রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বীজতলায় দিনভর দিচ্ছেন তারা। সকাল হলেই কৃষকরা ছুটে চলছেন সবজি বীজতলায়।
কিন্তু আগাম জাতের সবজি চাষে যেমন লাভ রয়েছে তেমনি ঝুঁকি। বীজতলার ক্ষেত্রে ঝুঁকিটা আরও বেশি। কারণ ঋতু বৈচিত্রের ধারায় চলছে আষাঢ় মাস। কমবেশী বৃষ্টি লেগেই আছে। পাশাপাশি রোদের সঙ্গে রয়েছে ভ্যাপসা গরম। এতে বীজতলা নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিটা অনেক বেশি। তবু ঝুঁকি মেনেই আগাম জাতের সবজির বীজতলা তৈরিতে ব্যস্ত কৃষক।
সবজিখ্যাত বগুড়া সদর, শাজাহানপুর ও শেরপুর উপজেলার কয়েকটি গ্রামের কৃষকদের সঙ্গে কথা হলে এমন তথ্যই ওঠে আসে।
বীজতলা তৈরির কাজটি করতে হয় অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। এক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম মানতে হয় প্রত্যেক কৃষককে। সামান্য এদিক ওদিক হলেই পুরো বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে সবার আগে বীজতলার জন্য জমি প্রস্তুত করতে হয়। বীজতলা তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কৃষকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় এসব তথ্য জানা যায়।
কৃষক সামসুল হক বাংলানিউজকে জানান, প্রস্তুতের পর জমির মাঝখানে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে ছোট ছোট আইল তৈরি করতে হয়। আইলের সংখ্যা নির্ভর করে জমির পরিমাপের ওপর। তবে বীজতলার জমি অবশ্যই উঁচু হতে হবে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। তারপর জাত ভেদে নিয়মানুযায়ী সবজির বীজ বপন করতে হয়।
তার আগে বীজতলার জন্য বাঁশের বৈতি (ছাউনি) তৈরি করে নেন কৃষকরা। মূলত প্রয়োজন অনুযায়ী বীজতলা পলিথিনে মুড়িয়ে দেওয়ার জন্যই ছাউনি তৈরি করা হয়।
আরেক কৃষক আফজাল হোসেন জানান, বীজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চারায় রূপ নিতে নির্ধারিত গরমের প্রয়োজন হয়। গরম আবহাওয়া সৃষ্টিতে পলিথিনে মুড়িয়ে দেওয়া হয় বীজতলা। নিচের অংশে কিছুটা ফাঁক রাখা হয় যেন বীজতলায় প্রয়োজন মতো বাতাস প্রবেশ করতে পারে। এ অবস্থায় সপ্তাহখানেক পর চারা গজালে পলিথিন সরিয়ে ফেলা হয়।
কৃষকরা জানান, শাজাহানপুর উপজেলার শাহানগর, মোস্তইল, কামারপাড়া গ্রামের কৃষকরা এখন সবজির বীজতলা তৈরিতে সময় পার করছেন। এসব গ্রামে নার্সারি আকারে বাণিজ্যিকভাবে নানা জাতের সবজি উৎপাদন করা হয়। এরমধ্যে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, কাঁচা মরিচ, পালংশাক, লালশাক, পুঁইশাক, সরিষা শাক, মিষ্টি কুমড়া, শিম, টমেটো, পেঁয়াজ অন্যতম।
একইভাবে সদর উপজেলার, মানিকচক, গোকুল, পাশের মহাস্থান এলাকায় একাধিক বীজতলা নার্সারি রয়েছে। শেরপুর উপজেলার গাড়িদহ, ফুলবাড়ী, খামারকান্দি এলাকায় অনুরূপ বীজতলা নার্সারি রয়েছে। এসব নার্সারিতে আগাম জাতের সবজি চাষের জন্য পুরোদমে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন কৃষকরা। আগাম জাতের হওয়ার কারণে বীজতলার পেছনে ব্যাপক শ্রম দিতে হচ্ছে যোগ করেন কৃষক রহমত আলী।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, জেলা সদর, শাজাহানপুর, শেরপুর, শিবগঞ্জ উপজেলায় বছরের বারো মাসই সবজি চাষ হয়ে থাকে। এছাড়া অন্যান্য উপজেলায়ও কমবেশি সবজি চাষ হয়।
তিনি জানান, এ জেলায় খরিপ মৌসুমে প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে নানা জাতের সবজি চাষ করা হয়েছিলো। এখনও আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে খরিপ মৌসুমের সবজি রয়েছে। এখন এসব এলাকার কৃষকরা আগাম জাতের সবজি চাষের জন্য বীজতলা তৈরিতে ব্যস্ত।
ফরিদুর রহমান জানান, পুরো রবি মৌসুম শুরু হবে আগামী ১৬ অক্টোবর থেকে। আগাম জাতের সবজি চাষের জন্য এ পর্যন্ত প্রায় ৯০০ হেক্টর জমিতে নার্সারি বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। তবে আগাম জাতের সবজি চাষ ও বীজতলা তৈরিতে যেমন লাভ আছে তেমনি ঝুঁকিও রয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি জানান, উৎপাদন ব্যয় বেশি। আবহাওয়া প্রতিকূলে গেলেই লোকসানের আশঙ্কা। আবার বাজার দর ভালো না হলেও বাড়তি লোকসান গুণতে হয়। তবে সাধারণত আগাম জাতের সবজি চাষে কৃষক বেশির ভাগ সময় লাভবানই হন। একইভাবে বীজতলার মালিকরাও অনেক লাভবান হন-যোগ করেন কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৩ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৯
এমবিএইচ/ওএইচ/