মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সকালে কক্সবাজারের একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সাধারণ সভায় মিল মালিকরা এ কথা বলেন।
সভায় সমিতিটির সভাপতি নুরুল কবিরের সভাপতিত্বে সংগঠনের সহ সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম, আফতাব হোসেন, মাস্টার আব্দুল কাদের, এম কায়সার ইদ্রিস, মো. ফজলুল হক, ওমর ফারুক মিঠু, সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সভাপতি নুরুল কবির বলেন, বর্তমানে তিন লাখ মেট্রিক টনের উপরে লবণ উদ্বৃত্ত। অথচ সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। এছাড়া কিছু অসাধু মিল মালিক আমদানির চাপ সৃষ্টি করে লবণের আড়ালে ক্ষতিকর সোডিয়াম সালফেট নিয়ে আসছে। যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এই সোডিয়াম সালফেটে বাজার সয়লাবও হয়ে গেছে। বন্ড লাইসেন্স, কাস্টিং সল্ট ইত্যাদি নামে লবণ আমদানি করছিল একটি শ্রেণি। আমাদের কঠোর অবস্থানের কারণে এসব ক্ষতিকর লবণ আমদানি বন্ধ হয়েছে।
তিনি লবণের জাতীয় চাহিদা নিরূপণে সবাইকে এক টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা সব লবণ ব্যবসায়ী ঐক্যবদ্ধ হলে এই শিল্পকে বাঁচানো সম্ভব। ঘরের সমস্যার সমাধান ঘরেই চাই।
সভায় জানানো হয়, দেশের বাজারে এখন লবণের কোনো সংকট নেই। অথচ সোমবার (১৮ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে এই লবণ নিয়ে ঘটে গেছে তুঘলকি কাণ্ড। শুধু সিলেট নয়, পুরো দেশজুড়েই একটি অসাধু ব্যবসায়ী চক্র গুজব ছড়িয়ে ফায়দা লুটে নেওয়ার চেষ্টা করছে। সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে ফায়দা লুটছে একটি চক্র। তবে রাতেই ওই চক্রকে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সভায় এসব বিষয় নিয়ে সাধারণ ক্রেতাদের বিভ্রান্ত না হওয়ারও আহবান জানানো হয়।
মিল মালিকরা বলেন, কালোবাজারি, উৎপাদিত লবণের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া ও বিষাক্ত সোডিয়াম সালফেটের কারণে ধ্বংস হচ্ছে দেশীয় লবণ শিল্প। মাঠে ও মিলে পড়ে রয়েছে অন্তত ছয় লাখ মেট্রিক টন অবিক্রিত লবণ। কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে কালোবাজারিদের লবণ আমদানির কারণে দেশীয় লবণ খাত মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছে না। পিছিয়ে যাচ্ছে দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ খাত। দরপতন অব্যাহত থাকলে সামনের মৌসুমে লবণ চাষিরা মাঠে যাবেন কি-না সন্দেহ রয়েছে।
লবণ মিল মালিক, ব্যবসায়ী, চাষিসহ সংশ্লিষ্টদের দাবি, দেশীয় লবণ শিল্প বাঁচাতে সব লবণ আমদানি বন্ধ করতে হবে। ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে না পারলে মাঠে ফেরানো যাবে না চাষিদের। পরনির্ভর হবে দেশ। বাড়বে বেকারত্ব। সোডিয়াম সালফেটের আড়ালে যারা ইন্ডাস্ট্রিয়াল সল্ট, সোডিয়াম ক্লোরাইড আমদানি করেন, তাদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
মাঠপর্যায়ে প্রতি বস্তা লবণ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে। সে হিসেবে কেজিতে পড়ছে মাত্র সাড়ে তিন বা চার টাকা। যা দিয়ে মজুরি বা উৎপাদন খরচও উঠছে না। অথচ বাজারে প্যাকেটজাত লবণ বিক্রি করা হয় প্রায় ৪০ টাকা কেজি।
লবণ মিল মালিকদের একটি সূত্র জানায়, অপরিশোধিত লবণ পরিশোধিত তথা খাবার উপযুক্ত ও বাজারজাত করতে কেজিতে সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় টাকা খরচ পড়ে। এ হিসেবে এক কেজি লবণের দাম হওয়ার কথা সাড়ে পাঁচ টাকার নিচে। কিন্তু বাজারে ভোক্তারা কিনছেন প্রায় ৪০ টাকা দিয়ে। লবণ চাষিদের অবহেলা, রাঘববোয়াল ও শিল্প কারখানার মালিকদের প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দরদি মনোভাবের কারণে এমনটি হচ্ছে বলে ধারণা সাধারণ মানুষের।
নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে লবণের মৌসুম। ইতোমধ্যে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কক্সবাজারের লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্প কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৯-২০ মৌসুমে বিসিকের চাহিদা ১৮ লাখ ৪৯ হাজার মেট্রিক টন লবণ। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন।
২০১৮-১৯ মৌসুমে কক্সবাজার জেলায় উৎপাদনযোগ্য লবণ জমির পরিমাণ ছিল ৬০ হাজার ৫৯৬ একর। চাষির সংখ্যা ছিল ২৯ হাজার ২৮৭ জন। আর গেলো মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ লাখ মেট্রিক টন লবণ। এর বিপরীতে উৎপাদন হয়েছিল ১৮ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন। যা বিগত ৫৮ বছরের লবণ উৎপাদনের রেকর্ড ছাড়িয়েছিল।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মো. আবু হানিফ ভূঁইয়া, মো. শহিদুজ্জামান শরিফ, মো. কামাল দেওয়ান, মো. আবুল কালাম আজাদ, এসএম ইজ্জত আলী, মীর আহম্মদ, সাদেক মোহাম্মদ, এমএ তাহের, গাজী সাব্বির আহমদ, অহিদুস সামাদ হেলাল, মো. কুতুব উদ্দিন, ফরিদুল ইসলাম, শেখ ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, অছিয়র রহমান চেয়ারম্যান, জাফর আহম্মদ, মো. কামাল শরীফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৯
এসবি/টিএ