সোমবার (১৫ জুলাই) সচিবালয়ে ফিলিপাইনের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী একথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী জানান, এবার চালের উৎপাদন বিশেষ করে বোরোতে বেশ ভালো হয়েছে। আমনেও এক কোটি ৪০ লাখ টন টার্গেট ছিল, উৎপাদন হয়েছে এক কোটি ৫৩ লাখ টন। এখন আমাদের অনেক মিলার-ব্যবসায়ীদের গুদামে যথেষ্ট চাল রয়েছে। এবার বোরোতে উৎপাদন ভালো হওয়ায় অস্বাভাবিকভাবে চালের দাম কমে গিয়েছে। চালের দাম খুবই কম। এজন্য আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। আমাদের কৃষকরা-চাষিরা সত্যিকারে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কিছু চাল রপ্তানি করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ফিলিপাইনে চাল রপ্তানির বিষয়টি তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, একটি পার্টি এসেছে, তারা চাল আমদানিতে ফিলিপাইন সরকারকে সহযোগিতা করেন। ফিলিপাইন সরকারও বলছে, তারা জিটুজি (সরকারের কাছ থেকেও) চাল কিনতে পারে। তারা কয়েক দিন যাবৎ বিভিন্ন মিলে গিয়েছে, মান দেখে তারা বলেছে বাংলাদেশে চালের গুণগত মান ভালো। ফিলিপাইনের মানুষ সিদ্ধ চাল খায়। কাজেই ফিলিপাইনে সহজেই চাল বিক্রি করা যাবে। তারা মনে করেছে, দামও মোটামুটি রিজেনেবল। ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড চালের মূল রপ্তানিকারক, তাদের দামের তুলনায় আমাদের চালের যে কোয়ালিটি তাতে দাম মোটামুটি ভালো হবে। আমার মনে হয়, চাল রপ্তানির ব্যাপারে খুব তাড়াতাড়ি আমরা ভালো ডিল করতে পারবো।
কী পরিমাণ চাল রপ্তানি করা যাবে এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এ মুহূর্তে বাংলাদেশে চালের যে উদ্বৃত আছে দশ লাখ টন চাল রপ্তানি করলেও আমাদের কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুযোগের দেশ, যেকোনো সময় বন্যা, প্রাকৃতিক দুযোগ হতে পারে। আমরা এখন দুই লাখ টনের দিয়েছি, যদি আরও চাহিদা আসে আমরা আবার ৫ লাখ রপ্তানি করবো। এরকম করে আস্তে আস্তে আমরা যাবো। এখন ওরা নিতে চাচ্ছে এক লাখ টন। ফিলিপাইন সরকারও আমাদের সরকারের কাছ থেকে চাল কিনে নিতে চাচ্ছে।
রপ্তানি হলে কৃষক পর্যায়ে কী প্রভাব পড়বে- প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, যদি পাঁচ লাখ টন চাল রপ্তানি করতে পারি অবশ্যই দামের ওপরে প্রভাব পড়বে।
সাধারণ মানুষ চাপের মধ্যে পড়বে কি-না এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, সাধারণ মানুষ কোনো চাপের মধ্যে পড়বে না। কোনক্রমেই কোনো চাপের মধ্যে পড়বে না।
রপ্তানির ক্ষেত্রে কোনো টাইম ফ্রেম আছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, না এ রকম কোনো টাইম ফ্রেম নেই। আমরাতো রপ্তানি বাজারে নতুন, তাই একটু সময় লাগবে।
চাল ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ বলেন, মাঝারি ধরণের আটাশ ও ঊনত্রিশ চালের ডিমান্ডই ফিলিপাইনের কাছে বেশি। সঙ্গে সঙ্গে হয়তো মিনিকেটও কিছু করা যেতে পারে।
বন্যায় ক্ষতি হবে না
দেশের বিস্তৃর্ণ এলাকায় বন্যা দেখা দিলেও ক্ষতি হবে না দাবি করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, এ বন্যা এমন কোনো বন্যা না। বাংলাদেশ বন্যা-খরার দেশ, আমরা ছোটবেলা থেকে পড়েছি- বন্যা আমাদের জন্য আশীর্বাদ, আবার খুব খারাপ হলে অভিশাপ। ‘আমাদের বন্যার দরকার আছে দু’টি কারণে- আমরা যে সেচ ব্যবস্থায় গেছি, নিচ থেকে পানি তুলে খরচ করছি। এটা পূরণ করতে হবে। বন্যা না হলে, বৃষ্টি না হলে এটা কীভাবে হবে। পানির স্তর আস্তে আস্তে নিচে নেমে যাচ্ছে। আরেকটা হলো, বন্যার পানির সঙ্গে অনেক পলিমাটি আসে, যেটার মধ্যে অনেক নিউট্রিয়েন্ট, অনেক সার আছে। এটাকে ছোট করে দেখার কোনো কারণ নেই। ’
মন্ত্রী বলেন, আমরা চাই না বন্যায় আমাদের ক্ষতি হোক, কিন্তু আমরা সবসময় মনে করি স্বাভাবিক বন্যা আমাদের জন্য আশীর্বাদ, আমাদের চাষিদের জন্য কল্যাণ-মঙ্গল।
‘এ মুহূর্তে বন্যায় তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। এ মুহূর্তে মাঠে তেমন কোনো ফসল নেই। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৯
এমআইএইচ/ওএইচ/