এর মধ্যে রয়েছে পুঁটি, টেংরা, বাতাসি, চেলা, চাপিলা, খলসে, মলা, টাকি, গোচি, বাইম, শোল, গুতম, বোয়াল, গজার, মাগুর, শিং, কৈ ইত্যাদি। উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম চলনবিলের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে উৎপাদিত এসব শুঁটকি মাছ সারাদেশের মানুষের কাছেই প্রিয়।
যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয় মিঠা পানির এসব শুঁটকির। সে অনুযায়ী বাড়ছে শুটকির উৎপাদনও। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এসব শুঁটকি রপ্তানি হচ্ছে ভারতে। বাণিজ্যিকভাবে ভারতে রপ্তানি হওয়ার পাশাপাশি মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশেও দিন দিন কদর বাড়ছে মিঠা পানির এসব শুঁটকির।
তবে শুঁটকির চাহিদার পাশাপাশি উৎপাদন বাড়তে থাকলেও ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উৎপাদনকারীদের। আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত করছেন বলে জানান শুঁটকি উৎপাদনকারীরা।
সম্প্রতি সরেজমিনে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ, তাড়াশ ও উল্লাপাড়া অঞ্চলে দেখা যায় শুঁটকির চাতালে কর্মব্যস্ত রয়েছেন শ্রমিকরা। হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের দু-ধারে গড়ে উঠেছে এসব চাতাল। বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ শুকিয়ে বাজারজাতকরণের প্রক্রিয়া করা হচ্ছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের তিন উপজেলা ছাড়াও নাটোরের গুরুদাসপুর ও সিংড়া, পাবনার চাটমোহর ও ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর এবং নওগাঁর আত্রাই উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ে শস্য ও মৎস্যভান্ডার চলনবিল। বর্ষা মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের সর্বাধিক দেশীয় মাছ উৎপাদন হয় এ বিলে। বিলের পানি কমতে শুরু করলে মাছ ধরার ধুম পড়ে যায়। আর তখনই উৎপাদন শুরু হয় শুঁটকি মাছের।
উল্লাপাড়া উপজেলার বিনায়েকপুর গ্রামের আব্দুল গফুর, রফিকুল ইসলাম, মনজিল হোসেন, ধরইল গ্রামের আবু বক্কার সিদ্দিকীসহ একাধিক শুঁটকি উৎপাদনকারী বলেন, বর্ষা মৌসুমের শেষের দিকে সেপ্টেম্বর মাস থেকে তারা চাতাল স্থাপন করে শুঁটকির উৎপাদন শুরু করেন।
ওই সময় জেলেদের জালে ধরা পড়ে প্রচুর পরিমাণে দেশীয় প্রজাতির মাছ। এসব মাছ জেলেদের কাছ থেকে কিনে শুরু হয় শুঁটকি উৎপাদনের প্রক্রিয়া। স্থানীয় নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা চাতালে কাজ করেন। এভাবে টানা ছয় মাস শুঁটকি উৎপাদন করেন তারা। এ অঞ্চলে ২০টির মতো চাতালে শতাধিক নারী শ্রমিক ও অর্ধ শতাধিক পুরুষ শ্রমিক কাজ করেন।
তারা আরও বলেন, এক কেজি শুঁটকি উৎপাদন করতে তিন থেকে চার কেজি তাজা মাছ কিনতে হয়। ভরা মৌসুমে তাজা বড় পুঁটি প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা দরে এবং ছোট পুটি ৪০-৫০ টাকা দরে কেনা হয়। প্রতি মণ শুঁটকি ১৬-১৭ হাজার টাকায় বিক্রি করলে কিছুটা লাভ হয়। প্রকারভেদে অন্যান্য মাছও এভাবেই ক্রয়-বিক্রয় হয়।
ধরইল গ্রামের দেলবার হোসেন বলেন, শুঁটকির চাহিদা থাকলেও আড়তদারদের সিন্ডিকেটের কারণে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছি না আমরা। সকালে এক দামে কিনলেও বিকেলেই মণ প্রতি ২ থেকে ৩ হাজার টাকা কমে বিক্রি করতে হয়। এতে শুঁটকি উৎপাদনকারীরা লোকসানের মুখে পড়েন।
আব্দুল গফুর নামে অপর এক শুঁটকি উৎপাদনকারী বলেন, আমরা ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে শুঁটকি উৎপাদনের ব্যবসা করি। অনেক সময় আমাদের পুঁজি ফিরে পাওয়াই দায় হয়ে পড়ে। আমাদের শুঁটকিগুলো ভারতেও রপ্তানি হয়। মাঝে মধ্যে ভারতের ব্যবসায়ীরা সরাসরি আমাদের কাছ থেকে ন্যায্য দামে মাছ কেনেন। কিন্তু সৈয়দপুরের আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে ভারতীয়দের আমাদের কাছে আসতেই দেয় না।
সৈয়দপুরের ইসলামপুর এলাকার আড়তদার রবিউল ইসলাম মোবাইল ফোনে বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সারাদেশেই শুঁটকির সরবরাহ করি। এছাড়া ভারতেও রপ্তানি হয়। বাজারে যখন যে দাম থাকে আমরা উৎপাদনকারীদের তেমন দামই দিয়ে থাকি।
সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. সাহেদ আলী বলেন, তাড়াশ ও উল্লাপাড়া অঞ্চলে শুঁটকি উৎপাদনের জন্য অন্তত ২০টি চাতাল রয়েছে। এর সঙ্গে শতাধিক ব্যবসায়ী জড়িত রয়েছেন। গত বছর এ অঞ্চলে ১৬২ টন শুঁটকি উৎপাদন হয়। এ বছর উৎপাদন আরও বেড়েছে। আশা করা যাচ্ছে মৌসুম শেষে ২শ মেট্টিক টন শুঁটকি মাছ উৎপাদন হবে।
তিনি আরও বলেন, মৎস্য অফিস থেকে এসব ব্যবসায়ীদের কারিগরি সহায়তা দেওয়া হয়। তবে এ বিষয়ে সরকারি কোনো প্রকল্প না থাকায় আর্থিক সহযোগিতা করা সম্ভব হচ্ছে না।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৯
আরএ