রোববার (৪ আগস্ট) রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইডব্লিউএমজিএল মিলনায়তনে দৈনিক কালের কণ্ঠ আয়োজিত ‘ফুটওয়্যার: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় বিশিষ্টজনেরা এ মতামত দেন।
গোলটেবিল আলোচনায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল হালিম বলেন, অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি বেসরকারি শিল্প।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, দু’একটি সমস্যার কারণে দেশের সম্ভাবনাময় পাদুকাশিল্প টেকসই অবস্থায় যেতে পারবে না, এটা হতে পারে না। আমাদের নিজেদের সমস্যা চিহ্নিত করে এর সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। এ শিল্পে দক্ষ জনবল দরকার। এজন্য আমরা টেকনোলজি ইনস্টিটিউট করতে আগ্রহী। বলতে পারি বেজার পক্ষে যা যা করার তার সবটাই করতে চাই।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ওবায়দুল আজম বলেন, এ শিল্পের পরিবেশগত সমস্যার সমাধান না হলে বিশ্ববাজারে যাওয়াটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্জ্য পরিশোধন নিয়ে, চামড়াতে কত কম পরিমাণ পানি দেওয়া যায় বা লবণ কমানোর বিষয় নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে লেদার স্টুডিও, প্রশিক্ষণ একাডেমির জন্য জমি খোঁজার কাজ চলছে। আগামী ২০২১ সালেই যেন এ শিল্প থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় আসে এ লক্ষ্য সামনে নিয়ে সরকার কাজ করছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, চামড়াশিল্প রফতানির জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে হবে। সবার আগে প্রয়োজন আন্তর্জাতিক পরিবেশগত মানদণ্ড রক্ষা করা, লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের সঙ্গে কাজ করা।
তিনি আরও বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর তারা (পোশাক খাত) আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে সবার সমন্বয়ে একটা ভালো অবস্থানে এসেছে। এভাবে এগোতে থাকলে আরএমজি সেক্টরের মতো ভালো অবস্থানে যাবে পাদুকাশিল্প। বায়াররাও লাইন ধরে চলে আসবে দেশে।
জেনিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির খান বলেন, এক সময় বিশ্বের নামি-দামি ব্র্যান্ডগুলো আমাদের এখান থেকে পণ্য আমদানি করতো। এখন তারা আসতে চায় না। আমাদের যুবসম্পদ থাকা সত্ত্বেও প্রতিটা কারখানা এখনো লোকসানে আছে। এখান থেকে উঠতে হলে নিজেদের মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে। রফতানির ক্ষেত্রে সব বাধা দূর করতে হবে।
বেঙ্গল লেদার কমপ্লেক্সের চেয়ারম্যান টিটু সুলতান বলেন, অনেক আশা নিয়ে উদ্যোক্তারা এ শিল্পে বিনিয়োগ করেছেন, অথচ যখন এগিয়ে যাবার সময় তখনই বাধাগ্রস্ত হতে হচ্ছে। আমাদের হাজারীবাগ থেকে সাভারে পাঠানো হলো কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইপিটি) সচল না করেই। এত টাকা খরচ করা হলো। অথচ সেই সিইপিটিই যদি না সচল হয় তাহলে কেমনে হবে। চামড়া শিল্পনগরীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিসিককে। তারা এ বিষয়ে মোটেও দক্ষ নয়। আমরা চাই শিল্প বাঁচাতে হলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চামড়া শিল্পনগরীকে মনিটরিং করা হোক। বাংলাদেশ স্পোর্টস সু’স ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য রিয়াদ মাহমুদ বলেন, আমরা এখন শুধু আরএমজি শিল্পের ওপর আছি। এ ধারণা পরিবর্তন করতে হবে। পাদুকাশিল্পের সম্প্রসারণে দক্ষ জনবল তৈরিতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। আবার উদ্যোক্তাদেরও ভালো মানের পণ্য তৈরি করতে হবে। এমনটা করতে পারলে বায়ারদের পেছনে দৌঁড়াতে হবে না। তারাই আমাদের এখানে আসবে।
দৈনিক কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলনের সভাপতিত্বে গোলটেবিল আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন দৈনিকটির নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা কামাল। কি-নোট উপস্থাপন করেন ওরিয়ন ফুটওয়্যারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন মোল্লা। আরও বক্তব্য রাখেন ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত উল্লাহ, বাংলাদেশ পাদুকা প্রস্তুত সমিতির দপ্তর সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন, ওয়াকার ফুটওয়্যারের চিফ অপারেটিং কামরুল হাসান, ফারস্কিন লেদারটেকের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ইজাবুল হক প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০১৯
ইএআর/এইচএডি/এইচএ/