এদিকে অসাধু চক্রের অপতৎপরতা মোকাবিলায় দীর্ঘদিন ধরে দেশীয় শিল্প কারখানার মালিকরা বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন।
এনবিআরের গ্রেড-১ এর মেম্বার সুলতান মো. ইকবাল বাংলানিউজকে বলেন, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছি।
তিনি বলেন, বন্ড খাতে অটোমেশন বাস্তবায়ন করতে আমাদের অন্তত ২ বছর সময় লাগবে। আর বাস্তবায়ন করতে পারলে আমাদের সেবা খাতে নানা অভিযোগ আর থাকবে না। পাশাপাশি শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা পণ্য খোলাবাজারে যাওয়াও বন্ধ হয়ে যাবে।
ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বন্ডের আওতায় পণ্য আমদানি করে পাচার বা খোলাবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। এ অবৈধ কাজ বন্ধের লক্ষ্যে বন্ড সুবিধার ব্যবহারে সব কার্যক্রম ডিজিটাল করতে হবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। আগামী ২১ মার্চ একটি বৈঠকও হবে। সেখানে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে করণীয় বিষয়ে আলোচনাসহ স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া হবে।
এছাড়া ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনারের নেতৃত্বে সাতটি প্রিভেনটিভ টিম মাঠে কাজ করছে। রাতে অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্য জব্দ করা হচ্ছে। পরে ওইসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ‘দ্য কাস্টমস অ্যাক্ট-১৯৬৯, বন্ডেড ওয়্যারহাউস বিধিমালা ২০০৮’ এর আওতায় বিভাগীয় মামলা হয়। একইসঙ্গে তাদের বন্ডিং কার্যক্রম ও আমদানি-রফতানির তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীদের তৎপরতা কিছুটা কমে গেছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, রফতানিমুখী শিল্প কারখানাগুলো পুনঃরফতানির শর্তে শুল্কমুক্ত বন্ড সুবিধায় পণ্য আমদানির সুযোগ পায়। এসব কাঁচামাল বা পণ্য সরকার-নির্ধারিত গুদামে (বন্ডেড ওয়্যারহাউস) রক্ষিত থাকে। কিন্তু এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী দেশে শুল্কমুক্ত পণ্য এনে অবৈধভাবে অপসারণের মাধ্যমে তা খোলাবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। বন্ড সুবিধায় আনা কাপড়, প্লাস্টিক দ্রব্য, কাগজপণ্য, ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট কার্ড, কার্ড বোর্ড, বৈদ্যুতিক পাখা, পেডিং (ব্লেজার বা জ্যাকেট তৈরির কাঁচামাল) ইত্যাদি দ্রব্য ও পণ্য ওয়্যারহাউসে যাওয়ার আগেই খোলাবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে।
জানা গেছে, বন্ড সুবিধার পণ্য কালোবাজারে বিক্রি এবং চোরাকারবারি ঠেকাতে গত দেড় মাসে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট ২৬টি ঝটিকা অভিযান চালিয়েছে। এতে ৪০টি প্রতিষ্ঠানের ৩০ কোটি টাকার অনিয়ম উদঘাটন করা হয়েছে। তবু ঠেকানো যাচ্ছে না অসাধু চক্রকে। শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা পণ্যে তারা সয়লাব করছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বাজার। পুরান ঢাকার ইসলামপুর, নয়াবাজার, চকবাজার মোড়েও খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে বন্ড সুবিধায় আমদানি করা পণ্য। আর বন্ডেড পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ক্ষতির মুখে পড়ছে দেশীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এ কারণে প্রত্যাশিত রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা।
উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে ৬ হাজার ৫৬৫টি প্রতিষ্ঠানের নামে বন্ড লাইসেন্স থাকলেও অনিয়মের কারণে ১ হাজার ৭৫৭ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত করেছে কাস্টমস। আবার কারখানা বন্ধ থাকার পরও বন্ড লাইসেন্স আছে ২ হাজার ৪৩৮টি পোশাক ও প্যাকেজিং কারখানার।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৯
জিসিজি/আরআর