শনিবার (২৯ জুন) বিকেলে রাজধানীর ফকিরাপুল ও আরামবাগে অভিযান চালিয়ে এ মালামাল জব্দ করা হয় বলে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট জানায়।
কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের উপ কমিশনার রেজভী আহম্মেদ বাংলানিউজকে বলেন, উপ কমিশনার ও সহকারী কমিশনারের নেতৃত্বে তিনটি প্রিভেনটিভ টিম গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ফকিরাপুল ও আরামবাগে অভিযান পরিচালনা করে।
তিনি বলেন, এই তিন প্রতিষ্ঠানে আমরা প্রচুর পরিমাণে বিওপিপি ফ্লিমস পেপার দেখতে পাই। তখন তাদের কাছে ফ্লিম পেপারের বৈধ কাগজপত্র বা দলিলাদি চাইলে, তারা দেখাতে পারেনি। তবে পণ্যগুলোর গায়ে থাকা স্টিকার দেখে প্রমাণ হয়, এসব বন্ড সুবিধায় আনা হয়েছে। একইসঙ্গে অবৈধভাবে খোলা বাজারে বিক্রি করছে। যা কাস্টমস আইন অনুযায়ী, এটি সুস্পষ্ট চোরাচালান। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে কাস্টমস আইনের আওতায় তিনটি পৃথক মামলা করা হয়েছে।
রেজভী আহম্মেদ বলেন, সম্প্রতি বন্ড কমিশনারেট নিজস্ব অনুসন্ধান কার্যক্রম ও নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা সূত্র এবং স্থানীয় উদ্যোক্তাদের তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান পরিচালনা করছে। শনিবার আট টন বিওপিপি ফ্লিমস পেপার অবৈধভাবে বন্ড সুবিধায় এনে খোলা বাজারে বিক্রি করায়, তা জব্দ করা হয়। পাশাপাশি আমরা তাদের ব্যবসা পরিচালনার যন্ত্রপাতি যেমন সিপিও এবং হিসাবের খাতা জব্দ করি। এগুলো অনুসন্ধান করে আরও মামলা করবো। এছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত হলে মানি লন্ডারিং আইনেও তাদের বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে।
কাস্টমস কমিশনারেট সূত্রে জানা গেছে, গত এক মাসে ২১টি ফেব্রিক্স প্রতিষ্ঠানের অপব্যবহার ধরা পড়েছে। এতে প্রায় ১৩৫ কোটি টাকার মালামাল জব্দ করা হয়। যা থেকে সরকার রাজস্ব পেতো ১২৬ কোটি টাকা। তাদের বিরুদ্ধেও শুল্ক আইনের আওতায় মামলা করা হয়েছে। মামলাগুলো বিচারাধীন।
দেশি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের কাগজ এখন বিদেশে রফতানি হচ্ছে। মানও ভালো। পাশাপাশি চাহিদার চেয়েও বেশি উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে দেশি কাগজ কলগুলোর। তারপরও বন্ড সুবিধার আওতায় বিপুল পরিমাণ কাগজ আসছে বিদেশ থেকে। তাদের অভিযোগ, দেশে উৎপাদিত কাগজের মান পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হলেও আমদানি করা কাগজের মান যাচাই করা হচ্ছে না। ফলে মিথ্যা ঘোষণা আর শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা নিম্নমানের বিদেশি কাগজ কম দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, রফতানিমুখী শিল্প কারখানাগুলো পুনরায় রফতানির শর্তে শুল্কমুক্ত বন্ড সুবিধায় পণ্য আমদানির সুযোগ পায়। এসব কাঁচামাল বা পণ্য সরকার নির্ধারিত গুদামে (বন্ডেড ওয়্যারহাউস) রক্ষিত থাকে। কিন্তু এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী দেশে শুল্কমুক্ত পণ্য এনে অবৈধভাবে অপসারণের মাধ্যমে তা খোলাবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। বন্ড সুবিধায় আনা কাপড়, প্লাস্টিক দ্রব্য, কাগজ পণ্য, ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট কার্ড, কার্ড বোর্ড, বৈদ্যুতিক পাখা, এসিডিটিক এসিড, পেডিং (ব্লেজার বা জ্যাকেট তৈরির কাঁচামাল) ইত্যাদি দ্রব্য ও পণ্য ওয়্যারহাউসে যাওয়ার আগেই খোলাবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে।
জানা গেছে, বন্ড সুবিধার পণ্য কালোবাজারে বিক্রি এবং চোরাকারবারি ঠেকাতে সম্প্রতি ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট ২৬টি ঝটিকা অভিযান চালিয়েছে। এতে ৪০টি প্রতিষ্ঠানের ৩০ কোটি টাকার অনিয়ম উদঘাটন করা হয়েছে। তবু ঠেকানো যাচ্ছে না অসাধু চক্রকে। শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা পণ্যে তারা সয়লাব করছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বাজার। পুরান ঢাকার ইসলামপুর, নয়াবাজার, চকবাজার মোড়েও খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে বন্ড সুবিধায় আমদানি করা পণ্য। আর বন্ডেড পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ক্ষতির মুখে পড়ছে দেশীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এ কারণে প্রত্যাশিত রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা।
দেশে বর্তমানে ছয় হাজার ৫৬৫টি প্রতিষ্ঠানের নামে বন্ড লাইসেন্স থাকলেও অনিয়মের কারণে এক হাজার ৭৫৭ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত করেছে কাস্টমস। আবার কারখানা বন্ধ থাকার পরও বন্ড লাইসেন্স আছে দুই হাজার ৪৩৮টি পোশাক ও প্যাকেজিং কারখানার।
বাংলাদেশ সময়: ০০০০ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৯
জিসিজি/টিএ