংকগুলোতে সুশাসন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আগামীতে খেলাপি ঋণ আরও বড় আকার ধারণ করবে।
এ বিষয়ে সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকরা রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংকগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত পরিচালকদের।
২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৯
এসই/আরআর