ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পাবনার শুঁটকি বিদেশে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৯
পাবনার শুঁটকি বিদেশে মাছ প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। ছবি: বাংলানিউজ

পাবনা: শুঁটকি মাছের ব্যবসায় পাবনার গ্রামীণ অর্থনীতি ও জীবনযাত্রায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এখানকার শুঁটকি মাছ সুস্বাদু হওয়ায় দেশে-বিদেশে চাহিদা বেড়েই চলছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে এসব শুঁটকি ভারতে রপ্তানি করা হচ্ছে।

জেলার নয়টি উপজেলার মধ্যে পাঁচটি উপজেলার খালবিল নদীনালা থেকে দেশি কাঁচা মাছের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত ছোট মাছ প্রক্রিয়াজাত করে রোদে শুকিয়ে শুঁটকির চাহিদা পূরণ করছে স্থানীয় শুঁটকি মৎস্যজীবীরা। চলতি মাসের নভেম্বর মাস থেকে শুরু হওয়া এই শুঁটকি প্রক্রিয়ার কার্যক্রম চলবে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত।

 

পাবনার সুজানগর, সাথিয়া, বেড়া, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া উপজেলায় ছোট বড় মিলিয়ে ১০টি স্থানে শুঁটকি মাছের চাতাল রয়েছে। বর্তমানে সবচেয়ে বড় শুঁটকি মাছের চাতাল পাবনার সুজার উপজেলায়। মৌসুম ভিত্তিক এই ব্যবসার সঙ্গে হাজারেরও বেশি মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।  

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, এবার পাবনা অঞ্চল থেকে প্রায় ১০০ টন শুঁটকি মাছ রপ্তানি করা হবে। আর এই শুঁটকি মাছ প্রকারভেদে সর্বনিন্ম চার হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১৬ হাজার টাকা মণ দরে পাইকারিভাবে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহে একদিন করে প্রতিটি ট্রাকে ১০ টন করে শুঁটকি মাছ বাজার জাত করা হয়। প্রতি টন শুঁটকি মাছ প্রায় দুই লাখ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে।  

স্থানীয় শুঁটকি শ্রমিক ও শুঁটকির চাতাল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর এই অঞ্চলের চার পাশের খাল, বিল, নদী, নালা থেকে দেশি কাঁচা মাছ সংগ্রহ করা হয়। প্রচুর পরিমাণের দেশি মাছ পাওয়া যায় এই অঞ্চলগুলোতে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাকি মাছগুলো প্রক্রিয়া করে শুঁটকি মাছ তৈরি করা হয়। এতে লাভবান হচ্ছে স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ীরা ও মৎস্যজীবীরা।

মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যস্ত শ্রমিকেরা।  ছবি: বাংলানিউজ

পাবনা সুজানগর উপজেলার মাছের আড়ৎদার আবুল শেখ বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘ ২০ বছর ধরে সুজানগর মসজিদ পাড়ার বেশ কিছু মৎসজীবী পরিবার এই ব্যবসা করে আসছেন। আমরা জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে দেশি কাঁচা মাছ আমদানি করে থাকি। এই শুঁটকি মাছের ব্যবসায়ীরা আমাদের আড়ৎ থেকে মাছ সংগ্রহ করে থাকে। এই কাঁচা মাছ বিক্রি করে আমরা যেমন লাভবান হচ্ছি আবার তারাও এ মাছ শুঁটকি করে বাজারে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।

পাবনা সুজানগর মসজিদ পাড়া এলাকার শুঁটকি মাছ ব্যবসায়ী শরিফ কাজী বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাছে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকার ব্যবসায়ীরা আসে শুঁটকি মাছ কেনার জন্য। এই এলাকার প্রায় ২০ জন পাইকার ব্যবসায়ী আছে। আমরা সবাই স্থানীয় বাজার থেকে পাইকারী আড়ৎ থেকে মাছ সংগ্রহকরে শুঁটকি মাছ করে থাকি। সিজেনাল এ ব্যবসায় প্রায় তিন শতাধিক নারী-পুরুষ এই কাজ করে থাকে। আমাদের এই অঞ্চলের শুঁটকি মাছ সৈয়দপুরে শুঁটকি মাছের আড়তে যায়। সেখান থেকে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের মৎস্য ব্যবসায়ীরা তাদের চাহিদা অনুসারে মাছ সংগ্রহ করে। এবারে প্রায় ১০ কোটি টাকার শুঁটকি মাছ দেশসহ বিদেশে রপ্তানি করা হবে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুর রউফ বাংলানিউজকে জানান, গত বছর জেলায়  পাঁচটি উপজেলা মিলিয়ে ১৬৭ মেট্রিক টন শুঁটকি করা হয়েছে। সরকারিভাবে তেমন কোনো সহযোগিতা নেই শুঁটকি মৎস্যজীবীদের জন্য। আগামীতে যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে সেখানে এই শুঁটকি মাছের ব্যবসায়ী ও চাষিদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। তবে এই মাছ বিদেশে পাঠানো হয় কি না আমার জানা নেই। স্থানীয় মৎস্যজীবীদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি সৈয়দপুর শুঁটকি মাছের আড়ৎ থেকে ভারতের কিছু মৎস্য ব্যবসায়ী মাছ কিনে থাকে। তবে সরকারিভাবে এর কোনো অনুমোদন নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৯
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।