২০০০ সালে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে শুরু করেন ব্যবসা। প্রথমদিকে সফল না হলেও, এক পর্যায়ে ঠিকই সাফল্যের দেখা পান।
নিজের ব্যবসা জীবনের সেই উত্থান-পতন ও সংগ্রামের নানা স্মৃতি নিয়েই বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত এক সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন এসএম খালেদ। বাংলানিউজের পক্ষে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন স্টাফ করেসপন্ডেন্ট মিরাজ মাহবুব ইফতি।
বাংলানিউজ: কীভাবে আপনার ব্যবসায় আসা?
এস এম খালেদ: আমার কর্মজীবন শুরু হয়েছিল সাংবাদিকতা দিয়ে। ‘ন্যাশনাল টুডে’ নামে একটি পত্রিকার রিপোর্টার ছিলাম। সে সময় ওটাই ছিল আমার জন্য বিশাল এক প্ল্যাটফর্ম। কখনো চিন্তাও ছিল না ব্যবসায় আসবো। সাংবাদিকতা পেশাতেই থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে বহুবিধ কারণে আর সাংবাদিকতা করা হয়ে ওঠেনি। এক পর্যায়ে বায়িং হাউজের চাকরি শুরু করি। এক-দেড় বছরের অভিজ্ঞতা নেই। পরে কয়েক বন্ধু মিলে গার্মেন্টসের লেভেলসের ব্যবসা শুরু করি। দুই বছর গার্মেন্টসে লেভেলস সাপ্লাই করলাম। এরপর আমরা নিজেরাই গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করলাম। অনেক চেষ্টা করে গার্মেন্টস শিপমেন্ট করার একটি অর্ডার পেলাম। প্রথম অর্ডারের কাজ ভালো হওয়ায় একে একে আরো অর্ডার আসতে শুরু করলো। তিন বছরের মধ্যে আমাদের ব্যবসা আরো ভালো হলো। আমাদের এক আমেরিকান বায়ারই ফ্যাক্টরি ও মেশিনপত্র কিনে দেন। ১৮ বছর যাবৎ আমি এখনো ওই বায়ারেরই কাজ করছি। শুরু দিকে ব্যাংকের সাপোর্টের ২ কোটি ও মেশিন কেনার জন্য ৩ কোটি টাকা দিয়েছিলেন।
বাংলানিউজ: কতো টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন?
এস এম খালেদ: সর্বসাকুল্যে ২ কোটি টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। আমাদের টাকা ও বায়ারদের টাকা মিলিয়ে প্রথম ফ্যাক্টরি করেছিলাম।
বাংলানিউজ: প্রথম ফ্যাক্টরি কোথায়, কতো সালে করেছিলেন?
এস এম খালেদ: ২০০০ সালে রাজধানীর মিরপুর ১১ নাম্বারে ‘স্নোটেক্স অ্যাপারেলস’ নামে প্রথম ফ্যাক্টরি করি। সে সময় খুব আনন্দ পেয়েছিলাম। সেটা ছিল আমার কাছে বিরাট এক এচিভমেন্ট। ২০০৩ সালে আমরা মালিবাগে ‘কাট অ্যান্ড সিউ’ নামে আরেকটি ফ্যাক্টরি করি। এরপর মনে হলো, আমাদের বড় আর একটা ফ্যাক্টরি করা দরকার। আমাদের স্বপ্ন ছিল বড়।
বাংলানিউজ: ব্যবসার শুরুটা কেমন ছিল ?
এস এম খালেদ: একদম শুরুটা অনেক কঠিন ছিল। কারণ, কারখানা লাইনগুলোতে নিয়মিত কাজ করাতে পারছিলাম না। নিয়মিত ক্লায়েন্টদের টাকা দিতে পারতাম না। পরে যখন প্রথম ফ্যাক্টরি শুরু করলাম তখন কাজ করার স্বাধীনতা পেলাম। তখন সাপ্লায়ারদের নিয়মিত টাকা দিতে শুরু করলাম। এখন আমাদের ব্যবসা নিয়মতান্ত্রিকভাবে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমাদের ফ্যাক্টরিতে ১০৬টি লাইনে কাজ হয়। বর্তমানে বড় আর একটি ফ্যাক্টরিও তৈরি করছি আমরা। এ ফ্যাক্টরিতে কাজ শুরু হলে, আমাদের ১৮০টি লাইনে কাজ হবে। বর্তমানে আমার পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে ১১ হাজার কর্মী কাজ করছে। নতুন ফ্যাক্টরি চালু হলে সব মিলিয়ে ১৮ হাজার কর্মী কাজ করবে। তখন আমাদের ব্যবসা হবে ২৫০ মিলিয়ন ডলার। দেড় বছর আগে সারা লাইফস্টাইল লিমিটেডের জন্য শো-রুম নিলাম। দেখতে দেখতে এখন সারা’র পাঁচটি শো-রুম হয়ে গেছে।
বাংলানিউজ: ধামরাইতে কবে ফ্যাক্টরি করেন আপনি?
