ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

এসএমই ফাউন্ডেশনের ৩৪ বাজেট প্রস্তাব 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৮ ঘণ্টা, মে ১, ২০১৯
এসএমই ফাউন্ডেশনের ৩৪ বাজেট প্রস্তাব 

ঢাকা: দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প রক্ষার্থে কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরিতে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ ও উপকরণে শুল্ক হার হ্রাস এবং উদ্যোক্তাদের আয়কর অবকাশসহ মোট ৩৪টি বাজেট প্রস্তাবনা দিয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশন। 

এর ফলে হালকা প্রকৌশল শিল্প, কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনকারী শিল্প, প্লাস্টিক ও মেলামাইন শিল্প এবং বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম উৎপাদনকারী শিল্প বিকাশের সুযোগ পাবে।  

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) ফাউন্ডেশনের কনফারেন্স রুমে এসএমই বান্ধব বাজেট প্রস্তাবনা শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়।

 

এসময় উপস্থিত ছিলেন- এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম, ফাউন্ডেশনের বোর্ড মেম্বার আবদুল মতিন, ফাউন্ডেশনের পরামর্শক সাহাব উদ্দিন, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহিন আলম প্রমুখ।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম বলেন, এসএমই ফাউন্ডেশন সংশ্লিষ্ট মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পসমূহের জন্য গত ২৩ এপ্রিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য বাজেট প্রস্তাব পেশ করেছে। প্রস্তাবে রাজস্ব বোর্ডের বিবেচনার জন্য ২০টি আমদানি পর্যায়ের শুল্ক-কর সম্পর্কিত প্রস্তাব, নয়টি মূসক সম্পর্কিত প্রস্তাব এবং পাঁচটি আয়কর সম্পর্কিত প্রস্তাব নিয়ে মোট ৩৪টি প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্য থেকে আমাদের ১০-১২টি প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এছাড়া প্রতি বছর আমাদের আট থেকে নয়টি প্রস্তাব গৃহীত হয়।  

সংবাদ সম্মেলনে বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে ফাউন্ডেশনের পরামর্শক এবং সাবেক জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মেম্বার মো. সাহাবউদ্দিন জানান, আমদানি পর্যায়ের বিশটি শুল্ক-কর সম্পর্কিত প্রস্তাবের মধ্যে নয়টি প্রস্তাবে কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরিতে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ ও উপকরণ, কয়ার ফাইবার (নারিকেলের ছোবড়ার তন্তু), ফিলার মাস্টারব্যাচ, কালার মাস্টারব্যাচ, পিভিসি স্টেবিলাইজার, স্টিয়ারিক এসিড পলিইথাইলিন ওয়াক্স, প্রিন্টেড মেলামাইন ট্রান্সফার পেপার, আনপ্রিন্টেড পিভিসি, পলিয়েস্টার, পলি-এমাইড (নাইলন) ফিল্ম ইন রোল, ইউরিয়া মেল্ডিং কম্পাউন্ড, ইউরিয়া রেজিনস, থায়ো-ইউরিয়া রেজিনসের শুল্ক হার হ্রাসের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে হালকা প্রকৌশল শিল্প, কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনকারী শিল্প, প্লাস্টিক,  মেলামাইন শিল্প এবং বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম উৎপাদনকারী শিল্প বিকাশের সুযোগ পাবে।  

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশি শিল্পের সংরক্ষণের জন্য স্টেনলেস স্টিলের তৈরি টেবিলে ব্যবহার্য, কিচেনে ব্যবহার্য, গার্হস্থ্য সামগ্রী, স্টেনলেস স্টিলের তৈরি বিবিধ পণ্য এবং বেয়ারিং ও বেয়ারিংবিহীন কবজার ট্যারিফমূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

ছয়টি প্রস্তাবে আমদানিকৃত তৈরি লিফ সিপ্রং, প্রাকৃতিক মধু, অন্যান্য সুইচ, হোল্ডার, অন্যান্য  (বৈদ্যুতিক প্লাগ, সকেট), অন্যান্য প্লাস্টিক পণ্য (বৈদ্যুতিক কেবলস টাই ও কেবলস ক্লিপ), সুইচ সকেটের যন্ত্রাংশ (সিকেডি/এসকেডি) এবং কানেক্টর সংযুক্ত এক্সটেনশন কর্ডের ওপর শুল্ক/রেগুলেটরি শুল্ক/সম্পূরক শুল্ক আরোপ ও বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে এসব পণ্যের দেশি উৎপাদকরা সংরক্ষণ পেয়ে উপকৃত হবে।  

