স্বপন পড়াশোনা করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) পরিসংখ্যান বিভাগে। অনার্সের ফাইনাল ইয়ারে তিনি ও কয়েকজন বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নেন ‘নিরাপদ খাদ্য’ নিয়ে কাজ করবেন।
অনেক বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে ২০১১ সাল থেকে ফেসবুকে www.facebook.com/kinyards পেজের মাধ্যমে মার্কেটিং শুরু করেন। অল্পদিনের মধ্যেই তার আমবাগানের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। তারপর দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আমের অর্ডার আসতে শুরু করে। ফরমালিনমুক্ত ফ্রেশ আম হওয়ায় ক্রেতাদের চাহিদা তখন তুঙ্গে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
পরবর্তীকালে নিরাপদ খেজুর গুড় ও খাঁটি মধু নিয়ে কাজ শুরু করেন স্বপন। তিনি বলেন, যে খাদ্যগুলোতে বেশি ভেজাল হয় সেগুলোতেই প্রথম হাত দিয়েছি আমরা। প্রথমে এ খাদ্যগুলোর ভেজাল দূর করা বেশি জরুরি। কিনইয়ার্ডস ব্র্যান্ডের হানি মিক্সড নাট ও হানি মিক্সড গার্লিক বাজারে নতুন ধরনের প্রডাক্ট হওয়ায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
২০১০ সালের ৫ নভেম্বর শাবিপ্রবির মুক্তমঞ্চ থেকে যাত্রা শুরু করে সময়ের ব্যবধানে ব্যবসা সম্প্রসারিত হয়েছে। বর্তমানে কিনইয়ার্ডস ডট কম ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হোম মেড ফুড, রেস্টুরেন্ট ফুড অর্ডার করা যাচ্ছে। সেফ ফুড, হোম মেড ফুড, অর্গানিক ফুড নিয়ে কিনইয়ার্ডস ডট কম বর্তমানে আল্টিমেট ফুড ডেলিভারি সার্ভিস নিয়ে কাজ করছে।
তরুণ এ উদ্যাক্তা জানালেন, গতবছর কিনইয়ার্ডসের ‘নিরাপদ খেজুর গুড়’ প্রথমবারের মতো বাজারে আসে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার পিঠা উৎসবে প্রদর্শিত হয়। সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এ বছর বিশাল এক্সপোর্ট অর্ডার পেলো কিনইয়ার্ডস। খেজুরের গুড় যারা তৈরি করেন, তারা মনে করেন, খেজুরের গুড়ে চিনি না মেশালে গুড় ভালো হবে না। ফিটকিরি, হাইড্রোজ, রং না মেশালে দেখতে সুন্দর হবে না ও বাজারে বিক্রি হবে না। এটা যে ভেজাল তারা জানেনই না। ভেজাল তাদের কাছে নিয়ম হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, খাঁটি খেজুর গুড় নিশ্চিত করতে গিয়ে আমাদের অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়েছে। আমাদের নিজস্ব নজরদারি এবং তত্ত্বাবধানে যশোর, রাজশাহী অঞ্চলের বিশাল এলাকাজুড়ে খেজুর গুড় উৎপাদন ও সংগ্রহ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। যেখানে গাছ থেকে রস নামানো, জ্বালানো, মোড়কজাত করাসহ গুড় তৈরির প্রতিটি ধাপ পার করা হয় নিখুঁতভাবে। ভোক্তা যেন দেশের সবচেয়ে ভালো, নিরাপদ, নির্ভেজাল এবং অর্গানিক গুড় হাতে পান, তা সব সময় নিশ্চিত করবে আমাদের নিয়োজিত প্রতিনিধিরা। চাষির বাড়িতে উৎপাদিত সেই সর্বোৎকৃষ্ট খেজুর গুড়ের স্বাদ আমরা দেশের চাহিদা মিটিয়ে পৌঁছে দিচ্ছি সুদূর বিদেশে। আমাদের উৎপাদিত খেজুর গুড় সব মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ হয়ে এখন যুক্তরাষ্ট্রসহ রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের নানা দেশে।
স্বপন বলেন, যেসব খাদ্যপণ্যে ভেজাল বেশি, সেখানেই আমরা হাত দিয়েছি। খেজুরের গুড় ও মধুতে প্রচুর ভেজাল। আমরা এ দু’টি পণ্য শতভাগ নির্ভেজালভাবে বাজারজাত করছি। কোনো গ্রাহক চাইলে সেটি মেশিন দিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে পারবেন। কোয়ালিটি নিশ্চিত করতে জাপানি প্রযুক্তির সাহায্যে মধুর মান নির্ণয় করা হয়।
তিনি বলেন, মধুর একাধিক আইটেম আমরা তৈরি করছি। এর মধ্যে পিওর হানি, হানি উইদ নাটস, গার্লিক হানি, গার্লিক পিকল ও কিনইয়ার্ডস মিক্সড নাটস অন্যতম। বর্তমানে অনলাইনে কিন ইয়ার্ডসের ওয়েবসাইটে সব পণ্য অর্ডার করতে পারবেন যে কেউ। এসব খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি ফুড আইটেমও সংযোজন করেছে কিনইয়ার্ডস। রেস্তোরাঁর পাশাপাশি কোয়ালিটি নিশ্চিত করে বাসায় তৈরি খাবারও যে কেউ বিক্রি করতে পারবেন।
কিনইয়ার্ডসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্বপন বলেন, মানুষকে নিরাপদ খাদ্য দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। খাঁটি খেজুর গুড় এ বছর কানাডা ও আমেরিকায় রপ্তানি হচ্ছে, এটা আমাদের জন্য অনেক বড় অর্জন। আমার স্বপ্ন হলো মানুষের জন্য সেইফ ফুড নিশ্চিত করা। খাবার নিয়ে মানুষের সমস্যার সমাধান করা।
তিনি বলেন, এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনেক কর্মসংস্থান হচ্ছে, এটা নিজের কাছে ভালো লাগে। যারা উচ্চ শিক্ষিত নারী ও বেকার, তারা বাসায় খাবার তৈরি করে বিক্রি করতে পারবেন আমাদের অ্যাপের মাধ্যমে। তাদেরও কর্মসংস্থান হবে। বাসায় রান্না করে অনলাইনে বিক্রি করতে পারবেন ‘হোম মেইড ফুড ক্যাটারিং সার্ভিস’ হিসেবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাও আমার লক্ষ্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৯
টিএম/এফএম