তিনি বলেছেন, বাজেট পাসের পর সঞ্চয়পত্র নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। তাই সঞ্চয়পত্রে যাদের ৫ লাখ টাকা আছে তাদের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ কর আর এর বেশি যারা রাখবেন তাদের ১০ শতাংশ উৎসে কর দিতে হবে।
সোমবার (২৯ জুলাই) সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সঞ্চয়পত্র আমাদের একটি মহৎ উদ্যোগ। আমরা সঞ্চয়পত্র করেছি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সঞ্চয়পত্রের অপব্যবহার হচ্ছে। সঞ্চয়পত্র যাদের জন্য তারা না পেয়ে ধনীরা এ সুবিধা পাচ্ছে।
‘এজন্য শিগগির সঞ্চয়পত্র নিয়ে আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। সেখানে পাঁচ লাখের বেশি যাদের বিনিয়োগ তারা ১০ শতাংশ উৎসে কর দেবে। এর নিচে বা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ও পেনশনভোগীদের জন্য ৫ শতাংশ উৎসে কর দেবে। ’
সঞ্চয়পত্রে প্রাতিষ্ঠনিক বিনিয়োগ কত আছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে সঞ্চয়পত্র খাতে প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কত ডাটা হয় বলতে পারবো না। তবে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে গরিব বা স্বল্প আয়ের মানুষ। তাই এখাতে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে চাই। এ সুযোগ যাদের জন্য দেওয়া হচ্ছে তাদের জন্য এটা চলবে। ৫ লাখ টাকা যথেষ্ট না হলে পরবর্তীতে চিন্তা-ভাবনা করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, সঞ্চয়পত্র বিবরণীতে বেসরকারি খাতের জন্য আমরা ফিন্যান্সিয়াল টুলস নিয়ে আসবো। সেটা হলো বন্ড মার্কেট। যেখানে নিদিষ্ট অ্যামাউন্ট তারা পান সেখানেও সেটা পাবে। এটা সবার সঙ্গে আলোচনা করেই চালু করবো।
‘বন্ড চালু হলে তখন সেখানে তারা নিদিষ্ট পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করতে পারবে। তাহলে এ টাকা একবার না হাজার বার লেনদেন হবে। তবে আমাদের এমন এক সময় আসবে তখন সঞ্চয়পত্রে আর কেউ টাকা রাখবে না। ’
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বন্ড মার্কেটে বিনিয়োগ করলে গ্রাহকদের কোনো হয়রানি নেই। এর ওপর কাজ চলছে। চূড়ান্ত হওয়ার পর আমরা আপনাদের বিস্তারিত জানাবো।
‘আমি চাই মানুষ বন্ড মার্কেটে বেশি বেশি বিনিয়োগ করুক। বন্ড মার্কেটে অর্থবছরে হাজারবার লেনদেন হয়। এক্ষেত্রে অর্থনীতি আরও বড় হবে। কিন্তু সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে টাকা এক জায়গায় থেকে যায়। এখন পেনশনাররা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। তবে একটা সময় আসবে তারা নিজেরাই অর্থ সঞ্চয়পত্রে রাখবে না। কারণ তাদের অন্য জায়গায় বেটার অফার দেওয়া হবে। ’
এক প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, আমরা চাই মানুষ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ না করে ব্যাংকে বিনিয়োগ করুক। যেখানে বিনিয়োগ করলে অর্থনীতি শক্তিশালী হবে আমরা সেখানেই বিনিয়োগ নিয়ে যেতে চাই। আর সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে স্বচ্ছতা থাকে না। আমরা তো দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিতে পারি না। আমরা এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনতে ডাটাবেজ তৈরি করেছি। ডাটাবেজ দেখে নিশ্চিত হবো কে কোথায় কত টাকা বিনিয়োগ করেছে। তারপর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো।
আগে যারা বিভিন্নভাবে সঞ্চয়পত্রে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন-তাদের বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, যেহেতু বেশি বিনিয়োগ করা যাবে না-এমন কোনো আইন ছিল না; তাহলে কিভাবে তাদের আমরা শাস্তি দেবো। তবে এক্ষেত্রে তারা ধরা পড়বে অন্য আইনে। এত টাকা পেলো কই? এ জন্য তারা দুদকের জালে ধরা পড়বে।
এর আগে গত ২৯ জুন সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশের প্রস্তাব রেখে সংসদে অর্থবিল, ২০১৯ পাস হয়। যদিও এ নিয়ে সংসদের ভেতরে ও বাইরে বিরূপ সমালোচনা এবং ক্ষুদ্র আয়ের মানুষের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়।
এরই মাঝে উৎসে কর ১০ শতাংশ হার কাটাও শুরু হয়েছে। উৎসে কর বাড়ানোর ফলে এ খাত থেকে বছরে সরকারের ৩ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে বলে ওই সময় জানিয়েছিল এনবিআর।
বাজেট পাসের পর জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়, নতুন-পুরান সব সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর ১০ শতাংশ উৎসে কর বহাল থাকবে। অর্থাৎ নতুন-পুরান সবার জন্যই ১ জুলাই থেকে ১০ শতাংশ উৎসে কর চালু করা হয়েছে।
তবে চলতি মাসে এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংক আলাদা সার্কুলারে জানায়, পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ থাকলে উৎসে কর দিতে হবে না। বিনিয়োগ ৫ লাখ টাকার বেশি থাকলেই উৎসে কর ১০ শতাংশ।
সঞ্চয়পত্রের উৎসে কর নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। তবে সোমবার সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করলেন অর্থমন্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৯/আপডেট: ১৬০৭ ঘণ্টা
জিসিজি/এমএ