অপর দু’টি প্রস্তাবে কাস্টমস বন্ডের ব্যবস্থাপনায় ও সম্প্রসারণে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য সম সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব করা হয়েছে।  

মূসক সম্পর্কিত নয়টি প্রস্তাবের মধ্যে পাঁচটি প্রস্তাবে কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদন ও বিপণন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পজাত পণ্যের ওপর হ্রাসকৃত হারে মূসক আরোপ, মূল্য সংযোজন নিরূপণ ও রেয়াত সুবিধা গ্রহণ করতে অক্ষম ক্ষুদ্র মাঝারি সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বেলায় হ্রাসকৃত মূসক আরোপের বিকল্প প্রস্তাব, রপ্তানি সংশ্লিষ্ট স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত সব পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে ভ্যাট মওকুফ এবং দেশে উৎপাদিত মধু সম্পূর্ণ মূসক মওকুফ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব প্রস্তাব বিবেচনা করা হলে দেশের শিল্প উপকৃত হবে এবং দেশ স্বনির্ভরতার পথে অনেকটা পথ এগিয়ে যাবে।  

একটি প্রস্তাবে পলিথিনের সমন্বয়ে তৈরি এবং শিল্পে ব্যবহার্য মোড়কের ওপর আরোপিত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বিবেচিত হলে দেশের খাদ্যজাত পণ্য, ওধুধ প্রভৃতি শিল্প উপকৃত হবে।

দু’টি প্রস্তাবে ছাপাখানার জন্য মূসক পরিশোধ সহজ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে ছাপাখানা, প্রকাশনা, সংবাদপত্র এবং পাঠক সমাজ উপকৃত হবে।

মূসক বিষয়ক একটি প্রস্তাবে মূসক অপরিশোধিত পণ্য এবং রপ্তানিযোগ্য পণ্য ওয়্যারহাউজে রাখার সুযোগ সৃষ্টি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ব্যবসায় সহজতর হবে।

আয়কর সম্পর্কিত পাঁচটি প্রস্তাবের মধ্যে একটিতে নিবন্ধিত শিল্পের, বিশেষত: এসএমই শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ওপর থেকে অগ্রিম মূসকের মতো অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে শিল্পের মূলধনী ব্যয় হ্রাস পাবে এবং উৎপন্ন পণ্য ভোক্তার জন্য কিছুটা হলেও সহজলভ্য হবে।

আয়কর সম্পর্কিত একটি প্রস্তাবে প্লাস্টিক পণ্য রিসাইক্লিং শিল্পের ওপর থেকে আয়কর প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে রিসাইক্লিং উৎসাহিত হবে এবং পরিবেশের উন্নয়ন হবে।

রপ্তানিমূল্যের ওপর অগ্রিম আয়কর হারের মধ্যে পার্থক্য নিরসন করে একটি সমন্বিত হার নিরুপণের জন্য একটা প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি গৃহীত হলে সব রপ্তানিকারদের জন্য সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।

আয়কর সংক্রান্ত শেষ প্রস্তাবটি হলো সব রপ্তানিকারক শিল্পের জন্য করপোরেট কর হার হ্রাসের প্রস্তাব। এটিও আয়কর হারের মধ্যে পার্থক্য নিরসন করে একটি সমন্বিত হার নিরুপণের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি গৃহীত হলে সব রপ্তানিকারকের জন্য সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। সবার জন্য একটি সুষম হার প্রতিষ্ঠিত হবে।

এছাড়াও নগদ প্রণোদনা এবং বিবিধ সুবিধা পাওয়ার লক্ষ্যে আরও অনেকগুলো প্রস্তাব প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে সেগুলো রাজস্ব বোর্ড সম্পর্কিত নয় বিধায় তা রাজস্ব বোর্ডে পেশ করা হয়নি। সেগুলো ট্যারিফ কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বিবেচনার জন্য।

বাংলাদেশ সময়: ০৫০৭ ঘণ্টা, মে ০১, ২০১৯
জিসিজি/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।