মানভেদে প্রতিকেজি আদায় ২০ টাকা, রসুনে ৪০ টাকা ও মুরগি প্রতিপিসে বেড়েছে ৩০ টাকা। আদা ও রসুনের দাম বাড়লেও কিছুটা কমেছে সবজির দাম।
এখনও চড়া মাছের বাজার। মাছের দাম চড়া হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল, ডাল, তেল, আটা, ময়দা, চিনি, লবণসহ অন্যান্য মুদিপণ্য।
শুক্রবার (২ আগস্ট) রাজধানীর সূত্রাপুর বাজার, শ্যামবাজার, রায়সাহেব বাজার, নয়াবাজার, সেগুনবাগিচাসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, এক সপ্তাহ পর ঈদুল আজহা। ফলে আদা ও রসুনের চাহিদা বেড়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য দু’টির দাম বেড়েছে। একইসঙ্গে দেশি ও কক মুরগির চাহিদা বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় বাজারে সরবরাহ কম, সেজন্য দাম বেড়েছে।
দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির কারণে বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়েছে। ফলে সবজির দাম কমেছে। সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমলেও সবচেয়ে বেশি কমেছে মরিচের দাম। পণ্যটির দাম কেজিতে ১০০ টাকার বেশি কমেছে। তবে ক্রেতারা এ অজুহাত মানতে রাজি নন। তাদের অভিযোগ, বাজারে তো কোনো কিছুর ঘটতি দেখলাম না। কার্যকরী বাজার তদারকি ব্যবস্থা না থাকায়, হঠাৎ পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। ফলে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষদের।
রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, আমদানিকৃত চায়না আদা বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ১৪০ টাকা। দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি। যা আগে বিক্রি হয়েছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। সে হিসেবে প্রতিকেজি আদার দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। আমদানিকৃত চায়না রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ১৬০ টাকা কেজি। আর দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ১৪০ টাকা কেজি। সে হিসেবে চায়না রসুনে কেজিতে ২০ থেকে ৪০ টাকা, দেশি রসুনে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
এছাড়া গোল মরিচ, হলুদ, মরিচের গুড়া, জয়ত্রী, এলাচ, দারুচিনির দামও চড়া। বাজারে প্রতিকেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৭০০ থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকা, জয়ত্রী দুই হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৬০০ টাকা, লবঙ্গ ৮৫০ টাকা, গোল মরিচ ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা, জিরা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, দারুচিনি ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। আর কিছুটা নিম্নমানের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।
আদা ও রসুনের দাম নিয়ে ব্যবসায়ী বলরাম দাস বাংলানিউজকে বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ দাম বেড়েছে আদা ও রসুনের। প্রতি বছর ঈদের আগে এ রকম হয়ে থাকে। কারণ ঈদে চাহিদা বেড়ে দ্বিগুণ হয়। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়তি। আমাদের কি করার আছে, বেশি দাম দিয়ে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। হঠাৎ দাম বাড়া-কমার কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তবে পেঁয়াজের দাম গত সপ্তাহের মতো রয়েছে। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা আর আমদানি করাটা বিক্রি করছি ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়।
মসলা বিক্রেতারা জানান, গত এক মাস ধরেই মসলার পাইকারি বাজার বাড়তি। পাইকারি বাজারে বাড়তি দাম হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। তবে অন্য বছরের তুলনায় বর্তমানে মসলার বাজার বেশ ভালো অবস্থানে আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে, মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে বেড়েছে দেশি ও কক মুরগির দাম। তবে ব্রয়লার মুরগি আগের সপ্তাহের মতো ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা কেজি। পাকিস্তানি কক মুরগি প্রতিপিস বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ১৮০ থেকে ২২০ টাকা কেজি। সে হিসেবে দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। দেশি মুরগির দামও বেড়েছে। প্রতিপিস দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৩২০ থেকে ৪০০ টাকায়। সে হিসেবে প্রতিপিস দেশি মুরগির দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা।
মুরগির দাম বাড়লেও অপরিবর্তিত রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। বাজার ভেদে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৫৭০ টাকা এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি।
মুরগি ব্যবসায়ী লাভলু বেপারি বাংলানিউজকে বলেন, সামনে ঈদ তাই কক ও দেশি মুরগির চাহিদা বেড়েছে। লোকজন এখন থেকে কিনে রাখছেন। ফলে চাহিদা কয়েকগুণ বেড়েছে। তবে সরবরাহ তেমন না বাড়ায় দাম বেড়েছে। বর্তমানে বাজারে প্রতিপিস দেশি মুরগি আকার ভেদে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর কক মুরগি ২২০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করছি। তবে ব্রয়লার মুরগির দাম আগের মতো ১৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা কেজি।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা গেছে, গত সপ্তাহ থেকে এ সপ্তাহে সবধরনের সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমেছে। বাজারে এখন বেশির ভাগ সবজির দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি দাম কমেছে কাঁচামরিচের। বর্তমানে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ২০০ টাকার ওপরে। বাজারে প্রতিকেজি ঝিঙা, ঢেঁড়স, পেঁপে, পটল, কচুরলতি ৪০ টাকা, বেগুন, করলা, কাঁকরোল, উস্তা, বরবটি ৫০ টাকা, লাউ আকার ভেদে প্রতিপিস ৩০ থেকে ৫০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া প্রতিপিস ২০ থেকে ৫০ টাকা, আলু ২০ থেকে ২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এছাড়া বাজারে প্রতিআটি লালশাক, মুলাশাক, কলমিশাক ২৫ টাকা, পুঁইশাক, লাউশাক ৩০ টাকা, ধনেপাতা কেজি ২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বন্যার পানি ছড়িয়ে পড়ায় সব জায়গায় এখন মাছ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হতে দেখা গেছে সবধরনের মাছ। খুচরা বাজারে তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে পাঙাশ মাছ। রুই মাছ ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা, কাতল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, নলা ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, পাবদা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, টেংরা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, শিং ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, বাইলা ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, আইড় ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, বোয়াল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা ও চিতল বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি।
আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল ও অন্যান্য মুদিপণ্য। বাজারে নাজির শাইল চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, মিনিকেট ৫৫ থেকে ৫২ টাকা, স্বর্ণা ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা, বিআর-২৮ নম্বর ৩৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এছাড়া খোলা আটা ২৬ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা, লবণ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, পোলাউর চাল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা, খোলা ময়দা ২৮ টাকা, চিনি ৫২ টাকা, ছোলা ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, খেসারির ডাল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, মসুর ১০০ থেকে ১১০ টাকা, বুটের ডাল ৩৮ থেকে ৪০ টাকায় কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০১৯
জিসিজি/আরবি/