সোমবার (২৭ মে) পান্থপথে বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে এ রকম চিত্র। সকাল ১০টা থেকে ক্রেতাদের আসা শুরু হলেও মোটামুটি দুপুর ১২টা থেকেই শুরু হয় ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়।
শপিং কমপ্লেক্সটির গেট দিয়ে ঢুকতেই বোঝা যায় ক্রেতাদের ভিড়। কেননা, গেটে ঢুকতে সব সময় পরিলক্ষিত হয়েছে একটি মোটামুটি লম্বা লাইন। এছাড়া ভেতরে বিশেষ করে নারীদের জামা কাপড়ের দোকানে ভিড় সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সের নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুপুর ১২ থেকে ক্রেতাদের বেশি ভিয় শুরু হয়। এর আগে সকালেও টুকটাক ক্রেতারা আসতে থাকে। গেট খোলার আগেও অনেককে ঢোকার জন্য অপেক্ষায় দেখা যায়। ঈদের সময় যতো ঘনিয়ে আসবে, ভিড় আরও বাড়বে। তখন ভেতরে ঢুকতে গেটে অনেক লম্বা লাইন দেখা যাবে। তাছাড়া এখনই লিফটে জায়গা পাওয়া যায় না।
শপিং কমপ্লেক্সটির একটি শাড়ি, থ্রি-পিসসহ নারীদের অন্যান্য জামাকাপড় সম্বলিত একটি দোকানের বিক্রেতা নাজমুল হায়দার বাংলানিউজকে বলেন, ক্রেতারা আসছে, বিক্রি ভালো হচ্ছে। তবে অনেকে আরও নতুন কালেকশনের অপেক্ষায় রয়েছে। এবার ভারতীয় পোশাকের ঝোঁক একটু কম দেখা যাচ্ছে। মানুষ দেশীয় ও আরামদায়ক পোশাক কিনতে বেশি পছন্দ করছে। হয়তো গরমের কারণে ক্রেতাদের এমন পছন্দ। তবে নতুন ডিজাইনের আরও কাপড় ঈদের আগে আসবে। সেগুলো বিক্রি নিয়ে আমরা যথেষ্ট আশাবাদী।
তুলনামূলকভাবে কম ভিড় লক্ষ্য করা গেছে পুরুষদের পাঞ্জাবি ও অন্যান্য জামা কাপড়ের দোকানে। এমনই একজন দোকানদার ইসমাইল হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের বিক্রি বলতে যেরকম, সেরকম শুরু হয়নি। তবে আগের চেয়ে বিক্রি বেড়েছে। ছেলেরা আগে তাদের পরিবারের জন্য জামা কাপড় কিনে, তারপরে নিজের জন্য কিনতে আসে। এই কারণেই হয়তো এখনও ঈদের চাপ পড়েনি। তবে ক্রেতাদের আশা দেখে মনে হচ্ছে, এবার বিক্রি ভালো হবে।
একই রেশ লক্ষ করা গেছে জুতার দোকানগুলোতেও। রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে আসা সুমাইয়া শারমিন নামে এক ক্রেতা বাংলানিউজকে বলেন, ঈদে বাড়িতে যাবো, তাই এখন দ্রুত শপিংটা সেরে নিচ্ছি। সবার জন্য জামা কাপড় কিনেছি। এখন শুধু জুতাটা বাকি আছে। ঈদে ছুটি নেবে বলে আমার স্বামী আসতে পারেনি এখন। সে পড়ে এসে কেনাকাটা করে যাবে। বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সে সুবিধাটা হলো এক জায়গাতেই আমি সব ধরনের পণ্য পাচ্ছি। তাছাড়া পছন্দসই পণ্য পেতেও বেশি বেগ পেতে হয় না। তাই কেনাকাটার ক্ষেত্রে এই মার্কেটটাই প্রথম প্রাধান্য দিই। এদিকে, জুয়েলারি ও কসমেটিকসের দোকানগুলোতে চলছে টুকটাক বেচাকেনা। এসব দোকানের বিক্রেতাদের মতে, ঈদের দুই-তিনদিন আগে থেকে মূলত জুয়েলারি ও কসমেটিকসের দোকানে ভিড় বাড়ে।
মিরপুর থেকে আগত ইমন-সিথী দম্পতি বাংলানিউজকে বলেন, রমজানের শুরুতেই আমাদের জামা-কাপড়, জুতাসহ অন্যান্য কেনাকাটা সব শেষ করেছি। এখন এসেছি শুধুমাত্র জুয়েলারি ও কসমেটিকস কেনার জন্য।
এদিকে, ইলেকট্রনিকস পণ্যের দোকানের ভিড় একেবারেই কম। রফিক চৌধুরী নামে মোবাইল এক্সেসরিজের দোকানের বিক্রেতা বাংলানিউজকে বলেন, ইলেকট্রনিকস পণ্যের দোকানে আসলে ভিড় সারাবছরই সমান থাকে। ঈদকে কেন্দ্র করে হালকা বাড়লেও বাড়তে পারে। এখানে আসলে মানুষ আসে তাদের প্রয়োজনীয় পণ্যটি নষ্ট হলে বা নতুন প্রয়োজন হলে। আর চাহিদা মোটামুটি সারাবছরই থাকে। ঈদ ঘনিয়ে আসলে অনেকেই নতুন মোবাইল কেনার জন্য হয়তো আসে। এছাড়া সবকিছু সাধারণ থাকে।
বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সের নয়তলায় রয়েছে খাবারের স্থান। রমজান মাস হওয়ায় সারাদিন এখানে ভিড় দেখা না গেলেও ইফতারের এক থেকে দেড় ঘণ্টা আগে থেকেই এখানে সিট খালি পাওয়া গেলেও তা বুকিং রয়েছে বলে জানা যায়। একইসঙ্গে সব ধরনের পণ্যের বাহার থাকায় ইফতারিটাও এখানেই সেরে নেয় ক্রেতারা। এছাড়া বিভিন্ন ফ্লোরে বসে থাকতে দেখা গেছে ইফতারের জন্য অপেক্ষমান ক্রেতাদের।
রিয়াজ নামে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী এসেছেন তার পরিবারের সঙ্গে ঈদের শপিং করতে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ভাই-বোন, বাবা-মাসহ আমরা সবাই দুপুর ১টার দিকে এই শপিং কমপ্লেক্সে ঢুকেছি। এখন আমরা বসে আছি ইফতারের অপেক্ষায়। শপিং এখনও শেষ হয়নি, ইফতারের পর আবার চলবে। আর সব শপিং এক দিনেই এখান থেকে শেষ হবে। তাছাড়া বাইরে যে পরিমাণ গরম, তাতে এখানেই একসঙ্গে সব শপিং শেষ করতেই বেশি স্বস্তি বোধ হয়। তবে সার্ভিস ভালো পাচ্ছি, কিন্তু দামটা একটু বেশি।
এছাড়া আরও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ রকম এক দিনে এক স্থান থেকে পছন্দসই জিনিসপত্র কেনাকাটায় বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সের জুড়ি নেই। গরম অনুভব ছাড়া বেশ আরামে এখান থেকে সব ধরনের কেনাকাটা করা যায়, এটা বিশাল সুবিধা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৯
এমএএম/টিএ