এদের মধ্যে অন্যতম মোহাম্মদ নাহিন আহমেদ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা সম্পন্ন করে ২০১৩ সাল থেকে মোটরসাইকেল তৈরির কাজ করছেন নিপুণ হাতে। তিনি ওই ফ্যাক্টরি ম্যানেজার (প্রোডাকশন প্ল্যানিং অ্যান্ড কন্ট্রোল) হিসেবে কর্মরত।
আরেক মেধাবী তরুণ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি (নারায়ণগঞ্জ) শিপ বিল্ডিংয়ের ওপর ডিপ্লোম সম্পন্ন করেছেন। পরে সিঙ্গাপুর থেকে হাইয়ার ডিপ্লোমা করেছেন মেরিন অ্যান্ড অপসর টেকনোলজির ওপর। ২০১২ সাল থেকে সিঙ্গাপুরে সাড়ে চারবছর জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। এরপরে ২০১৮ সাল থেকে হোন্ডা কারখানায় সহকারী প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি।
নজরুল বলেন, আমি মোটরসাইকেলের মূল ফ্রেম ও সুইং আর্মসহ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্রেম তৈরি করি। ফ্রেম তৈরির কাঁচামাল ভারত থেকে আসে। টেকনোলজির বিষয়ে জাপান এক্সপার্ট প্রশিক্ষণ দেয়। বাকি কাজগুলো আমাকে করতে হয়। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কারখানায় মোটরসাইকেল তৈরির জন্য বিভিন্ন ধরনের সেকশন রয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম ওয়েলডিং, পেইন্টিং , অ্যাসেম্বল, ভেহিক্যাল কোয়ালিটি, পার্টস কোয়ালিটি, মেটারিয়াল সার্ভিস ও কাস্টমার সার্ভিস সেকশন। এসব সেকশনে কাজ করছেন ৫০০ জন বাংলাদেশি মেধাবী তরুণ। নামমাত্র হাতে গোনা কয়েকজন জাপানি রয়েছেন। বাকি সব কাজ হচ্ছে বাংলাদেশি তরুণদের হাতের স্পর্শে।
আরেক স্বপ্নবাজ সাকিব মাহমুদ মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর বিএসসি করেন ২০১৪ সালে। তিনি ওই ফ্যাক্টরিতে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (অয়েল শপ) হিসেবে কাজ শুরু করেন। মোটরসাইকেলের চেচিজ উৎপাদন করাই তার অন্যতম কাজ। মানবদেহে যেমন কংকাল ঠিক তেমনিই মোটরসাইকেলে চেচিজ। চেচিজে ফুয়েল ট্যাংক, ইঞ্জিন থেকে শুরু করে সবকিছুই বসে। মোটরসাইকেলের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্টস তৈরি করছেন তিনি। সাকিব মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, সবাই এখানে খুশি মনে কাজ করেন। মোটরসাইকেলের সেলিং ও উৎপাদনে হোন্ডা নাম্বার ওয়ান। সুনামের সঙ্গে এই জাপানি প্রতিষ্ঠানে কাজ করা গর্বেরও।
মুন্সিগঞ্জে ২৫ একর জমির ওপর প্রায় ২৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে যৌথভাবে এই ফ্যাক্টরি গড়ে তুলেছে হোন্ডা ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন। প্রাথমিকভাবে এই ফ্যাক্টরিতে বছরে এক লাখ মোটরসাইকেল উৎপাদন করছে। তবে সামনে বছরে দু’লাখ মোটরসাইকেল উৎপাদনের তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেডের ফ্যাক্টরির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিমিহিকো কাতসুকি বাংলানিউজকে বলেন, হোন্ডা ফ্যাক্টরি মূলত বাংলাদেশি তরুণদের ওপর নির্ভর করেই গড়ে উঠেছে। সবাই একদিকে যেমন মেধাবী অন্যদিকে কর্মঠও। ফলে আমরা এই ফ্যাক্টরিতে দ্রুত সাফল্য পেয়েছি। সামনে এই ফ্যাক্টরিকে নিয়ে নানা পরিকল্পনা ও উদ্যোগ রয়েছে। এসব উদ্যোগ বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়ারদের হাতেই সাফল্য পাবে। মাত্র নয় থেকে ১০ মাসের মধ্যে এই (হোন্ডার) ফ্যাক্টরি উৎপাদন কাযর্ক্রম শুরু করেছে। বছরে দু’লাখ মোটরসাইকেল তৈরি করা যাবে এখানে। এই সাফল্যকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে সরকার।
বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেডের ফ্যাক্টরি প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এই মোটরসাইকেল কারখানা একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে। বাংলাদেশে কম সময়ে ব্যবসা শুরু করা যায়। আমি মনে করি, অন্য জাপানি যে কোম্পানিগুলো আছে তারাও হোন্ডার দেখাদেখি উৎসাহিত হয়ে বিনিয়োগ করবে। অন্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোও আসবে। আমি মনে করি বিশ্বের অন্যান্য দেশের থেকে বাংলাদেশি তরুণেরা অনেক মেধাবী। দেশি তরুণদের হাত ধরে বিদেশি কোম্পানিগুলো আরও সাফল্য পাবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০১৯
এমআইএস/এএটি