ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কসবা সীমান্ত হাট: বেড়েছে বাংলাদেশি পণ্যের বিক্রি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৯ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৯
কসবা সীমান্ত হাট: বেড়েছে বাংলাদেশি পণ্যের বিক্রি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্ত হাটে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা কিছুটা বেড়েছে। তবুও তা ভারতীয় ব্যবসায়ীদের তুলনায় এখনও অতি ‘নগণ্য’।

বর্ডার হাটে প্রবেশ ও পণ্য ক্রয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কড়াকড়ি এবং বাংলাদেশি ক্রেতাদের অবাধে প্রবেশের সুযোগ ও পাইকারিভাবে পণ্য ক্রয়ের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি বলে মত ব্যবসায়ীদের।

তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, বাংলাদেশি পণ্যের বৈচিত্র্য করণসহ নানা উদ্যোগের মাধ্যমে ভারতীয় ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা চলছে।

২০১৫ সালের ৬ জুন থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে সপ্তাহে একদিন (রোববার) বসে সীমান্ত হাট। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে বেচাকেনার কার্যক্রম। প্রথম থেকেই লোকসান গুনছিল বাংলাদেশ অংশের ব্যবসায়ীরা। এর ফলশ্রুতিতে বেশ কিছু দিন বন্ধ থাকে এ হাটের কার্যক্রম। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নানা উদ্যোগের কারণে এখন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের বিক্রি কিছুটা বেড়েছে।

তবে বিগত ছয় মাসের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা যেখানে দুই কোটি ৯ লাখ ৮১ হাজার ৬৭০ টাকার পণ্য বাংলাদেশিদের কাছে বিক্রি করে, সেখানে ভারতীয়দের  কাছে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মাত্র ১৯ লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকার পণ্য বিক্রি করেছে।

বাংলাদেশের ৬৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ ও ভারতের ৬৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ ভূমিতে বাংলাদেশি ২৫টি ও ভারতীয় ২৫ দোকান নিয়ে বসছে এ হাট। বিকিকিনি হচ্ছে বাংলাদেশের ১৫ ও ভারতের ১৬টি পণ্য। বাংলাদেশ থেকে বিক্রয়ের জন্য অনুমোদিত পণ্য সামগ্রীর হলো- বিস্কুট, লুঙ্গী ফলমূল, স্থানীয় কুটির শিল্পে উৎপাদিত সামগ্রী। ভারত থেকে বিক্রয়ের জন্য অনুমোদিত পণ্য সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে- শাক সবজি ফলমূল, কসমেটিকস, মসলা জাতীয় দ্রব্য, বনজ ও কুটির শিল্পে উৎপাদিত দ্রব্য, কৃষি উপকরণ, চা, অ্যালুমিনিয়াম সামগ্রী ইত্যাদি।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, সীমান্তবর্তী পাঁচ কিলোমিটার এলাকার মানুষদের এ হাটে প্রবেশ করে পণ্য কেনার নিয়ম থাকলেও অতিথি পাশের অপব্যবহার করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ঢাকা-সিলেট, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় পণ্য ক্রয় করে থাকেন। অথচ সরকারিভাবে জনপ্রতি দুইশত ডলার পর্যন্ত পণ্য ক্রয়ের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
কসবায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বসা ‘সীমান্ত হাট’।  ছবি: বাংলানিউজ
কথা হয় বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ইকরাম মিয়ার সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, হাটে আগের চেয়ে বেচাকিনি কিছুটা বেড়েছে। আগে প্রতি হাটে ৫-৬ হাজার টাকার মালামাল বিক্রি হলেও বর্তমানে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বিক্রি করা যায়। যদিও তাদের (ভারতীয়) থেকে অর্ধেক কম। তবুও হাট ও ব্যবসা ঠিকে থাকুক। এটা আমাদের কাছে আনন্দ মেলার মতো লাগে।

ব্যবসায়ী খোকন মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ভারতীয়দের দোকানের সংখ্যা ২৫টি। তাদের পণ্য বিক্রিও বেশি হয়। আমাদের বাংলাদেশি ক্রেতাও আসে বেশি সংখ্যক। পাঁচ কিলোমিটার এলাকার বেশিভাগ ব্যবসায়ী ভারতীয় পণ্য পাইকারি কিনে নিয়ে যায়। আর ভারতীয় ক্রেতারা আমাদের পণ্য যাচাই-বাচাই করে কিনেন। তারপরও আগে চেয়ে বিক্রি কিছুটা বেড়েছে।

শুটকি ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ভারতীয়রা আমাদের কাছ বিভিন্ন ধরনের মাছের শুটকি কিনতে পছন্দ করেন। দাম হলেও দর করে কিনে নিয়ে যায়। তবে অন্যান্য পণ্য আগের চেয়ে কিছুটা বিক্রি বেড়েছে।

ঈদ উপলক্ষে কেমন বেচাকেনা হচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে ভারতীয় পণ্যের চাহিদা বেশি। তেল, সাবান, শ্যাম্পু ও বিভিন্ন ধরনের কসমেটিক্সসহ কাপড় বিক্রি করছে বেশি ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।

হাটে পণ্য কিনতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে আসা ফারুক হোসেন রনি বাংলানিউজকে বলেন, এ হাট থেকে সাবান, তেল, শ্যাম্পু, টুথব্রাশ কিনেছি। তবে বাজার ঘুরে যা মনে হয়েছে ঈদ উপলক্ষে জিনিসপত্রের দাম কিছুটা বেড়েছে।

সিলেট থেকে আসা মহসিন উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, পরিবারের জন্য ভারতীয় বিভিন্ন পণ্য কিনেছি। তবে আমাদের বাংলাদেশি ক্রেতাদের তুলনায় ভারতীয় ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম। তারা আমাদের পণ্য অনেক কম কিনতে দেখা গেছে।

কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও, ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, ভারতীয় ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ, নারী কর্নার খোলাসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশি পণ্য আর্কষণ করার জন্য কিছু গবেষণার কাজ করা হচ্ছে। পাশাপাশি নির্ধারিত অর্থের বেশি পণ্য ক্রয় এবং বহিরাগতদের রোধ করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।  

বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে ব্যাপারে উপরের মহলের সঙ্গে কথা বলা হবে বলেও জানান তিনি।

জেলা অতিরিক্তি ম্যাজিস্ট্রেট ও বর্ডার হাটের সভাপতি মোহাম্মদ শামসুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, দু'দেশের ঊর্ধ্বতন কৃর্তপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে হাটের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। প্রতি একমাস পর পর হাট পরিদর্শন করা হচ্ছে।

যে ভাবে বর্ডার হাটে যাওয়া যাবে: ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে ট্রেন, বাস ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা করে কসবা পৌরশহরে পৌঁছাবেন।  সেখান থেকে পায়ে হেটে বা রিকশায় করেও তারাপুর সীমান্তে যাওয়া যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৯ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৯
জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।