বুধবার (১১ ডিসেম্বর) পাবনা বড় বাজারে পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।
জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আবাদ হয় সুজানগর ও সাথিয়া অঞ্চলে। দেশের মোট উৎপাদিত দেশি পেঁয়াজের এক তৃতীয়াংশ চাহিদা পূরণ হয় এ জেলার পেঁয়াজ দিয়ে। জেলার বিভিন্ন হাটে চলতি সপ্তাহের প্রধম দিকে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা মণ দরে। আর এই দুইদিনে পেঁয়াজের বাজার জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে চলে এসেছে। বর্তমানে পাবনার হাট বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২ হাজার ৭শ’ টাকা মণ।
দাম কমার বিষয়ে সাধারণ কৃষক সেরায়ার উল্লাহ মিঞা বলেন, পেঁয়াজের ক্ষেত বৃষ্টির কারণে নষ্ট হয়ে গেছিল। সাড়ে তিন-চার হাজার টাকা মণ দরে পেঁয়াজ কিনে ক্ষেতে লাগিয়ে ছিলাম। কেবলি পেঁয়াজ বাজারে আনা শুরু করেছি আর পেঁয়াজের দাম কমে গেলো। আমরা আবারও আর্থিক ক্ষতি মুখে পরলাম।
পাবনা বড় বাজার ও হাজির হাটের পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসায়ী স্বপন বিশ্বাস বলেন, এরই নাম কাঁচাবাজার। এই দাম আছে আবার নাই। আমরা গত দুইদিনে আশপাশের হাট বাজার থেকে পেঁয়াজ কিনেছি চার হাজার টাকা মণ দরে। আর যেদিন ঢাকায় পাঠাবো সেদিন পেঁয়াজ তিন হাজার টাকা মণ। এক হাজার নাই, তবু ব্যবসা করতে হবে। তবে পেঁয়াজের আর সংকট হবে না। পেঁয়াজ গত বছরের চাইতে কম দামে বিক্রি হবে। কারণ বাজারে এখন প্রচুর পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।
বাজারের সাধারণ ক্রেতা আজম আলী সরকার বলেন, অনেকদিন পরে এতো অল্প দামে পেঁয়াজ পেলাম। বাজারে এ দাম থাকলে সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রির কারণে পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক হয়েছে।
পাবনা বাজারের খুচরা বিক্রেতা আনোয়ার ইসলাম বলেন, বাজারে প্রচুর পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। তবে বিক্রি হচ্ছে কম। জনগণ পেঁয়াজ কম খাওয়ার অভ্যাস করে ফেলেছে। আমরা দামের সময় পেঁয়াজ দিতে পারিনি। আর এখন পেঁয়াজ দোকানে থেকে যাচ্ছে।
পাবনায় পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় হাট বসে আতাইকুলা, সুজানগর, হাজিরহাট, পুস্পপাড়া, কাশিনাথপুর, বেড়া, সাথিয়া, চাটহোর ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলায়। দেশি পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় কেনা বেচা হয়ে থাকে এ হাটগুলোতে। পাবনা পাইকারি হাট বাজারে দুই ধরনের পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। মূলকাটা ভালো বড় আকারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে একটু বেশি দামে। আর আকারে ছোট গোরা ভালো না সেই পেঁয়াজ একটু কম দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে সাধারণ কৃষকের ঘরে শুকনা পুরোনো পেঁয়াজ যে সামান্য পরিমাণে ছিল সেটি বর্তমানে চার হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্চে। তবে নতুন পেঁয়াজ ওঠার কারণে পুরোনো পেঁয়াজের তেমন চাহিদা নেই বাজারে।
গত মৌসুমের এ সময়ে প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা মণ দরে। মুলকাটা পেয়াজ দ্রুত তুলে হালি বা নাবী পেঁয়াজ লাগাতে শুরু করেছেন কৃষক।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, পর পর দুইবার বৃষ্টি হওয়ার কারণে নিম্ন অঞ্চলের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষক নাবী পেঁয়াজ লাগানোর জন্য মুরিকাটা পেঁয়াজ দ্রুত তুলে ফেলছে। অল্পদিনের মধ্যে দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে। নাবী পেঁয়াজ বাজারে আসলে দেশে পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। দেশে আর পেঁয়াজের সংকট থাকবে না।
গত বছরে জেলায় ৪৯ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছিলো ৬ লাখ ৫৮ হাজার ৮৫৩ মেট্রিকটন। এই বছরে মুরিকাটা পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৮ হাজার হেক্টর জমি। এর মধ্যে বৃষ্টির কারণে ক্ষতি হয়েছে ৮ হাজার ৫৮০ হেক্টার জমির পেঁয়াজ। চলতি মৌসুমে নাবী পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ৬২০ হেক্টর জমি। ইতোমধ্যে ১৮ হেক্টর জমিতে নাবী পেঁয়াজ লাগিয়েছে কৃষক।
বাংলাদেশ সময়: ০২২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৯
আরএ