বুধবার (৮ মে) কয়েকটি বাজার ঘুরে ক্রেতাদের এমন অভিযোগ পাওয়া যায়। তাদের ভাষ্যে, ভ্রাম্যমাণ আদালত অথবা সিটি করপোরেশনের বাজার মনিটরিং টিম এলে সরকার-নির্ধারিত মূল্যে মাংস বিক্রি করেন বিক্রেতারা।
রমজানের আগে সোমবার (৬ মে) রাজধানীর বাজারগুলোতে মাংসের দাম নির্ধারণ করে দেয় ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। প্রতিকেজি দেশি গরুর মাংস ৫২৫ টাকা, বিদেশি বা বোল্ডার গরুর মাংস ৫০০ টাকা এবং মহিষের মাংস ৪৮০ টাকা দরে বিক্রির নির্দেশনা দেওয়া হয় সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে। সেইসঙ্গে প্রতি কেজি খাসির মাংস ৭৫০ টাকা এবং ভেড়া ও ছাগীর মাংস ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এসব দাম কার্যকর করতে রমজানের প্রথম দিন থেকেই মাঠে নামে সিটি করপোরেশনের বাজার মনিটরিং টিম।
তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়েই বেশি দামে মাংস বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। ভ্রাম্যমাণ আদালত বা মনিটরিং টিম চলে গেলে মাংস ব্যবসায়ীরা মূল্য তালিকাও সরিয়ে ফেলেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
মিরপুর ৬ নম্বর বাজার থেকে দুই কেজি দেশি গরুর মাংস ১২০০ টাকায় কিনেছেন বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন এখানকার বাসিন্দা আবদুল মজিদ। তিনি বলেন, কিছুক্ষণ আগে নাকি ভ্রাম্যমাণ আদালত এসেছিলেন। তখন নাকি ৫২৫ টাকায় মাংস বিক্রি করেছে। এখন আমি এই দোকান থেকে (একটি দোকান দেখিয়ে) মাংস কিনলাম। ৬০০ টাকা করেই রাখলো।
এ বিষয়ে বিক্রেতার বক্তব্য জানতে চাইলে নিজেকে রশিদ মিয়া পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন, সরকার কী দাম নির্ধারণ করলো না করলো, সেটা আমগোর দেখলে তো হইবো না। আমরা যেমনে কিনুম তেমনে বিক্রি করুম। ৬০০ টাকার নিচে বিক্রি করলে লাভ থাকে না। আমরা ছোট দোকানদার।
এদিকে কোথাও কোথাও নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে মাংস বিক্রি হচ্ছে বলে জানান সিটি কর্পোরেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। আবার প্রশাসনের লোকজনের উপস্থিতি আর অনুপস্থিতির গরমিলের বিষয়ে অবগত আছেন খোদ প্রশাসনের কর্মকর্তারাও। তবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি তাদের।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) অঞ্চল-১ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সেগুনবাগিচার একটি মাংসের দোকানে সিটি কর্পোরেশন নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশিতে মাংস বিক্রি করার সময় এক বিক্রেতাকে হাতেনাতে আটক করেছি। হাজী আফজাল মিয়া নামে ওই ব্যবসায়ীকে ৫০ হাজার টাকার আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) এর অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মীর নাহিদ আহসান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা যেসব বাজারে গিয়েছি মোটামুটি সব জায়গায় নির্ধারিত দামেই মাংস বিক্রি করতে দেখেছি। তবে এমন অভিযোগ পাচ্ছি যে, আমরা চলে এলে বা না থাকলে বেশি দামে মাংস বিক্রি হয়। এই বিষয়টিও আমরা খতিয়ে দেখছি। প্রমাণসহ হাতেনাতে ধরা পড়লে ব্যবস্থা নেবো।
ডিএনসিসির অঞ্চল-১ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম ফকির বলেন, উত্তরা ও এর আশেপাশের এলাকায় আমরা বাজার মনিটর করেছি। কোথাও বেশি দামে মাংস বিক্রি করতে দেখিনি। আমরা নিশ্চিত করেছি সব দোকানে যেন মাংসের মূল্য তালিকা ঝুলানো থাকে। তবে অভিযোগ আসছে যে, আমরা না থাকলে দাম বেশি রাখা হয়। এখন আমরা যখন যাই তখন তো দেখি না। তাহলে কী করবো?
সম্প্রতি বাজার পরিস্থিতি মনিটরিং সংক্রান্ত এক বৈঠকে ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন বলেছিলেন, যদি কোনো ব্যবসায়ী নির্ধারিত দামে মাংস বিক্রি না করে, বেশি দামে বিক্রি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর মঙ্গলবার (৭ মে) বিকেলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ভিন্ন এক মতবিনিময় সভায় ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যে স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতায় ৪৩টি বাজারে ৮টি টিম দ্বারা অভিযান পরিচালনা করা হবে। খাদ্যে ভেজালমুক্ত রাখাসহ বাজারের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে মনিটরিং করবে এই টিম। পণ্যে যারা ভেজাল দেবেন বা পণ্যের দাম বেশি নেবেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৪ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৯
এসএইচএস/এইচএ/