ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ঈদ সামনে রেখে শিল্পকলায় জমে উঠেছে জামদানি মেলা

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৪ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৯
ঈদ সামনে রেখে শিল্পকলায় জমে উঠেছে জামদানি মেলা জামদানি মেলা, ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: ঈদ সামনে রেখে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে জমে উঠেছে জামদানি পণ্য প্রদর্শনী ও মেলা। দুবলাজাল, পান্নাহাজার, করোলা, আঙ্গুরলতা, তেরছা, জলপাড়, শাপলাফুল, বলিহার, ময়ূরপ্যাঁচপাড়, কলমিলতা, চন্দ্রপাড় ও ঝুমকাসহ বিভিন্ন বাহারি নামের জামদানি শাড়ির পসরা সাজিয়ে বসবেন বিক্রেতারা।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) মেলা ঘুরে দেখা যায়, লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, কমলা, বেগুনী, সাদা, কালোসহ বিভিন্ন রঙের জামদানি শাড়িতে সেজেছে প্রতিটি স্টল। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) আয়োজিত এ মেলায় তিন হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামের জামদানি শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে।

দাম প্রসঙ্গে মেলায় অংশ নেওয়া রাজন জামদানি হাউসের কারিগর ও বিক্রেতা মকবুল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, জামদানির দামটা মূলত নির্ভর করে এর কাজের ওপর। শাড়িতে ডিজাইন বা কাজ যতো বেশি হবে, দামও ততোটা বেশি হবে। আর এ এক-একটি শাড়ি তৈরি করতে সময় লাগে সাতদিন থেকে ৪ মাস পর্যন্ত।

বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখা যায়, দুবলাজাল, পান্নাহাজার, ঘাসফুল, সন্দেশ ফুল, ময়ূরপ্যাঁচপাড় আঙ্গুরলতাসহ জামদানি শাড়িগুলো নানা কারুকাজে সজ্জিত। শোভা ছড়াচ্ছে নিজের সবটুকু সৌন্দর্য দিয়ে। ফলে বাহারি রং ও নকশার এসব জামদানি শাড়ি সহজেই নজর কাড়ছে ক্রেতা-দর্শনার্থী।

মেলায় কথা হয় একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নাসিম আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাঙালি নারীরা প্রধানত ঈদ ও পুজোয় সব থেকে বেশি পছন্দের শাড়িটা কেনেন। আর জামদানি তো বাংলার সুপ্রাচীন ঐতিহ্য এবং কৃষ্টি কালচারের অনন্য প্রতীক।

তিনি বলেন, বাহারি রং, বুনন কৌশল, নকশা ও জ্যামিতিক মোটিফের মধ্যদিয়ে শৈল্পিকতার উৎকর্ষে এ শিল্পের মধ্যদিয়ে ভেসে ওঠে বাংলার প্রতিবিম্ব। যা নিজের অস্তিত্বের মতো প্রতিটি নারীর কাছেই প্রিয়। তাই এবার ঈদের শাড়িটা জামদানি নিবো বলেই ঠিক করা।

এদিকে বিক্রি নিয়ে মোটামুটি সন্তুষ্ট থাকলেও ঈদকে সামনে রেখে শপিংমলগুলোতে নকল ভারতীয় শাড়ি ঢাকাই জামদানি নামে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ বিক্রেতাদের। এতে দেশীয় কারিগররা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারাও। তবে নকলের ভিড়ে ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে সঠিক কারিগরের জামদানিই একমাত্র ভরসা বলে জানালেন বিসিক কর্মকতা আনিসুর রহমান এবং বিসিকের বিপণন বিশ্লেষক আমিনা খাতুন।

তাদের মতে, জামদানি একটি বংশানুক্রমিক কারুশিল্প। নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার বেশকিছু গ্রাম এবং সিদ্ধিরগঞ্জ ও সোনারগাঁও উপজেলার কয়েকটি গ্রামে যুগ যুগ ধরে জামদানি তৈরি হয়ে আসছে। জামদানির সঠিক ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে সঠিক কারিগরের জামদানিই ক্রেতাদের প্রথম পছন্দে থাকা উচিত। বিসিক জামদানি শিল্পের উন্নয়নে কারুশিল্পীদের একই স্থানে শিল্প স্থাপনে অবকাঠামোগত সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এবং নতুন প্রজন্মকে উৎসাহ প্রদান, উৎপাদন বৃদ্ধি ও বিপণন সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

ঈদ সামনে রেখে এ সময়টাতে বেশ জমে উঠেছে জামদানি মেলা। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বাহারি রঙের জামদানির সন্ধানে মেলায় আসছে প্রতিদিনই। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১৬ মে থেকে শুরু হয়ে মেলা ২৫ মে পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দর্শনার্থী ও ক্রেতা সাধারণের জন্য উম্মুক্ত থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৯
এইচএমএস/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।