উচ্চমূল্যের বাজারে একটু স্বস্তি দিয়েছে ডিম, পিঁয়াজ ও মাছ। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম কমেছে ডজনে ১৫ টাকা, আর পিঁয়াজের দাম কমেছে ৫ টাকা।
দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা ও টানা বৃষ্টির কারণে অনেক সবজির জমি নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে হঠাৎ করে কাঁচামরিচসহ অন্যান্য সবজির দাম এমন অস্বাভাবিক বেড়েছে বলে অভিমত ব্যবসায়ীদের। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, কার্যকরী বাজার তদারকি ব্যবস্থা না থাকায় হঠাৎ পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এতে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী লাভবান হলেও বেকায়দায় পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ।
শুক্রবার (১৯ জুলাই) রাজধানীর নয়াবাজার, রায়সাহেব বাজার, সূত্রাপুর বাজার, শ্যামবাজার, শান্তিনগর, সেগুনবাগিচাসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা গেছে, প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচমরিচের দাম বেড়ে দ্বিগুনেরও বেশি হয়েছে। বাজারে ৫০ থেকে ৮০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজি বিক্রি হতে দেখা যায়নি। তবে টমেটো, গাজর ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি।
এদিকে কাঁচামরিচের দাম বাড়লেও পাইকারি ও খুচরা বাজারে দামের বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। পাইকারি বাজারের দ্বিগুন দামে বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৬০ টাকা।
হঠাৎ কাঁচামরিচের দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে সূত্রাপুর বাজারের সবজি ব্যবসায়ী আবুল কালাম বাংলানিউজকে বলেন, দেশে বন্যা ও টানা বৃষ্টিতে মরিচসহ সবজির অনেক ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে দাম বেড়েছে। বৃষ্টি থামলেও সহসা সবজির দাম কমবে না, বাড়তে পারে। কারণ বন্যায় ক্ষতি হওয়া জমির পানি কমার পর আবার নতুন করে সবজির আবাদ করতে হবে। এতে কৃষকের দ্বিগুন খরচ পড়বে।
এদিকে গত সপ্তাহে ৫৫ টাকায় বিক্রি হওয়া দেশি পিঁয়াজ কমে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর কিছুটা নিম্নমানের দেশি পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪২ টাকা কেজিতে, যা আগে ছিল ৫০-৫২ টাকা। আমদানি করা পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা কেজি। যা আগে বিক্রি হয়েছিল ২৪ থেকে ২৮ টাকা। এছাড়া আমদানিকৃত চায়না আদা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি। দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। আমদানিকৃত রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি আর দেশি ১৩০ টাকা কেজি।
পিঁয়াজের দামের বিষয়ে ব্যবসায়ী বলরাম দাস বাংলানিউজকে বলেন, গত সপ্তাহ থেকে আজ পিঁয়াজের দাম কম। কেজিতে ৫ থেকে ৮ টাকা কমেছে। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি পিঁয়াজ বিক্রি করেছি ৫৫ টাকা। আজ বিক্রি করছি মানভেদে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। সে হিসাবে প্রতিকেজিতে পিঁয়াজের দাম গড়ে ৫ টাকা কমেছে। মূলত পাইকারিতে দাম বাড়লে আমরা দাম বাড়াই আর কমলে আমরাও কম দামে বিক্রি করি।
এদিকে সবজির বাজার ঘুরে সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে শসা, টমেটো ও গাজর। বাজারভেদে শসা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে পাকা টমেটো ও গাজর। শসা, টমেটো ও গাজরের মতো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বেশিরভাগ সবজি। গত সপ্তাহের মতো করলা, কাঁকরোল, উস্তা, ঝিঙা ৫০ থেকে ৬০ টাকা ঢেঁড়স; পেঁপে, পটল, কচুর লতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা; বেগুন, বরবটি ৬০ থেকে ৮০ টাকা; আলু ২০ থেকে ২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া বাজারে প্রতি আঁটি লাল শাক, মূলা শাক, কলমি শাক ২৫ টাকা; পুঁই শাক, লাউ শাক ৩০ টাকা; ধনে পাতা কেজি ২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
সবজির দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে লক্ষ্মীবাজারের বাসিন্দা ইমন বাংলানিউজকে বলেন, দেশে একটা কিছু হলে প্রথমে প্রভাব পড়ে বাজারে, বিশেষ করে সবজি বাজারে। এতে করে আমাদের মতো নিন্মআয়ের মানুষ বেকায়দায় পড়ে যায়। দেশে মাত্র হাতেগোনা কয়েকটা জেলায় বন্যা হয়েছে। সেখানে আবার তেমন কোনো সবজি হয় না। তাহলে সবজির দাম এতো বাড়ার কারণ কী? সরকার কি এটা কখনো তদারকি করে দেখেছে। পিঁয়াজের দামতো প্রতি বছর কোরবানির ঈদের আগে বাড়ে, এবার অনেক আগেই বেড়েছে। এতে স্পষ্ট কেউ কোনো কারসাজি করছে। এতে করে একটি অসাধু ব্যবসায়ী মহল লাভবান হচ্ছে। সরকার বারবার বলছে নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক হবে, কোথায় হচ্ছে বরং আরো অস্বাভাবিক হচ্ছে দিনদিন।
এদিকে মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির আগের সপ্তাহের মতো ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। পাকিস্তানি কক বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২২০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে লাল লেয়ার মুরগি। গরুর মাংস বাজারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৫৭০ টাকা এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি।
আর কয়েক মাস ধরে চড়া দামে বিক্রি হওয়া মাছের দাম একটু কমেছে। বন্যার পানি ছড়িয়ে পড়ায় সবজায়গায় এখন মাছ পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে এখন বেশিরভাগে মাছের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। খুচরা বাজারে তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে পাঙাশ মাছ। রুই মাছ ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা, কাতল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, নলা ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, পাবদা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, টেংরা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, শিং ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, বাইলা ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, আইড় ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, বোয়াল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা এবং চিতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি।
মাছের দামের বিষয়ে সুমন পোদ্দার বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই মাছের দাম খুব চড়া ছিল। বর্ষার পানি ও বৃষ্টি না হওয়ায় মাছের দাম এমন ছিল। এখন বৃষ্টি ও পানি বাড়ায় খালে বিলে মাছ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে বেশিরভাগ মাছের দাম কমেছে।
আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল ও অন্যান্য মুদিপণ্যের দাম। বাজারে প্রতি কেজি ভালোমানের নাজির ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, মিনিকেট ৫৫ থেকে ৫২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্বর্ণা ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা, বিআর ২৮ নম্বর ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ২৬ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা, লবণ ৩০ থেকে ৩৫, পোলাউর চাল ৯০ থেকে ৯৫, খোলা ময়দা ২৮ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা। ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, খেসারি ডাল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, মসুর ডাল ১০০ থেকে ১১০ টাকা, বুট ৩৮ থেকে ৪০ টাকা।
এদিকে ঈদুল আজহার আগে সিন্ডিকেট করে অনৈতিক ও বেআইনিভাবে মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে ঈদ পর্যন্ত নিত্যপণ্যের সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ ও ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে সরকারের পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে আইনি নোটিশ দিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংস্থা ‘কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি’ (সিসিএস)।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩২ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৯
জিসিজি/জেডএস