ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

খেজুরের অস্বাভাবিক দামে ‘নাভিশ্বাস’ রোজাদারের

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৩ ঘণ্টা, মে ৯, ২০১৯
খেজুরের অস্বাভাবিক দামে ‘নাভিশ্বাস’ রোজাদারের রোজায় খেজুরের চাহিদা বেড়ে যায়। ছবি: বাংলানিউজ

ময়মনসিংহ: দিনভর পানাহার থেকে বিরত থেকে সন্ধ্যায় ইফতারের টেবিলে বেগুনি, পেঁয়াজু, জিলাপি, চপ, বুটসহ নানা পদের খাবারের সমাহার থাকলেও খেজুর ছাড়া যেন চলেই না! আর এ অপরিহার্যতার সুযোগে রোজাদারদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে ইফতারের গুরুত্বপূর্ণ এ অনুষঙ্গ।

নিম্ন থেকে মধ্যবিত্ত সবার কাছেই অস্বাভাবিক গিয়ে ঠেকেছে এ ভোগ্যপণ্যের দাম। ইচ্ছামতো দাম হাঁকাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

এতে ফল ব্যবসায়ীদের দুয়ারে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে ক্রেতাদের। নিদারুণ অসহায় ক্রেতারা এনিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বচসাতেও জড়াচ্ছেন।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণের পাশাপাশি খেজুর রোজাদারের শরীরের জন্য উপকারী। গ্লুকোজ স্বল্পতা ও মুখের রুচি দু’টিই ঠিক রাখে। তাছাড়া পেটের গ্যাস দূর করার পাশাপাশি হজমেও খেজুর উপকারী।

গত দু’দিন ময়মনসিংহ নগরীর নতুন বাজারে বিভিন্ন ফলের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বাজারের সব ধরনের খেজুরই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। দামে রীতিমতো আকাশছোঁয়ার অবস্থা হয়েছে সৌদি আরবের ‘আজওয়া’ খেজুর। প্রতিকেজি এ খেজুরের দাম ১ হাজার ৮০০ টাকা। রোজায় খেজুরের চাহিদা বেড়ে যায়।  ছবি: বাংলানিউজ দামের দিক থেকে ঠিক পরেই রয়েছে মেকজেল খেজুর। এটির দাম কেজিতে ১ হাজার ৪০০ টাকা। এছাড়া ইরানের কামরাঙ্গা মরিয়ম ১ হাজার টাকা, সাধারণ মরিয়ম ৯শ টাকা, দাবাস ২৪০ টাকা, ফরিদা ৩শ টাকা, বড়ই ২২০ টাকা, নাগাল ২০০ টাকা, তিউনিসিয়ার প্যাকেটজাত খেজুর ৪৬০ টাকা ও বাংলা খেজুর ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

নগরীর নতুন বাজারের খেজুর ব্যবসায়ী মোহাব্বত হোসেন বাংলানিউজকে জানান, নগরীর ফলের দোকানগুলোতে খেজুরের চাহিদার কোনো ঘাটতি নেই। তারা মূলত ঢাকার বাদামতলীর আড়তদারদের থেকেই উচ্চ দামে খেজুর কিনে এনেছেন। এর সঙ্গে পরিবহন খরচও যোগ হয়েছে। সেখানকার ব্যবসায়ীরা দাম নির্ধারণ করে দেওয়ায় সবমিলিয়ে ময়মনসিংহের বাজারেও এ দামে খেজুর বিক্রি হচ্ছে।

রঞ্জিত ও সুজন নামের আরও দু’জন ব্যবসায়ী জানান, ঢাকা থেকে আমরা যেমন দামে খেজুর নিয়ে আসি ঠিক তেমন দামেই বিক্রি করছি। দাম সামান্য বেশি হলেও ময়মনসিংহের বাজারের খেজুরের নাম অনেক ভালো। এখানে কোনো ভেজাল বা নিম্নমানের খেজুর বিক্রি করা হচ্ছে না।

খেজুরের দামে উত্তাপ ছড়ানোর বিষয়ে সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগ, রমজান এলেই খেজুরের চাহিদা বেড়ে যাওযায় ব্যবসায়ীরা প্রতি জাতের খেজুরে গড়পড়তা ২০ থেকে ৩শ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। মোটামুটি ভালো মানের খেজুর কিনতে গেলেও বেশি টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে।

দেখা গেছে, প্রতিদিন বিকেল থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত ফলের দোকানগুলোতে পা ফেলারও জোঁ নেই। তবে বিক্রিতে শীর্ষে রয়েছে খেজুর। সুন্নত হিসেবে রোজা ভাঙতে খেজুরের কোনো বিকল্প না থাকায় দামে উত্তাপ ছড়াচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।  

নগরীর নতুন বাজার মোড়ে একটি ফলের দোকানে খেজুর কিনতে এসেছেন রফিকুল ইসলাম নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, খেজুরের এতো দাম স্বাভাবিক কোনো বিষয় না। চড়া মূল্যের কারণে মনে হচ্ছে বাজার বল্গাহীন হয়ে পড়েছে।

দিনমান রোজা রাখার পর খেজুর দিয়ে ইফতার করার অভ্যাস অটোরিকশাচালক জুলহাস উদ্দিনের। নগরীর গোহাইলকান্দি এলাকার তিনি খেজুরের দোকানে গিয়ে দাম শুনে চক্ষু যেন ছানাবড়া!

ফলশ্রুতিতে আধা কেজি খেজুর কিনেই চম্পট দিলেন জুলহাস উদ্দিন। যাওয়ার আগে দোকানির সঙ্গে সামান্য বচসায় জড়ালেন।

জুলহাসের প্রশ্ন, খেজুরের এমন দামে গরিব খেজুরের স্বাদ নেবে কীভাবে?

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৭ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০১৯
এমএএএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।