এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, উৎপাদনশীল খাতের কথা বলা হচ্ছে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত তো এখন সবচেয়ে বেশি উৎপাদনশীল। কর্মসংস্থান সবচেয়ে বেশি করছে এসএমই খাত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ব্যাংকভেদে উৎপাদনশীল খাদে সুদহার ১১ থেকে ১৪ শতাংশ, ট্রেডিং খাতে নয় থেকে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র উদ্যোগ নয় থেকে ১৬ শতাংশ, গৃহঋণের সুদহার ১২ থেকে ১৪ শতাংশ, ব্যক্তিগত ঋণের সুদহার ১২ থেকে ১৮ শতাংশ আর ক্রেডিট কার্ডের সুদহার ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ। একটিতে বাড়তি সুবিধা দেওয়ায় বাকিগুলো আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা।
জানতে চাইলে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এটা করতে গিয়ে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো যেন নষ্ট না হয়- সে ধরনের একটা ব্যাপার থাকতে হবে। নয় শতাংশ কেন, আমরা আট শতাংশ সুদেও ঋণ বিতরণ করতে পারি। আমরা ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করেছি না! কোনো সমস্যা তো হয়নি। এই সুদহার বাস্তবায়ন করতে গেলে অন্য সহায়ক প্রতিষ্ঠানগুলো ভূমিকা পালন না করলে টেকসই হবে না। ব্যাংকিং খাত এমনিতেই ধীরগতিতে যাচ্ছে। সেটা যেন আরও ধীরগতির না হয়।
‘নয় থেকে ছয় শতাংশ সুদ কাঠামো বাস্তবায়নের কাজ চলেছে দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে। নয় শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেসরকারি ব্যাংকের মালিকরা সরকারের কাছ থেকে বেশ কিছু সুবিধাও নিয়েছেন। ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে একই পরিবারের তিন পরিচালক থাকতে পারবেন একটানা নয় বছর, এমন বেশকিছু সুবিধা আদায় করে নিয়েছেন। কিন্তু সুদের হার কমানো যায়নি। এমন অবস্থায় উৎপাদনশীল খাতের জন্য এই নির্দেশনা জারি করলো বাংলাদেশ ব্যাংক। ’
এবিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য অবশ্যই আমাদের সিঙ্গেল ডিজিট ঋণ সিস্টেম করতে হবে। এজন্য একপ্রকার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকও কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কাছে এধরনের একটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
‘নীতিমালায় সহযোগিতার অংশ হিসেবে সরকারি আমানতের অর্ধেক বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে জমার রাখার কথা বলা হয়েছে। সেখানে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদে সুদহারের সুপারিশ করা হয়েছে, যার সর্বোচ্চ সুদহার হবে ছয় শতাংশ। এর বাইরে ব্যাংকগুলোকে অভ্যন্তরীণ খরচ কমানোর নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সুযোগ রয়েছে অনিয়মিত পরিশোধের ক্ষেত্রে দুই শতাংশ সুদ বৃদ্ধির। ’
তবে উদ্যোক্তারা আশঙ্কা করছেন, সুদহার বাড়তে পারে সার্ভিস চার্জের নামে। এনার্জি প্যাক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ন রশিদ বলেন, হিডেন কস্ট ব্যাংক কখনো আলোচনা করে না। তাদের শর্তের মধ্যেও এটা পড়ে না। ধারণা করা হচ্ছে, নয় শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করতে হলে ব্যাংকগুলোর হিডেন কস্ট দিন দিন বাড়বে। বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়কে কঠোর নজরদারির মধ্যে এই নয় শতাংশ সুদহার বাস্তবায়নে যেতে হবে। অতীতে দেখা গেছে নয় শতাংশ সুদ দুই-তিন মাস পার আবার ১৩ বা ১৪ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে ঋণ স্থিতি ২ লাখ ৫ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা, মেয়াদি ঋণ ৭৯ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা, ট্রেডিংয়ে ৮৫ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা, সেবা খাতে ৪০ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা। জুন পর্যন্ত শিল্প খাতে মোট ঋণ ছিল ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে চলতি মূলধন ঋণ ছিল ৩ লাখ ১৯ হাজার ৭ কোটি টাকা, মেয়াদি ঋণ ৮০ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৯
এসই/একে