নভেম্বরে ইআরডি’র হাতে ৩ হাজার ৮৬১টি ডাক আসে। এসব ডাক স্ক্যান করে অনলাইনে নিয়ে এসে নিষ্পত্তি করা হয়।
ই-নথি প্রসঙ্গে ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ছে। সেই ধারাবাহিকতায় আমরাও কাজ করছি। সাধারণ জনগণও ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল পাচ্ছেন। আমাদের অফিসের সব ডাক স্ক্যান করে অনলাইনে নিয়ে আসি। পরে ই-নথির মাধ্যকে নিষ্পন্ন করে ফেলি। কোনো কর্মকর্তা গুরুত্বপূর্ণ কাজে অফিসের বাইরে থাকলেও কাজ থেমে থাকে না। সব কিছুই অনলাইনে হয়ে যাচ্ছে। যেকোনো অফিসিয়াল সিদ্ধান্তও আমরা ই-নথির মাধ্যমে নিয়ে থাকি। আমরা কয়েক বছর ধরেই ই-নথিতে ভালো করছি। আশা করছি সরকারের ঘোষিত গোলের আগেই ইআরডি পেপারলেস হবে। অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে ইআরডির সব দাপ্তরিক কাজ করতে পারবো বলে আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, সামনে ই-নথি কার্যক্রম আরও বাড়বে। অনলাইনে নথি আদান-প্রদান একদিকে যেমন সময় সাশ্রয়ী তেমনই লাল ফিতার কোনো দৌরাত্ম্য নেই। দ্রুত সময়ে আমরা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম নিষ্পত্তি করতে পারি। সরকারি কাজ স্বচ্ছতার সঙ্গে দ্রুত সময়ে নিষ্পত্তি করতে ই-ফাইলিংয়ের কোনো বিকল্প নেই।
ই-নথি বা ই-ফাইলিং ডিজিটাল বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকারি কার্যক্রমকে আরও সহজতর করার একটি সফটওয়্যার সিস্টেম। এর মাধ্যমে সরকারি দপ্তরের সব কাজ অনলাইনভিত্তিক করা হয়।
এখন সব ধরনের দাপ্তরিক কাজ অনলাইনে করা হচ্ছে যেমন-বেতন, বিল, বাজেট প্রণয়ন, চিঠিপত্র ব্যবস্থাপনা। ডাকের পরিবর্তে এখন অনলাইনে এসব কার্যক্রম দ্রুত সময়ে নিষ্পত্তি হচ্ছে। এ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অফিসে উপস্থিত না হয়েও দাপ্তরিক কাজ মোবাইলের মাধ্যমে ই-নথি অ্যাপ ব্যবহার করে করা যায়। তবে এ ব্যবস্থাপনায় এখনো অনেক মন্ত্রণালয় আগ্রহী নয় আবার অনেক মন্ত্রণালয়-বিভাগে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। ইআরডি’তে ব্যাপক সাড়া মিললেও অনাগ্রহী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নভেম্বর মাসে এই মন্ত্রণালয়ে ৪৬৩টি ডাক আসলেও একটি ডাকও ই-নথি করা হয়নি।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ই-ফাইলিং কার্যক্রমকে তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। চলতি বছরের নভেম্বর মাসের ই-নথি কার্যক্রমে বড় ক্যাটাগরিতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। মধ্যম ক্যাটাগরিতে শীর্ষ স্থান দখল করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা বিভাগ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। এছাড়া ছোট ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অধিকার করেছে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আবেদন ই-নথির মাধ্যমে দ্রুত নিষ্পত্তি করা হয়।
মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে এ হিসাব করা হয়। প্রথম ক্যাটাগরিতে সাতটি, দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে ১৪টি এবং তৃতীয় ক্যাটাগরিতে ৩৭টি বিভাগ ও মন্ত্রণালয় রয়েছে। বর্তমান সরকার ই-ফাইলিংয়ে জোর দিয়েছে। এখন অধিকাংশ টেন্ডারও ই-ফাইলিংয়ে চলে গেছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি) সূত্র জানায়, দেশে মোট ১৯ হাজার সরকারি অফিস রয়েছে। এসব অফিসে দেড় লাখ সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী কর্মরত। ফলে দেশের ১৬ কোটি মানুষ উপকৃত হন। চলতি বছরের নভেম্বর মাস পর্যন্ত সাত হাজার অফিসে ই-নথি চালু রয়েছে। এসব অফিসে প্রায় ৮৫ হাজার ৫৩২ জন কর্মকর্তা ই-নথি কার্যক্রমে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। ই-নথির ফলে পুরো বাংলাদেশের ১ কোটি ১৭ লাখ ৯৫ হাজার ২৭১ জন মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। ২০২১ সালে দেশের ১৯ হাজার অফিস পেপারলেস করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।
একসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রাম (এটুআই) ও সারাদেশে ই-ফাইলিং নিয়ে কাজ করছেন ন্যাশনাল কনসালটেন্ট ফর ই ফাইলিং ইম্পলিমেন্টশনের নিলুফার ইয়াসমিন।
ই-নথি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ই-নথির মাধ্যমে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর হচ্ছে। একটা ডাক ম্যানুয়ালি যখন এক ডেস্ক থেকে অন্য ডেস্কে যায় তখন অনেক সময় লাগে। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনী ইশতেহার ছিল আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমিয়ে ফেলা। এটা একমাত্র ই-নথির মাধ্যমে সম্ভব। আমাদের গোল সারা দেশের সব সরকারি দপ্তর একটা কমন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দাপ্তরিক কাজ করবে। আর এটা হবে ই-নথি। বর্তমানে সাত হাজার সরকারি অফিসে ই-নথির মাধ্যমে কাজ করেন ৮৫ হাজার কর্মকর্তা। সবাই ই-নথির মাধ্যমে দাপ্তরিক কাজ সম্পন্ন করছেন। আমরা আশা করছি, ২০২১ সালের মধ্যেই সব অফিস পেপারলেস হবে। ফলে স্বচ্ছতার মাধ্যমে সব কাজ দ্রুত সময়ে নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০০, ২০১৯
এমআইএস/এইচএডি/