এস এম খালেদ: ২০১২ সালে ধামরাইয়ে স্নোটেক্স ফ্যাক্টরির যাত্রা শুরু হয়। এটাই হলো আমার জার্নি। স্নোটেক্স আমার ব্যক্তি মালিকানার প্রতিষ্ঠান।
বাংলানিউজ: স্নোটেক্স থেকে কেন সারা লাইফস্টাইল লিমিটেড তৈরি করলেন?
এস এম খালেদ: আমরা যাদের সঙ্গে ১৮ বছর আগে ব্যবসা শুরু করেছিলাম তাদের আমেরিকায় ফ্যাক্টরি ছিল। আমার আমেরিকান বায়ারের কানাডাতেও ফ্যাক্টরি আছে। তারা যে কোনো সময় কানাডাতে ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দিতে পারে। ১০ থেকে ১২ বছর আগে আমি তাদের সঙ্গে পার্টনারশিপে ছিলাম। তারা আমেরিকার ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দিয়েছে। আমি দু’বছর আগে ফ্রান্সে গিয়েছিলাম। তখন জানতে পারি ফ্রান্সের লিন নামে একটি জায়গায় ৩০ বছর আগে শত শত গার্মেন্টস ছিল। কিন্তু একটা সময় সেগুলো বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের এখানে লাইফস্টাইল ব্যবসা ভালো হচ্ছে। ১৫ থেকে ২০ বছর পরে হয়তো দেখবো গার্মেন্টসগুলো ভালো ব্যবসা করতে পারছে না। তখন হয়তোবা ইলেকট্রনিক বা অন্য কোনো ব্যবসা ভালো হবে। আমরা আমাদের পরের জেনারেশনকে কোন ব্যবসা দিয়ে যাবো? ব্যবসা না থাকলে আমরা কী করব? সেই ভাবনা থেকেই সারা লাইফস্টাইল। গত ২০ বছর ধরে আমরা যে ব্যবসাটা শিখলাম, সেই ব্যবসাটা একই ট্রেডে নেওয়ার জন্যই আমরা সারা লাইফস্টাইল লিমিটেড শুরু করেছি।
বাংলানিউজ: ২০ বছরের ব্যবসায় আপনাদের কী ধরনের দক্ষতা তৈরি হলো?
এস এম খালেদ: গত ২০ বছরে আমরা গার্মেন্টসে কম খরচে ভালো কোয়ালিটির পণ্য তৈরি করতে শিখেছি।
বাংলানিউজ: এখন আর আপনারা নতুন করে কী কোনো খাতে দক্ষতা তৈরি করছেন?
এস এম খালেদ: গত দেড় বছর ধরে আমরা শিখছি ব্র্যান্ডিং, মার্কেটিং ও ফ্যাশন। আরো শিখতে হবে আমাদের। শেখার মধ্য দিয়ে সারা লাইফস্টাইল লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হবে। এখন থেকে দশ বছর পরে সারা অনেক শক্তিশালী হবে। স্নোটেক্স ধীরে ধীরে দুর্বল হবে। সে জন্যই আমাদের সারা’র যাত্রা শুরু করা।
বাংলানিউজ: সারা লাইফস্টাইল লিমিটেড নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?
এস এম খালেদ: সারাকে নিয়ে আমার স্বপ্ন অনেক বড়। ফ্রান্সে যারা শেষ পর্যন্ত গার্মেন্টস ব্যবসা করেছিল তারা সর্বস্ব হারায়। যেসব কোম্পানি রিটেইলে যায়, তারাই এখন আমাদের বড় বায়ার। তাদের জন্যই আমরা পণ্য তৈরি করছি। আমরাও আমাদের ব্যবসাটিকে (সারা) বড় পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারবো। বাংলাদেশ রিটেইল স্টোরের জন্য ব্যবসা করছি। রিটেইল স্টোর পর্যায়ে আমাদের ব্যবসা নিয়ে যাওয়া সম্ভব। ১০ থেকে ১৫ বছর পর আমরা সারাকে এরকম একটা পর্যায়ে নিয়ে যাবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৮ ঘণ্টা, ১৭ ডিসেম্বর , ২০১৯
এমএমআই/এইচজে