কিন্তু ভালো ফলন পেলেও কৃষকদের অভিযোগ তারা তাদের সবজির ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। তাদের থেকে কম দামে সবজি কিনে সেগুলোকে বিভিন্ন বাজারে দুই থেকে তিন গুণ বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
কৃষকরা আগাম সবজি চাষ করায় শীতকালীন সবজিতে বর্তমানে বাজার ভরপুর হলেও তেমন লাভ হয়নি কৃষকের। কারণ পাইকাররা মাঠ থেকে কম দামে সবজি কিনে নিয়ে বাজারে বেশি দামে বিক্রি করছেন।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকার ধামরাইয়ে গিয়ে সবজি চাষিদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, তাদের কাছে থেকে ১৫ টাকা কেজিতে বেগুন কিনে পাইকাররা বাজারে ৪০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এছাড়া ফুলকপি ২০ টাকা দরে নিয়ে ৫০ টাকায়, বাঁধাকপি ২০ টাকায় কিনে ৫০ টাকায়, লাউ ১৫ টাকায় কিনে ৬০ টাকায়, আঁটি (মোড়া) লাল শাক ৩ টাকায় কিনে ১০ টাকায়, মুলা ১২ টাকায় কিনে ৩০ টাকায়, আঁটি লাউ শাক ৮ টাকায় কিনে ৩০ টাকায়, পুঁই শাক কেজি ১০ টাকা করে কিনে ৪০ টাকায় বিক্রি করছেন পাইকাররা৷
কৃষকদের কথা অনুযায়ী মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে আশুলিয়ার বাইপাইলে সবজি ও কাঁচামালের আড়তে গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায়। দেখা গেছে সব সবজিই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। কৃষকদের থেকে যে দামে কেনা হয়ে তার চেয়ে দুই গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এখানে।
ধামরাইয়ের খরারচর গ্রামের সামচুল। শীতের মাঝামাঝি সময়ে সবজি পাবার আশায় প্রায় একর জমিতে অক্টোবর মাসে গাজর, মিষ্টি কুমড়া, মুলা, বেগুনসহ কয়েক পদের সবজি আবাদ করেছেন।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ফলন ভালো পেয়েছি, তবে বাজারের দামের তুলনায় অনেক কম দামে পাইকারদের কাছে এসব সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে। ভেবেছিলাম ভালো ফলন হয়েছে এবার দামও ভালো পাবো কিন্তু সবজি চাষের খরচই ঠিকমতো উঠবে কিনা জানিনা।
ধামরাইয়ের ফুকুটিয়া গ্রামের কৃষক তোতা মিয়া, মোনছেন আলী, রহিম। তারা সবাই লাভের আশায় শীতকালীন সবজি চাষ করেছিলেন। কিন্তু সবজির দাম কম হওয়ায় পরবর্তী বছরে তারা আর সবজি চাষ করবেন না বলে জানান।
পাইকারি সবজি ব্যবসায়ী আড়তদাররা বলছেন, তারা সবজি অনেক দূর থেকে কিনে নিয়ে আসেন। পরিবহন ও শ্রমিকের খরচ তুলতে চাষিদের থেকে কেনা দামের চেয়ে কিছুটা বেশি দামে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। এছাড়া পরিবহনের সময় অনেক সবজি পচে নষ্ট হয়ে যায়। খুচরা ব্যবসায়ীরা তাদের লাভ মত সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করেন।
আড়তদার অন্তু বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ভোর ৫টার সময় গিয়ে সবজিগুলো নিয়ে আসি। তাছাড়া সবজিগুলো আনার সময়ও অনেক পচে যায়। সবমিলিয়ে কৃষকদের থেকে একটু কম দামে সবজি নিতে পারলে আমাদের লাভ হয়। বাজারে এসে পরে ভালো দামে বিক্রি করা যায়৷
খুচরা ব্যবসায়ী আকরাম বাংলানিউজকে বলেন, সাধারণত শীতকালীন সবজির দাম নাগালের বাইরে থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি৷ শীতের শুরু থেকেই শীতকালীন সব সবজির দাম চড়া। আমরা যে দামে পাইকারদের থেকে কিনি তার থেকে একটু লাভে বিক্রি করি।
মধ্যসত্বভোগীদের কারণে সাধারণ ক্রেতাদের বেশি দাম দিয়ে সবজি কিনতে হচ্ছে।
সাধারণ ক্রেতা সফিকুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম ও আকাশ বলছেন, চাষিরা তাদের উৎপাদিত পণ্য যদি সরাসরি বাজারে এসে বিক্রি করতে পারতেন তাহলে সবজির দাম এতো বৃদ্ধি হতো না। তাই চাষিদের সরাসরি বাজারে পণ্য বিক্রি করার সুযোগ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
ধামরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, নিরাপদ সবজির জন্য ঢাকায় একটি বাজার করা হয়েছে। ধামরাইয়ের অনেক কৃষক প্রতি শুক্র ও শনিবার সেখানে গিয়ে নিজেরাই সবজিগুলো বিক্রি করে আসেন। সবজি পরিবহনে কৃষকদের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি গাড়িও রয়েছে যা দ্বারা তারা ঢাকায় সবজি নিয়ে বিক্রি করতে পারেন। আমরা ধামরাইয়ের সব কৃষকদের এর আওতায় আনার চেষ্টা করছি তারা যদি এই বাজারটি সম্পর্কে জানে এবং সেখানে গিয়ে সবজি বিক্রি করে তাহলে তারা ন্যায্য দাম পাবেন বলে আশা করি।
বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯
আরএ