ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

খামার থেকে গরু কেনায় অভ্যস্ত নন বরিশালের ক্রেতারা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩২ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৯
খামার থেকে গরু কেনায় অভ্যস্ত নন বরিশালের ক্রেতারা গরু দেখাশুনা করছেন এক খামারি। ছবি: বাংলানিউজ

বরিশাল: আগামী ১২ আগস্ট ঈদুল আজহা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে হিসেবে দিন যত ঘনিয়ে আসছে কোরবানির পশুকে ঘিরে খামারি থেকে শুরু করে বেপারী এমনকি ক্রেতা পর্যায়েও শুরু হয়ে গেছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চল বরিশালের গরুর খামারিরা বর্তমানে পুরো কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে শত ব্যস্ততার মধ্যেও তাদের রয়েছে নানা শঙ্কা।

বিদেশি পশুর আধিপত্য এবং ক্রেতাদের চাহিদা নিয়ে বরাবরের মতোই স্থানীয় খামারিরা রয়েছেন চিন্তায়। ফলে হাজার হাজার টাকা ব্যয়ে প্রাকৃতিক ও নিরাপদ পদ্ধতিতে মোটাতাজা করেও কোরবানিতে পশুর সঠিক দর আদৌ পাবেন কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে খামারিদের।

বরিশাল সদর উপজেলার চাঁদপুরা ইউনিয়নের চাঁদপুরা গ্রামের রাখালী অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক জাহিদুর রহমান চয়ন বলেন, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করেন বরিশালের খামারিরা। এজন্য এ অঞ্চলের গরুর মধ্যে সতেজতার একটি ছাপ সব সময় থাকে। তবে বরিশাল অঞ্চলের ক্রেতারা নারায়ণগঞ্জ কিংবা সিরাজগঞ্জের মতো সরাসরি খামারির কাছ থেকে গরু কিনতে অভ্যস্ত নন। এখানে বেপারীরা খামার থেকে গরু কিনে নেন এবং তাদের লাভের টাকা ঠিক রেখে হাটে উঠিয়ে দাম হাকেন। আর খামারিদের কাছ থেকে সরাসরি ক্রেতারা যদি গরু কেনেন তবে কিন্তু মাঝের ওই বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে না ক্রেতাদের, ফলে লাভবান হচ্ছেন তারা।

তিনি বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বরিশাল অঞ্চলের খামারির সংখ্যা বাড়ছে। যেখানে গরুর সংখ্যাও কম নয়।  আর এখানের সব খামারিরাই গরুর যত্ন নেন নিজের মতো করে। বরিশাল নদী-খাল বেষ্টিত এলাকা হওয়ায় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। উত্তরাঞ্চলের মতো গরুর রোগবালাই হয় না। তাই গরু পালন করা এখানে সুবিধা হয়। আনুষঙ্গিক খরচ মিটিয়ে একটা গরুর পেছনে যদি প্রতি মাসে খরচ বেড়েও যায়, তারপরও এখানে কৃত্রিম উপায়ে কোনো গুরু মোটাতাজাকরণ করা হয় না।

অপর এক খামারি আল আমিন বলেন, বরিশালের ক্রেতারা কোরবানির জন্য এখনো উচু-লম্বা বিদেশি বা ভারতীয় গরুর দিকে আগ্রহ বেশি দেখান। ফলে বিদেশি গরুর কদরে দেশীয় গরুর দাম পাওয়া যায় না। এতে খামারিরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। আমাদের দেশীয় স্থানীয় গরুর জাত খুবই ভালো। মাংসের গুণগত মানও ভালো।  অনেকে মনে করেন খামারিরা ইনজেকশন দিয়ে গরু মোটাতাজা করেন। কিন্তু মানুষ সুস্থ থাকার জন্য যেমন টিকা নেয়।  তেমনি পশুকে সুস্থ রাখতে টিকার প্রয়োজন হয়। এর বাহিরে খামারিরা পশুকে কোনো কিছুই দেয় না। হরমন বা স্টেরয়েড ব্যবহার করলে গরুর শরীরে শুধু পানি জমে আর এতে গরুটি দুর্বল হয়ে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। খামারিরা হাজার হাজার টাকা একটা গরুর পেছনে খরচ করে কেন এভাবে নিজের ক্ষতি ডেকে আনবেন।

তিনি বলেন, স্থানীয় খামারিদের গরুর দিকে যদি ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়ে। তবে উভয়ই লাভবান হবেন। যেমন বর্তমানে গরুর ক্ষুরা রোগের সময় চলছে। ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত একটি গরুকে হাটে তোলা হলো। তখন বিক্রেতারা যদি গরুর পায়ে কাদা লাগিয়ে রাখে তবে বোঝার কি কোনো উপায় থাকবে। আবার অনেক ক্ষেত্রে গরুর জ্বর হয়ে মারাও যাচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় খামারিদের কাছ থেকে গরু কিনলে জবাবদিহিতার জায়গা থেকে এরকম কোনো সমস্যা হওয়ার সুযোগ নেই।  

তিনি আরও বলেন, শহরের বাড়িতে যারা গরু রাখতে পারেন না। তারা কেনা গরুটি ঈদের আগের দিন পর্যন্ত খামারেই রাখতে পারছেন। এমনকি ক্রেতা যাতায়াতের টাকা দিলে বাড়িতে গরুটি পৌঁছে দেওয়া হয়ে থাকে। এজন্য ক্রেতাদের স্থানীয় খামার থেকে গরু কেনায় অভ্যস্ত হতে হবে।

তবে ক্রেতাদের মতে, খামারিদের কাছে যে গরু থাকে তার থেকে হাটে গরু বেশি থাকে। তাই হাট থেকে সাধ্য অনুযায়ী দাম মিটিয়ে গরু কেনার সুযোগ আছে। তবে অনেক সময় দামেও কম হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৯
এমএস/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।