গত বছর কোরবানির ঈদের আগে সরকার অনুমোদিত চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিট-খাটালগুলো ভারতীয় গরুতে সরগরম থাকলেও এ বছরের চিত্র কিছুটা ভিন্ন।
এ বছর মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান বাড়াসহ সীমান্তে সম্প্রতি হত্যা বেড়ে যাওয়ায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তের সবগুলো বিট-খাটাল বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয়দের আশঙ্কা, গরু আমদানির আড়ালে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের পাশাপাশি সীমান্তে হত্যাকাণ্ড আবারও বেড়ে যাবে। সম্প্রতি এসব হত্যাকাণ্ডে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে (বিএসএফ) দায়ী করায় কড়াকড়ির কারণে জেলার সবগুলো বিট-খাটালে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ রেখেছে মালিকরা। তবে মাসুদপুর দিয়ে চোরাইভাবে রুবেল গরু পাচার অব্যাহত রেখেছেন।
মাসুদপুর বিটের মালিক রুবেলের দাবি, গরু ভারত থেকে না আনলে কোরবানির ঈদে গরুর সংকটসহ দাম চড়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সীমান্ত এলাকার বিট-খাটালগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগে ভারতীয় গরু ব্যবসায়ীরা সীমান্তে এসে পৌঁছে দিয়ে যেত। কিন্তু বিএসএফের বাধায় এখন নো ম্যানস ল্যান্ডের কাছেই আসতে পারছে না তারা। এসব কারণে গরু আমদানি কমে গেছে। তবে মাসুদপুর সীমান্ত দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে সীমান্তে গরু আনতে যাচ্ছেন বাংলাদেশি রাখালরা। অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট বিট মালিক ব্যবসা চালু রাখতে টাকার লোভ দেখিয়ে রাখালদের গরু আনতে পাঠাচ্ছেন। আর এভাবে গরু আনতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে গত দেড় মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে ১০ বাংলাদেশি রাখাল নিহত হয়েছেন।
অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পশু পালনকারী খামারিরা ভারতীয় গরু আমদানি আর হবে না ভেবে গতবারের লোকসান পুষিয়ে নিতে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
স্থানীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের পরামর্শে পুষ্টিকর খাবার দিয়ে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে হৃষ্ট-পুষ্টকরণ করা হচ্ছে এসব গরু। ভারতীয় পাচার করা গরুর মত এরা ক্ষতিকর স্টেরয়েড জাতীয় ট্যাবলেট বা ইনজেকশন ব্যবহার করেন না। এবার গো-খাদ্যের দাম তেমন একটা না বাড়ায় এবং ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ হলে লাভের আশা করছেন খামারিরা।
জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিমর্ষী গ্রামের সুজন মিঞা জানান, বছরে একটি গরু পালন করতে খরচ হয় ৮৪ হাজার টাকা। তার খামারে বতর্মানে ৪০টি গরু রয়েছে।
সীমান্তে প্রতিকূল পরিবেশে গরু পাচার না করে লালন-পালনের দিকে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আনন্দ কুমার অধিকারী।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্র মতে, জেলার ৫ উপজেলায় ছোট-বড় ও পারিবারিকভাবে ১২ হাজার ৬২৪টি খামারে ৮৭ হাজার ৯৫৪টি গবাদিপশু প্রস্তুত করা হয়েছে। যার মধ্যে ষাঁড় ২১ হাজার ৩৮৭টি, বলদ ১৩ হজার ৮১৪টি, গাভী ১১ হাজার ২৫১, মহিষ ৩ হাজার ৫৮, ছাগল ২৭ হাজার ৬৭৫টি ও অন্যান্য পশু রয়েছে ১১টি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে কোরবানির ঈদে পশুর চাহিদা ১ লাখ ৫৮ হাজারটি। কিন্তু জেলার খামারিদের কাছেই ৮৭ হাজার ৯৫৪টি গবাদিপশু আছে জানিয়ে এ বছর ভারতীয় গরু না এলেও কোরবানির পশুর সংকট হবে না বলে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়।
ডা. আনন্দ কুমার অধিকারী বলেন, সীমান্তে মৃত্যুঝুঁকি কমাতে গরু পালনের পাশাপাশি ভারতীয় গরু সংকটের অজুহাতে কেউ যেন সিন্ডিকেট করে দেশি গরুর দাম বাড়িয়ে না দেন, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৯
আরবি/