বলছিলাম বগুড়ার গ্রীন এগ্রো ফার্মের পরিচালক মো. রেজওয়ানুল ইসলামের (২২) কথা। যিনি অর্জন করেছেন বছরের শ্রেষ্ঠ তরুণ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ক্যাটাগরিতে ‘১৪তম সিটি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা-২০১৮’ পুরস্কার।
বগুড়ার ধুনট উপজেলায় রেজওয়ানুলের গ্রামে কথা হয় তার সঙ্গে।
তিনি বাংলানিউজকে জানান, সিটি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা-২০১৮ এর জরিপে শ্রেষ্ঠ তরুণ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হওয়ায় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার আর্থিক পুরস্কারের পাশাপাশি ক্রেস্টও দেওয়া হয় তাকে।
রেজয়ানুল বগুড়ার ধুনট উপজেলার নিমগাছী ইউনিয়নের বেড়েরবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মো. আতাউর রহমানের ছেলে। পরিবারে রয়েছে বাবা-মা, ভাই-বোন। ভাই-বোনদের মধ্যে ছোট রেজয়ানুল ইসলাম ছোটবেলা থেকেই ছিলেন কৃষিপ্রেমি।
তিনি জানান, ঢাকায় ২০১৬ সাল থেকে তিনি ছাদ বাগান নিয়ে কাজ করা শুরু করেন। একইসঙ্গে বাগানগুলোতে সার সরবরাহ করার জন্য নিজ গ্রামে গ্রীন এগ্রো ফার্মে উৎপাদন শুরু করেন ট্রাইকো কম্পোস্ট সার।
ছাদ বাগানের বিষয়ে তরুণ এ উদ্যোক্তা বাংলানিউজকে জানান, গণমাধ্যমে ঢাকা শহরের বায়ু ও ভেজাল খাদ্য নিয়ে নানা প্রতিবেদন দেখেই তার মনে ইচ্ছে জাগে কিছু করার। ঢাকায় গাছের স্বল্পতার কারণে ভবিষ্যতে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এ ভাবনা থেকে প্রকৃতিতে ভারসাম্য ঠিক রাখা ও সেবামূলক কাজ করাই ছিল তার লক্ষ্য। ফলমূল ও শাক-সবজিতে ফরমালিন ও বিষাক্ত রাসায়নিক সার প্রয়োগে মানব শরীরে নানা রোগের সৃষ্টি করছে। এগুলো নির্মূলের চিন্তা তার অনুপ্রেরণা।
জানা যায়, বগুড়ায় গ্রীন এগ্রো ফার্ম থেকে প্রতি বছর প্রায় ১০০ টন সার বিক্রি করা হয়। শুধু ঢাকার ছাদ বাগানগুলোতেই নয় রেজওয়ানুলের নিজ গ্রামসহ ও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার কৃষকরা কিনে নেন ট্রাইকো কম্পোস্ট সার। তার ফার্মের ট্রাইকো কম্পোস্ট সারসহ ভার্মি কম্পোষ্ট ও ট্রাইকোডারমা কম্পোষ্ট সার মার্কেটিং করেন তিনি। এ ফার্মে রয়েছে নারী-পুরুষসহ ৫ জন শ্রমিক। পুরুষ শ্রমিক ৩ জন প্রতিবন্ধী।
রেজওয়ানুল জানান, ঢাকার রামপুরার বনশ্রীতে অফিস রয়েছে তার। শুরুতে বাড়ি বাড়ি ঘুরে মানুষদের বোঝাতেন ছাদ বাগানের গুরুত্ব। এখন তার ফার্মের আওতায় ঢাকায় রয়েছে ২০০টির মতো ছাদ বাগান।
ছাদ বাগানগুলোতে পেয়ারা, আম, ডালিম, মালটা, পেঁপে, তরমুজ, বরইসহ নানা ফলের চাষ করা হয়। এছাড়াও মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙা, টমেটো, মরিচ, আলু, পেঁয়াজ, বেগুন চাষ করা হয়।
তিনি জানান, গাইবান্ধা জেলার কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা করেছেন রেজওয়ানুল। নিজ গ্রাম বেড়েরবাড়ি সিনিয়র আলিম মাদরাসার ৮ম শ্রেণিতে পড়ালেখার সময় থেকেই সে ১০ শতক পরিমাণ জায়গার একটি পুকুরে মাছ চাষ করে নিজের খরচ নিজেই চালাতেন। পুকুর লিজ নিয়ে মাত্র ১৬ হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে মাছের ব্যবসা শুরু করেছিলেন। এরপর ২০১২ সালে ফার্ম শুরু করেন ১টি গরু দিয়ে। এখন তার ফার্মে রয়েছে ৬-৭টি গরু।
মাছ চাষের মাধ্যমে রেজওয়ানুল হয়ে উঠেছেন এক সফল মাছ ব্যবসায়ী। এখন তার ৪টি পুকুর রয়েছে। প্রতি ৪মাস পরপর গড়ে ২০ মণ মাছ বিক্রি করা হয় পুকুরগুলো থেকে। এগুলোতে বিশেষ করে রুই, কাতলা, মৃগেল ইত্যাদি মাছ চাষ করা হয়।
তরুণ এ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বাংলানিউজকে জানান, ট্রাইকো কম্পোস্ট সার উৎপাদনে তার গ্রীন এগ্রো ফার্ম প্রতিষ্ঠানটির কাঠামো তৈরিতে খরচ হয়েছে মোট সাড়ে ৪ লাখ টাকা। তার বগুড়ার ফার্মে এখন কর্মরত রয়েছে নারী-পুরুষসহ ৫ জন ও ঢাকায় ২ জন।
তিনি জানান, সার উৎপাদন, পুকুর ও গরুর খামার থেকে তার মাসিক গড় আয় প্রায় ১ লাখ টাকা। আর যারা কাজ করছেন ফার্মে তাদের বেতন সাড়ে ৪ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।
তরুণ এ উদ্যোক্তাকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে ধুনট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ) বগুড়া।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১৯
কেইউএ/এইচএডি