ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ডেইরি খাতে স্বাবলম্বী গ্রামীণ জনগোষ্ঠী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৯
ডেইরি খাতে স্বাবলম্বী গ্রামীণ জনগোষ্ঠী আলোচনা অনুষ্ঠানে অতিথিরা/ছবি- রাজীন চৌধুরী

ঢাকা: ডেইরি খাত নিয়ে কাজের মাধ্যমে দেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠী স্বাবলম্বী হচ্ছে। একই সঙ্গে সুযোগ আছে শিক্ষিত তরুণ-যুবকদের ক্যারিয়ার গড়ার।

শনিবার (১৩ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বসুন্ধরা গ্রুপের ইন্ডাস্ট্রিয়াল হেডকোয়ার্টার-১ এর মিলনায়তনে এক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে এমনটাই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলানিউজ এবং আড়ং ডেইরি আয়োজিত ‘পুষ্টি চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন এক গ্লাস দুধের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন শিক্ষাবিদ, গবেষক, পুষ্টিবিদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষজ্ঞরা।

এসময় ব্র্যাকের ডেইরি অ্যান্ড ফুড বিভাগের পরিচালক এবং জাতীয় ডেইরি ডেভেলপমেন্ট ফোরামের মহাসচিব আনিসুর রহমান নিজ বক্তব্যে দেশীয় দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্য সেবনের জন্য দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশীয় ডেইরি ইন্ডাস্ট্রির ওপর দেশের একটি বড় অংশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠী নির্ভর করে আছে। বিশেষ করে যারা মার্জিনাল খামারি, দেশীয় খামারিদের জীবিকা নির্বাহ হয় এই খাত দিয়ে। দেখা যায়, দুই একটা গরু নিয়েও তারা খামার করে কাজ করেন। পাঁচ বছর আগেও অনেক খামারি দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিলেন, তাদের দৈনিক আয় ছিল দুই ডলারের নিচে। এখন তাদের মাসিক আয় কমপক্ষে ১৪১ ডলার।

দেশীয় ডেইরি খাতের সাঙ্গে গ্রামীণ নারীদের একটি বড় অংশ জড়িত উল্লেখ করে আনিসুর রহমান বলেন, আড়ং ডেইরির সঙ্গে প্রায় ১১ হাজার খামারি কাজ করেন। তাদের মধ্যে ২২ শতাংশের বেশি আছেন নারী।

শিক্ষিত তরুণ ও যুবকদের জন্যও ডেইরি খাতে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ আছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, শিক্ষিত তরুণ এবং যুবকরাও গতানুগতিক ক্যারিয়ারের বাইরে এই খাতে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। অনেকেই তা শুরুও করে দিয়েছি। আমরা আড়ং ডেইরির পক্ষ থেকে তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি এবং তাদের দুধ বিক্রির গ্যারান্টি দিচ্ছি। আমরা তাদের বলেছি যে, তাদের খামারে গুণগতমান সম্পন্ন দুধ উৎপন্ন হলে আমরা তা কিনে নেবো। এভাবে দেশীয় খামারিদের অনুপ্রাণিত করলে বিদেশের ওপর নির্ভরতা কমবে। দেশীয় অর্থনীতিতে যা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন বারডেম হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ শামসুন্নাহার নাহিদ মহুয়া। তিনি বলেন, শিশুদের দুধ খাওয়ানো নিশ্চিত করতে হলে আগে পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এজন্য সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। এখন স্কুলে গেলে দেখা যায় ফাস্টফুড শপ। কিন্তু এটাকে হেলথি ফুড শপ দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে হবে যেখানে পুষ্টিকর খাবার থাকবে। সেসব দোকানে ইউএচটি মিল্ক থাকতে পারে। এটার একটি প্যাকেট নিয়ে ক্লাসে বসেই খেতে পারে শিশুরা। এধরনের গোলটেবিল বৈঠক থেকে আমরা যা জানলাম তা বাইরে ছড়িয়ে দিয়ে সবাইকে সচেতন করতে হবে এবং ডেইরি খাত ও দুধ সেবন নিয়ে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।

অ্যাপোলো হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী বলেন, বইয়ের পুষ্টিবিজ্ঞান আর মানুষের স্বাভাবিক জীবনের পুষ্টিবিজ্ঞানে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। আমাদের কাছে যে রোগীরা আসে মূলত তাদের একটাই সমস্যা দেখা যায়, তা হলো ল্যাকটোজের ঘাটতি। এটা আমাদের একটা স্বাভাবিক সমস্যায় দাঁড়িয়েছে। দুধ তরল হিসেবে পানির চাহিদা পূরণ করা ছাড়াও শরীরের কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, মিনারেলসহ ভিটামিনগুলোও রয়েছে। দুই বছর পর থেকে শিশুদের প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ বা দুধ দিয়ে তৈরি খাবার খেতে হবে। অনেক দেশে মুভিগুলোতে দুধ খাওয়ার দৃশ্য দেখা যায় নাশতা বা খাবারের টেবিলে। আমাদের দেশে সেটা দেখা যায় না।

সভায় ব্রাক ডেইরির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জয়দ্বীপ সান্ত্রা বলেন, দুধ খামারিদের কাছ থেকে প্রক্রিয়াজাতকরণের বিষয়টি সাধারণ জনগণ জানে না। কারখানায় দুধ আসার পর মোট ১৮টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১২টি কেমিক্যাল টেস্ট, ৪টা মাইক্রোবিয়াল টেস্ট। পরবর্তী ধাপে যাওয়ার আগে এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ৮৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পাস্তুরিত করে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ঠাণ্ডা করা হয়। আর প্যাকেটজাত করা পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া আধুনিক মেশিনে করা হয়। এরপর সংরক্ষণ করা হয়। সবশেষে আরো ৭টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বাজারজাতকরণ করা হয়।
 
আলোচনা সভার সমাপনী বক্তব্যে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এর সম্পাদক জুয়েল মাজহার বলেন, এধরনের আলোচনার আগে আমরা জানতাম না যে, আমরা কতকিছু জানতাম না। এখন আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে এই জানাগুলোকে আমাদের চারপাশের সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া। দেশের শীর্ষ অনলাইন গণমাধ্যম হিসেবে এসব কথা আমরা বিশ্বব্যাপী আমাদের কোটি পাঠকের কাছে ছড়িয়ে দিতে কাজ করবো। এমন সব ভালোকিছুর সঙ্গে আছে বাংলানিউজ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৯
এসএইচএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।