জানা যায়, সোনামসজিদ বন্দর দিয়ে ৩৫ ধরনের পণ্য আমদানি হয়। এরমধ্যে খৈল, ভূষি ছাড়া বর্তমানে বাকিসব পণ্য আমদানি বন্ধ রয়েছে।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন এ বন্দর দিয়ে ১৫০-২০০ ট্রাক পাথর আমদানি হয়। সরকারি রাজস্ব বাদেও এতোদিন ট্রাক প্রতি বন্দর ট্যারিফ হিসেবে ৭৮৩ টাকা দিয়ে আসছিল আমদানিকারকরা। এই টাকার মধ্যে ৪৯ শতাংশ যেত সরকারি কোষাগারে। বাকি ৫১ শতাংশ পেত পানামা। কিন্তু ১৪ নভেম্বর হঠাৎ করেই বন্দর ট্যারিফ টনপ্রতি ১৬২ টাকা নির্ধারণ করে মৌখিক নির্দেশনা দেয় পানামা। একই সঙ্গে পানামার ভেতরে পণ্য খালাসের নির্দেশনাও দেয় তারা। বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসে আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপ। কিন্তু সমাধান না হওয়ায় গত ১৭ নভেম্বর থেকে পাথর আমদানি বন্ধ করে দেয় তারা।
সোনামসজিদ স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সদস্য আসাদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, এতোদিন ট্রাকপ্রতি ট্যারিফ ৭৮৩ টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পানামা কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করেই ট্যারিফ টনপ্রতি ১৬২ টাকা নির্ধারণ করার মৌখিক নির্দেশ দিয়েছে। ভারতের ও পানামার এসব সমস্যার কারণে আমদানিকারকরা যেমন আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন, তেমনি সরকারও প্রতিদিন মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে।
শ্রমিক নেতা সাদেকুর রহমান মাস্টার বাংলানিউজকে বলেন, বন্দরে একেবারেই ব্যবসা নাই। বন্দর দিয়ে প্রতিদিনে গড়ে ৫০০ ভারতীয় ট্রাক প্রবেশ করতো। কিন্তু বর্তমানে সারাদিনে সর্বোচ্চ ৮০টি পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করে। এতে করে চার হাজার শ্রমিকসহ বন্দর সংশ্লিষ্ট প্রায় ১০ হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে সোনামসজিদ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুণ অর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, সোনামসজিদ বন্দরে কোনো ব্যবসা নেই বললেই চলে। সকলের সহযোগিতায় বন্দরটি আবারো সচল হবে।
কাস্টমস সূত্র জানায়, সোনামসজিদ স্থলবন্দরে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। চলতি অর্থ বছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪৫০ কোটি ৫৮ লাখ ৫১ হাজার টাকা এবং গত চার মাসের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ১৪৯ কোটি ৬৮ হাজার টাকা। কিন্তু প্রথম চার মাসে রাজস্ব আয় হয়েছে ৪৭ কোটি ২৩ লাখ ২১ হাজার টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০১ কোটি ৭৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকা রাজস্ব আয় কম হয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে প্রায় দুই লাখ ভারত থেকে পণ্য ভর্তি ট্রাক প্রবেশ করে। এ থেকে সরকার রাজস্ব প্রায় ৫৩৩ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ভারত থেকে ৬৭ হাজার ২১৮টি ভারত থেকে পণ্য ভর্তি ট্রাক আসে। কিন্তু চলতি ২০১৯-২০ অর্থ বছরে প্রথম চার মাসে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ভারত থেকে পণ্য আমদানি উল্লেখ করার মতো হয়নি।
রাজস্ব আয় কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে সোনামসজিদ স্থল শুল্ক বন্দরের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বন্দরের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায়ের পণ্য হচ্ছে পাথর। যা আমদানি বন্ধ রয়েছে। এছাড়া এ বন্দরে অন্যান্য পণ্য আমদানিও একেবারেই কমে যাওয়ায় রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্র অর্জন করতে পারেনি। উল্টো ঘাটতি রয়েছে শতকরা ৭২ ভাগ। তবে আসন্ন শীত মৌসুমে ফল আমদানি শুরু হলে রাজস্ব আদায়ে গতি আসবে বলে আশা প্রকাশ করছি।
পানামা সোনামসজিদ পোর্ট লিংক লিমিডেটের ডেপুটি পোর্ট ম্যানেজার মাইনুল ইসলাম বলেন, ইতোপূর্বে পানামায় ৪০০-৪৫০টি ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক পানামা ইয়ার্ডের ভেতরে প্রবেশ করলেও বর্তমানে নেমে দাঁড়িয়েছে ১০০-তে।
আপরদিকে, পানামা সোনামসজিদ পোর্ট লিংক লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার বেলাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ট্যারিফ সংযোজন পানামার নিজস্ব কোনো বিষয় নয়, এটি বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (ট্রাফিক) বন্দর সংশ্লিষ্ট সবপক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়। এরপরই ট্যারিফ সংযোজনের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৯
এনটি