সিলেটের বাজারে এক কেজি আঙুর যেখানে ২২০ টাকা, সেখানে পেঁয়াজ ২৩০ টাকা। আর গ্রামের বাজারে এককেজি পেঁয়াজ ২৬০ টাকা দরে বিক্রির খবর পাওয়া গেছে।
পেঁয়াজের বাজার অস্থির হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চোরাকারবারিরাও নজর দিয়েছে এ পণ্যে। সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে এখন টনে টনে পেঁয়াজের চালান আসছে। সিলেটের সীমান্ত পথে আসা পেঁয়াজের চোরাচালান চলে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকার আড়তে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) অভিযানে ভারত থেকে আসা সাত টনের অধিক পেঁয়াজের চালান ধরা পড়ার পর বিষয়টি নজরে আসে সবার। যদিও সম্প্রতি সময় সীমান্ত দিয়ে পেঁয়াজ চোরাচালানের বিষয়টি লোকমুখে শোনা গেলেও আইন প্রয়োগকারী কোনো ইউনিট-ই তা নিশ্চিত হয়নি!
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) র্যাবের অভিযানে সিলেট-তামবিল সড়কের নগরীর উপকন্ঠ শাহপরান থানাধীন বটেশ্বরে পেঁয়াজের চালান ধরা পড়ার পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। পেঁয়াজ চোরাকারবারী ও মজুদদার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে শুরু করেছে র্যাব-৯।
সীমান্তরক্ষী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে আসা পেঁয়াজের চালান ট্রাকভর্তি করে প্রকাশ্যে মহাসড়ক দিয়ে দুই থানা (গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর) এলাকা ডিঙিয়ে কিভাবে নগরীর উপকণ্ঠে পৌঁছালো- এ নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, এতদিন মাদকদ্রব্য, বিড়ি-সিগারেট, গরু, সুপারি, কসমেটিকস ও ওষুধ সামগ্রী চোরাচালানের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে এলেও পেঁয়াজের চালান কখনও ধরা পড়েনি। এবার চোরাচালানের তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে পেঁয়াজ।
র্যাবের কর্মকর্তারা জানান, পেঁয়াজ চোরাচালানের বিষয়টি ওয়াকিবহাল হয়ে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার অভিযান চালায় র্যাব। এদিন বিকেলে র্যাব-৯’র ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর সৌকাতুল মোনায়েমের নেতৃত্বে সিলেট-তামাবিল সড়কে বটেশ্বর বাজারে এলাকায় পেঁয়াজভর্তি একটি ট্রাক জব্দ করার পর র্যাব নিশ্চিত হয় পেঁয়াজের এ চালানটি ভারত থেকে অবৈধভাবে নিয়ে আসা হয়েছে। এ চালানটি রাজধানী ঢাকার আড়তে যাওয়ার কথা ছিলো।
জব্দ করা চালানে ৭ হাজার ২০০ কেজি পেঁয়াজ ছিল। যা বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এসময় ট্রাকে থাকা দু’জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা চোরাকারবারী নয় বলে র্যাবকে জানায়। তবে তারা এ চোরাচালানের সঙ্গে যুক্তদের সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন র্যাবকে। এরই ভিত্তিতে চোরাকারবারী ও মজুতদার সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে র্যাব।
অভিযানে আটকরা হলেন-সিলেট গোয়াইনঘাট উপজেলার ভিতরাখেন এলাকার আব্দুল হকের ছেলে লায়েছ উদ্দিন ও রাজশাহীর বোয়ালীয়া উপভাদ্রা এলাকার আরমান আলীর ছেলে মীরাজ আলী।
র্যাব-৯’র এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীম বাংলানিউজকে বলেন, পেঁয়াজের চালানটি তারা মজুদ করার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলো। যাতে পেঁয়াজের বাজার আরও অস্থিতিশীল করা যায়। পর্দার অন্তরালে থাকা বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টাকারীদের খোঁজে বের করতে মাঠে কাজ করছে র্যাব। রাতে পেঁয়াজের চালানসহ আটকদের মামলার মাধ্যমে শাহপরাণ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেটে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে ১৫ ব্যাপারী। সম্প্রতি নগরের কালিঘাট পেঁয়াজের পাইকারি বাজারে অভিযানে যেয়ে জেনেছে জেলা প্রশাসনও। এসব ব্যাপারীরা সীমান্তের বিভিন্ন স্থান দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি করে ব্যবসায়ীদের নিয়ে কমিশনে বিক্রি করান।
নগরীর কালিঘাটের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে দেশের বাজারে পেঁয়াজ সঙ্কট সত্ত্বেও সিলেট সীমান্ত দিয়ে কিছুদিন যাবত ভারত থেকে চোরাই পথে পেঁয়াজ আসছে। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে আসার পর এসব পেঁয়াজের চালান কোথায় যায়, কোনো হদিস মিলতো না।
বাংলাদেশ সময়: ০৫২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৯
এনইউ/ওএইচ/