৮ হাজার ৪০০ জনের স্থানীয় প্রশিক্ষণ বাবদ ৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয় রাখা হয়েছে। এর আওতায় অফিসার, স্টাফ, চুক্তিবদ্ধ কৃষক এনজিও প্রতিনিধি রয়েছেন।
‘মানসম্পন্ন আলু বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণে এবং কৃষক পর্যায়ে বিতরণ জোরদারকরণ’ প্রকল্পের আওতায় কর্মকর্তারা বিদেশ প্রশিক্ষণ ও শিক্ষাসফর করবেন।
আলুর উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য মানসম্মত বীজের খোঁজে বিদেশ ভ্রমণ করবেন ওইসব কর্মকর্তা। তবে কোন দেশে ভ্রমণ করবেন, কয়দিন থাকবেন কোন কিছুই জানা না গেলেও ইউরোপকেও বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বলে জানায় বিএডিসি।
প্রকল্পের আওতায় বিদেশ ভ্রমণ প্রসঙ্গে বিএডিসির মহাব্যবস্থাপক (বীজ) নূরনবী সরদার বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্প সবেমাত্র অনুমোদন পেয়েছে। এর আওতায় কর্মকর্তাদের ভ্রমণখাতে ব্যয় রাখা হয়েছে। প্রকল্প চলাকালীন কর্মকর্তারা বিদেশ যাবেন। কোন দেশে যাবেন কারা বিদেশ যাবেন এ বিষয়ে এখনো জিও (সরকারি আদেশ) হয়নি। ’
কোন দেশে ভ্রমণ করবেন, কেন ভ্রমণ করবেন? এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মহা ব্যবস্থাপক বলেন, জিও হলেই সব জানতে পারবেন।
প্রকল্পের মোট ব্যয় ৬৮৮ কোটি ২১ লাখ ১২ হাজার টাকা। ০১ সেপ্টম্বর ২০১৯ থেকে ৩০ জুন ২০২৪ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পের মূল্য লক্ষ্য উদ্দেশের থেকে আনুষঙ্গিক ব্যয়ই বেশি। প্রকল্পের আওতায় ৫৭ জন কর্মকর্তার অতিরিক্ত কাজের ভাতার জন্য ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় রাখা হয়েছে। ডাক ও তার খাতে ৫, টেলিফোনে ১৫ ও ৩৬টি যানবাহনের ফিটনেস বাবদ ২৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৩৪টি হিমাঘারে বিদ্যুৎ বিল বাবদ ৭০ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করেছে বিএডিসি। প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শনী প্লট স্থাপন ও মাঠ দিবস বাবদ ১ কোটি ১২ লাখ, আসবাবপত্র কেনা বাবাদ ২ কোটি, বিদ্যুৎ সরঞ্জাম বাবদ ২ কোটি ও চার হাজার ত্রিপল কেনা বাবদ ৬ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কৃষকদের মধ্যে মানসম্পন্ন বীজ আলু সরবরাহের মাধ্যমে বাংলাদেশে টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ অন্যতম উদ্দেশ্য। অথচ প্রকল্পের মূল কাজের থেকে আনুষঙ্গিক খাতেই বেশি ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
বিএডিসি সূত্র জানায়, প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭৪ মেট্রিক টন বীজ আলু উৎপাদন, সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের মাধ্যমে বর্তমান চার শতাংশের পরিবর্তে ৬ শতাংশে উন্নীত করা। প্রতিটি দুই হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন চারটি হিমাগার নির্মাণ। ৭ হাজার ৯৫০ জন চুক্তিবদ্ধ চাষি, বেসরকারি বীজ উদ্যোক্তা, বীজ ডিলার, এনজিও কর্মী ও ৪৫০ জন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া। আলুর নতুন জাত জনপ্রিয়করণের লক্ষ্যে ১ হাজার ৫০০টি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন ও ৭৫টি মাঠ দিবস অনুষ্ঠান করা হবে।
৫৩ হেক্টর ভূমি উন্নয়ন, তিনটি অফিস ভবন, ২০ হাজার বর্গমিটার সাটিংশেড, দুই হাজার মিটার সীমানা প্রাচীর, ৮০০ বর্গমিটার থ্রেসিংফ্লোর, তিন হাজার মিটার বারিড পাইপ, দুটি হিমাগারে সৌর বিদ্যুতায়নের কাজ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় অন্যান অবকাঠামো নির্মাণসহ দুটি পুরাতন হিমাগার সংস্কার করা হবে। অথচ প্রকল্পের এসব মূল কাজের চেয়ে ভ্রমণ খাতে বেশি ব্যয় করছে বিএডিসি।
আলু বিশ্বের অন্যতম প্রধান ফসল। উৎপাদনের দিক থেকে ধান, গম ও ভুট্টার পরেই চতুর্থ স্থানে আছে আলু। বাংলাদেশে আলু একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল। বাংলাদেশের সর্বত্রই এর চাষ হয়ে থাকে। প্রক্রিয়াজাত আলু বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। বর্তমানে বাংলাদেশ আলু হেক্টরপ্রতি গড় ফলন মাত্র ১১ টন। আলুর উৎপাদন ২০ টন পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। ফলন বাড়লে উৎপাদন খরচ কমে আসবে।
বর্তমানে আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে অষ্টম। দেশে বছরে আলু উৎপাদন হয় ১০৩ দশমিক ১৭ লাখ টন, যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা সম্ভব। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৯৫ কোটি টাকার আলু রফতানি হয়েছে। কৃষকদের হাতে ভালো মানের বীজ সরবরাহ করলে আরো বেশি সফলতা আসবে আলু চাষে-এমনটাই বলছেন কৃষিবিদরা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৯
এমআইএস/এসএইচ