বিস্ময় রূপ নেয় হতাশায়, জাহেদ আহমদ বলে ওঠেন, ‘ইশ! যদি আগের দিন যদি মরিচ কিনে নিতাম?’ কাঁচা মরিচের কেজি একলাফে ৪০ থেকে ১৫০ টাকা কিভাবে হয়ে গেলো, তা ভেবে বাতাসে এলোমেলো প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন এই ক্রেতা। তার মতো আরও অনেকের চোখ কপালে উঠেছে বাজারে এসে।
রোজার আগের দিন সোমবার (৬ মে) সিলেটের বাজারে কাঁচা মরিচের কেজি ১৫০ টাকায় বিক্রি হওয়ার বিষয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি বাজারেই কাঁচা মরিচ কেজিতে ৫০ টাকা বেড়েছে। আর একসঙ্গে বস্তায় মরিচ কিনে আনলে কিছুটা নষ্ট বেরোয়। তাই একটু দামে বিক্রি করতে হয়।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, আকাশচুম্বি দাম শুধু কাঁচা মরিচেই নয়, অন্যান্য ভোগ্য পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। সোমবার সিলেটের বাজারে কলার ডজন বিক্রি হয়েছে ৯০-১০০ টাকা। অথচ একদিন আগেও এক ডজন কলা বিক্রি করা হয় ৪০-৪৫ টাকা।
নিত্যপণ্যের মধ্যে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ২৪ টাকা, রসুন ১১০ টাকা, ছোলা ৭৫ টাকা, বেসন ১২০ টাকা, আদা ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডাটা শাক ও পুঁই শাক আঁটি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। কাঁচকলা হালি ৫০ টাকা, শসা কেজি ৪০ টাকা, বরবটি কেজি ৫০ টাকা, ঢেঁড়শ ও পটল ৫০ টাকা এবং আলু ৫ কেজি ৭৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে দেশি মুরগির ডিম হালি ৬০ টাকা, হাঁসের ডিম হালি ৫০ টাকা, ব্রয়লার মুরগির ডিম হালি ৩২ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। কেজিপ্রতি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬৫০ টাকা, খাসির মাংস ৭০০ টাকা। লাল মুরগি প্রতিপিস বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগি কিছুদিন আগে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও রোজাকে সামনে রেখে ১৬০ টাকা দরে চড়ে যেতে দেখা গেছে।
আর রোজার আগে আগুন লেগে যেন মাছের বাজারের দরদামেও। রুই-কাতলা দু’দিন আগে ২০০-২৫০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও রোজা আসতেই হয়ে গেলো ৪৫০-৫০০ টাকা। আর ইলিশের কেজি ১২০০-১৫০০ টাকা, পাবদা ৬০০-৭০০, গুলসা টেংরা ৮০০, বাইম (বড়) ১ হাজার টাকা, মলা মাছ ৬০০, বোয়াল ১০০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
মাছ ব্যবসায়ীদের অনেকে জানান, তাদের চড়া দামে মাছ কিনে আনতে হচ্ছে। তাছাড়া সরবরাহও কম। যে কারণে মাছের দাম বেড়েছে।
এছাড়া রোজায় ইফতারের অনুষঙ্গ বিভিন্ন প্রকারের খেজুর ৮০ থেকে ২ হাজার টাকার ওপরেও কেজি বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতারা অভিযোগ করেন, রোজাকে সামনে রেখে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম সিন্ডিকেট করে বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। খুচরা ব্যবসায়ীরাও এখন সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। যে কারণে বাজারে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় ক্রেতা সাধারণকে। বিশেষ করে দরিদ্র মানুষের জন্য বাজার করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
এদিকে, রোজায় ভোগ্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সিলেট জেলা প্রশাসন থেকে পাঁচটি মনিটরিং টিম করা হয়েছে। পাশাপাশি ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের দু’টি ও সিলেট চেম্বার অব কমার্সের একটি টিম করা হয়েছে।
জেলা ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রমজান মাসকে কাজে লাগিয়ে বাড়তি মুনাফার লোভে অতিরিক্ত দাম আদায় করে থাকে। এবার বাজার মনিটরিংয়ের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। এছাড়া নিম্নমানের দ্রব্যসামগ্রী, বাসী খাবার চালিয়ে দিতে এবং ক্রেতাদের মনাকর্ষণ করতে ইফতার সামগ্রীতে বিভিন্ন কেমিক্যাল মেশানো হয়। এসব অনিয়ম ধরতে দু’টি টিমে ভাগ হয়ে একটি টিম নগরের ভেতরে এবং অন্যটি বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ে কাজ করবে।
সিলেট জেলা বাজার কর্মকর্তা মুরশেদ কাদের বাংলানিউজকে বলেন, পুরো মহানগরীকে পাঁচ ভাগে বিভক্ত করে বাজার মনিটরিং করবে জেলা প্রশাসনের টিম।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৮ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০১৯
এনইউ/এইচএ/