এছাড়া ওই টমেটো ক্ষেতে কাজ করা শ্রমিকদের মধ্যে এখনো বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন নারী শ্রমিকরা।
শীতকালের সবজি হিসেবে পরিচিত টমেটো এখন সারা বছরই পাওয়া যায়।
সরেজমিন দিনাজপুর সদর উপজেলার কৃষানবাজার গ্রামে গিয়ে দেখা যায়- বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে শুধু টমেটো আর টমেটো। কোনো চাষি নিজেই আবার কোনো চাষি শ্রমিক লাগিয়ে টমেটো ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাজারজাত করার জন্য ক্ষেত থেকে পাকা টমেটো উত্তোলন করছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। আবার অন্যান্য শ্রমিকরা উত্তোলনকৃত টমেটো ওজন করে বড় ঝুড়িতে ভরে নিয়ে যাচ্ছেন আড়তে।
ঢাকা ও অন্যান্য জেলা থেকে আগত আড়তদাররা জেলায় বিশাল সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। আর এই সিন্ডিকেটের বেড়াজালে আটকে কৃষকরা লাভ পাচ্ছেন সামান্য। কিন্তু সিন্ডিকেটের কারণে আড়তদাররা কৃষকদের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি লাভবান হচ্ছেন। ক্ষেত থেকে টমেটো তুলে আড়তদারদের কাছে নিয়ে বিক্রি করতে গেলে কৃষকরা মণ প্রতি টমেটো ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পাচ্ছেন। অথচ সেই টমেটো ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করছেন ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকায়। হাটের ইজারার টাকা আড়তদারদের দেয়ার কথা থাকলেও মণ প্রতি কৃষকদের কাছ থেকে ১০ টাকা করে হাটের ইজারা হিসেবে কেটে নেন আড়তদাররা।
দিনাজপুর জেলার সবচেয়ে বড় টমেটোর হাট গাবুড়াহাট ইজারাদার অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এপ্রিল মাসের ১ তারিখ থেকে ২৬ তারিখ পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার ট্রাক টমেটো ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়েছে। প্রতি ট্রাকে ৫০০ থেকে ৫৫০ ক্যারেট টমেটো লোড করা হয়। প্রতি ক্যারেটে ২৫ থেকে ২৭ কেজি টমেটো ভরা হয়। গড়ে প্রতিদিন এই হাট থেকে ৫৫ থেকে ৬০ ট্রাক টমেটো জেলার বাইরে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এই হাটে কৃষকদের কাছ থেকে টমেটো কিনে ক্যারেটে ভরে গাড়ি লোড করার জন্য প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক কাজ করছেন।
মাঠে কাজ করা নারী শ্রমিক রুমিজা বেগম (৬০) বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এখানে নারীরা বেতন বৈষম্যের শিকার। একই কাজ করে একজন পুরুষ শ্রমিক প্রতিদিন পাচ্ছেন ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। কিন্তু নারী শ্রমিকরা পান মাত্র ১৫০ টাকা। এর থেকে ইরি-বোরো মৌসুমে কাজ করে আমরা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পাইতাম। কিন্তু এখন ইরি-বোরো মৌসুমের কাজ নেই তাই বাধ্য হয়ে টমেটো ক্ষেতে ১৫০ টাকা বেতনে কাজ করছি। কৃষাণবাজারের কৃষক গোলাম মোস্তফা (৫৫) বাংলানিউজকে জানান, এবছর তিনি ৫ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। প্রথম দিকে টেমেটো বাজারে বিক্রি করে তিনি অনেক লাভবান হয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে বাজারে টেমেটোর দাম একেবারেই নেই। প্রথম দিকে টেমেটো ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা মণ বিক্রি হলেও বর্তমানে ২০০ থেকে ২২০ টাকা মণ প্রতি টমেটো বিক্রি হচ্ছে। আমার ৫ বিঘা জমিতে এ বছর টমেটো আবাদ হয়েছে প্রায় ১ হাজার মণ। কিন্তু কিছুদিন আগে শীলা বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টির ফলে ক্ষেতের অনেক টেমেটো নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা বাজারে টমেটো বিক্রি করতে গেলে টমেটো আড়তদারদের সিন্ডিকেটে আটকে পড়ি। তারাই দাম নির্ধারণ করে দেন যে আজকে টেমেটো মণ প্রতি কত টাকা যাবে। বা আগামীকাল টমেটো কত টাকা মণ বিক্রি হবে। আমরা ক্ষেত থেকে টমেটো তুলে ৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। কিন্তু ঢাকায় গিয়ে সেই টমেটো ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
হাটের আড়তৎদার শরিয়তপুর জেলার জর্জিয়া উপজেলার চাঁন মিয়া সরদার বাংলানিউজকে জানান, তিনি চলতি মৌসুমে ২০০ টন টমেটো গাজীপুর ও চৌমহুনী বাজারে নিয়ে বিক্রি করেছেন। চলতি মৌসুমে তিনি আরও ২০০ টন টমেটো নিয়ে যাবেন।
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তৌহিদুল ইকবাল বাংলানিউজকে জানান, চলতি বছর জেলায় ১ হাজার ১২১ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ করা হয়েছে। আর উৎপাদন হয়েছে ৪৭ হাজার ১৮৩ মেট্রিক টন। গত বছর চলতি বছরের চাইতে একটু উৎপাদন বেশি হয়েছিল। কিন্তু গত বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে টমেটো চাষিদের অনেক লোকসান হয়েছিল। এবছর জেলায় টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকরা দামও ভাল পাচ্ছেন মোটামুটি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৮ ঘণ্টা, মে ০১, ২০১৯
আরএ