বুধবার (০২ অক্টোবর) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) মিলনায়তনে ‘ক্রাউডফান্ডিং এবং বাংলাদেশে এর প্রভাব’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচক এবং অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্যে উঠে আসে এসব কথা।
ক্রাউডফান্ডিং হচ্ছে একটি প্রকল্প বা উদ্যোগ, ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বৃহৎ সংখ্যক মানুষের কাছ থেকে সামান্য কিছু অর্থ উত্থাপনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করা।
বিআইবিএম-এর নির্বাহী কমিটির সভাপতি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, প্রকল্পের শুরুতে অর্থায়ন ঘাটতি মেটাতে ক্রাউড ফান্ডিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এ ধরনের অর্থায়নে কিছু ঝুঁকি এবং সমস্যা রয়েছে। এমনকি ক্রাউডফান্ডিং পোর্টালে হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি রয়েছে।
‘ক্রাউড ফান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে মূল বিষয় বিশ্বস্ততা। যা খুব সহজে অর্জন করা সহজ নয়। এখনও এ বিষয়ে কোনো রেগুলেশন তৈরি করা হয়নি। তবে এখনই উপযুক্ত সময় ক্রাউড ফান্ডিং বিষয়ে নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো। ’
বৈঠকে ‘ক্রাউড ফান্ডিং এবং বাংলাদেশে এর প্রভাব’ শীর্ষক প্রবন্ধ উত্থাপন করেন বিআইবিএম-এর অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে তিনটি মডেলে ক্রাউড ফান্ডিং করা যেতে পারে। প্রথমত রিস্ক বেজড, দ্বিতীয়ত পিয়ার টু পিয়ার, তৃতীয়ত ল্যান্ডিং বেজড। ক্রাউড ফান্ডিংয়ের জন্য অর্থদাতা এবং অর্থগ্রহীতার মাঝখানে থাকবে প্ল্যাটফর্ম।
উদাহারণ হিসেবে ড. তাজুল বলেন, আজকের আলোচনায় অংশগ্রহণকারী সবাই মিলে একটি প্রকল্প হাতে নিলাম। আমাদের হাতে কোনো টাকাই নেই। কিন্তু আমরা ব্যবসা করতে চাই। আমরা নিজেরাই একটি প্ল্যাটফর্ম হতে পারি অথবা আমরা কোনো প্রাইভেট প্ল্যাটফর্মের কাছে যেতে পারি। এক্ষেত্রে ব্যাংকও প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করতে পারে। দুই পার্টির মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করাতে।
তিনি বলেন, সরকারের মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ঋণ না নিয়ে ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনসহ সব স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে পারে।
অনুষ্ঠানে অংশীজনেরা বলেন, এটি একটি শুভ উদ্যোগ। তবে বিনিয়োগকারীদের আমানতে নিশ্চয়তা দিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে রেগুলেশন নিশ্চিত করতে হবে। জনগণকে সচেতন করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের রিটার্নের বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে থাকলে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হয়ে উঠবে।
অনুষ্ঠানে বিডি-ভেঞ্চার লিমিটেডের ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজার মাজহার ই হোসেন তাদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে কীভাবে অর্থদাতা এবং গ্রহীতারা যোগসূত্র স্থাপন করে তার একটি ধারণা দেন।
চায়নার ‘জিমুবক্স’ নামে একটি প্ল্যাটফর্মের উদাহরণ দিয়ে ড. তাজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক নিজেই যখন কোনো প্রকল্পে অর্থায়ন করে। তখন দেখা যায় ব্যাংকের প্রতিনিধিরাই সেই প্রকল্প মনিটরিং করছে। আমাদের দেশেও ব্যাংক ইনভলভ হয়ে কাজ করতে পারে।
গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএম-এর মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মহা. নাজিমুদ্দিন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইবিএম-এর অধ্যাপক এবং পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন ও পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জী।
বক্তব্য দেন, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএম-এর সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএম-এর সাবেক সুপারনিউমারারি অধ্যাপক মো. ইয়াছিন আলি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৯
এসই/এমএ