সোমবার (২৭ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে উল্লেখিত পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখার দাবি জানান সংগঠনের সভাপতি ড. রূবানা হক।
তিনি বলেন, সব ধরনের পোশাক রপ্তানির উপর রপ্তানি মূল্যের ৫ শতাংশ হারে ভর্তুকির অর্থ একক প্রণোদনা হিসেবে বছরে ১১ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা সরকার পোশাক রপ্তানিকারকদের দিতে পারে।
একইভাবে আগামী ৫ বছর ৫৮ হাজার ৬২০ কোটি টাকার প্রণোদনা অব্যাহত রাখার দাবি জানান রূবানা হক।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, পোশাক শ্রমিকরা প্রতিদিন ২৫ টাকার টিফিন খেলে লাগে সাড়ে ৭ কোটি টাকা, বছরে ৩শ টাকার একটি শাড়ি কিনলে বছরে ব্যয় করেন ৬০ কোটি টাকা, ১০ লাখ শ্রমিক মাসে দেড় হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া দিলেও যাচ্ছে ১৫০ কোটি টাকা। এসব পরিসংখ্যানই বলে দেয়, পোশাক খাত কেন আমাদের জন্য জরুরি, কেন বেঁচে থাকা প্রয়োজন।
রূবানা হক বলেন, আমি একমাস ধরে বিভিন্ন সময় বলে এসেছি, আমরা যে অবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি, তা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। বেতন দিতে না পারায় আজ পর্যন্ত গত একমাসে ২২টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। সংসদ নির্বাচনের আগে ক্রেতারা অর্ডার কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি পোশাকের দামও পড়ে গেছে। চলতি মাসে আমরা নেগেটিভ অবস্থানে রয়েছি। যে কারণে প্রত্যেকেরই বেতন বোনাস দিতে কষ্ট হচ্ছে। আমরা প্রতিনিয়ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি ফ্যাক্টরি মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করছি।
সরকার আরও কোন কোন খাতে ভর্তুকি দেন তার একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন বিজিএমইএ সভাপতি। তিনি বলেন, কৃষিখাতে ২০ শতাংশের ভর্তুকি ১০ বছরে ১৯৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪৪৫ মিলিয়ন ডলার। চিংড়ি রপ্তানিতে ৭ থেকে বেড়ে হয়েছে ১০ শতাংশ। দশ বছরে রপ্তানি বেড়েছে ৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ, টাকার অংকে ৩৪ মিলিয়ন ডলার।
প্লাস্টিকে ১০ শতাংশ ভর্তুকিতে রপ্তানি ৮৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ মিলিয়ন ডলার। ফার্মাসিউটিক্যালসে ১০ শতাংশ ভর্তুকিতে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ১৮৬ শতাংশ, বেড়েছে ৬৭ মিলিয়ন ডলার। সিরামিকস ১০ শতাংশ ভর্তুকিতে ৬৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ রপ্তানি বেড়েছে ২১ মিলিয়ন ডলার। চামড়ায় রপ্তানি বেড়েছে ৫০৯ শতাংশ, ফার্নিচারে বেড়েছে ৬১১ শতাংশ।
সেখানে পোশাক খাতের জন্য শুধুমাত্র নতুন বাজারে দেওয়া হয় মাত্র ৪ শতাংশ। দশ বছরে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ৪৫০ শতাংশ। আয় বেড়েছে ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। রপ্তানির পণ্যগুলো থেকে আয়ের পরিমাণ সবারই মিলিয়নে। একমাত্র পোশাক খাতই বিলিয়ন ডলারে।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, পোশাক খাতের একটি ক্রান্তিলগ্নে আমরা পৌঁছেছি। এখন যদি আমরা সহযোগিতা না পাই, তাহলে আমাদের কষ্ট হবে। আগামী ৫ বছরের জন্য এই প্রণোদনা দেওয়া হলে পোশাক খাত ঘুরে দাঁড়াবে। সরকার যদি সব বাজারের জন্য ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেয়, তাহলে বর্তমানে যেটুকু পাই, তা বাদ দিলে সরকারের ১১ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা লাগবে বছরে। ৫ লাখ কোটি টাকার বাজেটে এই অর্থ খুব বেশি নয়।
পোশাকখাতের তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি জানিয়ে রূবানা হক বলেন, ৫ বছরে ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আগামী বাজেটে পোশাক শ্রমিকদের গৃহায়ণ, যাতায়াত ও রেশনিং চালু করার জন্য বাজেটে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে বলেও জানান বিজিএমইএ সভাপতি।
এসময় বিজিএমইএর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়সাল সামাদ, প্রথম সহসভাপতি আব্দুস সালাম, বিকেএমইএ প্রথম সহসভাপতি মনসুর আহমেদ, বিটিএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সিনিয়র সহসভাপতি মো. হাতেম উপস্থিত ছিলেন।
২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে অর্ন্তভূক্তির জন্য বিজিএমইএ, বিটিএমইএ, বিকেএমই যৌথভাবে দাবি দাওয়া তুলে ধরে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৪ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৯
এসই/জেডএস