বিসিক সূত্রে জানা যায়, আব্দুল আলী নামে স্থানীয় এক উদ্যোক্তা বিসিক শিল্পনগরীর শুরুর দিকে ফার্নিচার প্রক্রিয়াজাত ও উৎপাদনের জন্য বিসিকের ‘বি-৩৮’ ও ‘বি-৩৯’ নম্বর প্লটের জন্য ‘মর্ডান ফার্নিচার অ্যান্ড ‘স’মিল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিবন্ধন করেন এবং প্লট বরাদ্দ পান। প্রতিষ্ঠানটিকে ফার্নিচার প্রক্রিয়াজাত ও উৎপাদনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হলেও অনুমোদন না নিয়ে করাতকল স্থাপন করে।
অন্যদিকে, বনবিভাগের বিধিমালা অনুযায়ী সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে কোনো করাতকল স্থাপন করা যাবে না বলা হয়েছে। এই শিল্পনগরীর ২ কিলোমিটার দূরে বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক ও সংরক্ষিত বন রয়েছে। সেজন্য স্থানীয় বনবিভাগ করাতকল স্থাপনে আপত্তি জানায়। বিপরীতে বনবিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনকে বিবাদী করে উচ্চ আদালতে রিট আবদেন করেন আব্দুল আলী।
নিয়ম বহির্ভূতভাবে পরিবেশের ক্ষতি ও বিসিকের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নষ্টের অভিযোগে বিসিক কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানটিকে একাধিকবার নোটিশ করলেও কোনো উত্তর না দিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গাছ রেখে বিসিকের আশপাশের রাস্তা দখল করে রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। যার ফলে রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাজে ব্যাঘাত ঘটছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আব্দুল আলীর নামে বিসিকে আরও দু’টি শিল্প ইউনিট বরাদ্দ রয়েছে। নিজের নামে ইউনিট বরাদ্দ নিয়ে বিসিকের অনুমোতি ছাড়া নিয়মবহির্ভূতভাবে তা অন্যকে ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিসিকের এস-১৭ ও ১৮ নম্বর প্লট ‘শেখ সন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামে নিজের পরিবারের এক সদস্যের নামে বরাদ্দ পান আব্দুল আলী। সেই প্লটটি (এস-১৬ নম্বর) মদিনা প্লাসটিক নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিয়েছেন তিনি।
মদিনা প্লাক্টিক নামের প্রতিষ্ঠানটি পুরাতন প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাত করলেও তাদের পরিবেশ ও শব্দ দূষণরোধের ব্যবস্থা নেই। বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করা পুরাতন প্লাস্টিক আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। আশপাশের শিল্প ইউনিটের সামনে ময়লা-আবর্জন ছড়িয়ে রাখা ও শব্দ দূষণের জন্য সেসব কারখানায় কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। প্রতিষ্ঠানকে বিসিকের পক্ষ থেকে বারবার সতর্ক করলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
জানা যায়, মদিনা প্লাস্টিকের মালিক সজল মিয়া স্থানীয় না হওয়ায় তিনি মডার্ন ফার্নিচার অ্যান্ড ‘স’মিলের মালিক আব্দুল আলীর ছত্রছায়ায় এসব কাজ করছেন।
জানতে চাইলে সজল মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের পরিবেশের ছাড়পত্র নেই এটা সত্য, শিগগিরই তা করে নেবো। আব্দুল আলীর ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ওনি আমার চাচা হন, নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে এ প্লট ব্যবহার করছি।
এ ব্যাপারে আব্দুল আলী বলেন, বিসিক শিল্পনগরীতে করাতকল করার অনুমোদন না থকলে আমি কিভাবে করলাম? তবে এ বিষয়ে বনবিভাগ আপত্তি জানানোয় আমি হাইকোর্টে রিট করেছি। হাইকোর্ট আমার পক্ষে রায় দিয়েছেন। সুতরাং আমাকে অবৈধ বলার সুযোগ নেই। তবে প্লট ভাড়া দেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে কথা হয় পরিবেশ অধিদফতরের মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বদরুল হুদার সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বিসিক শিল্পনগরীতে ‘স’মিল করার কোনো নিয়ম নেই, পরিবেশ ও বনের বিধান অনুযায়ী এ এলাকায় করাতকল বসানো যায় না। এজন্য আমরা তাকে নোটিশ করেছিলাম, কিন্তু তিনি আমাদের একটি হাইকোর্টের রায়ের কপি দিয়ে চিঠি দিয়েছেন। সাধারণ অর্থে এ রায় কার্যকর হওয়ার কথা নয়।
বিসিক মৌলভীবাজারের শিল্পনগরী কর্মকর্তা শাহনেওয়াজ শাওন বলেন, মর্ডান ফার্নিচার অ্যান্ড ‘স’মিলকে আমরা ফার্নিচার তৈরির অনুমোদন দিয়েছিলাম। তিনি এখন করাতকল বসিয়েছেন, যা অবৈধ। আমরা তাকে এসব বিষয়ে নোটিশ দিয়েছি। তিনি কোনো উত্তর দিচ্ছেন না।
তিনি আরও বলেন, মদিনা প্লাস্টিক এখানকার পরিবেশের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। উচ্চ শব্দ করে মেশিন চালানো থেকে ময়লা-আবর্জনা ফেলা পর্যন্ত সব নিয়ম অমান্য করছে প্রতিষ্ঠানটি। এর বাইরে মর্ডান ফার্নিচার অ্যান্ড ‘স’মিলের মালিক তার অন্যে একটি প্লট এ প্রতিষ্ঠানকে বিসিকের নিয়ম না মেনে ভাড়া দিয়েছে বলে আমরা জেনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৯
ওএইচ/