বুধবার (১ জানুয়ারি) সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে এ আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের বিনিয়োগবান্ধব নীতি একইসঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত ও কোটা-মুক্ত সুবিধা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করছে।
কূটনীতিক এবং বিদেশি ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, উইন-উইন পরিস্থিতির জন্য ব্যবসার সুবিধার্থে বিনিয়োগ এবং সোর্সিংয়ের জন্য বাংলাদেশকে বেছে নিন।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজার ও আঞ্চলিক বাজারের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় ১৭ কোটি ভোক্তার বাজার নিয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার গেটওয়ে হওয়ায় প্রায় চার বিলিয়ন ভোক্তার সঙ্গে সংযুক্ত। বাংলাদেশ বিশ্বে এখন বিনিয়োগ এবং সোর্সিংয়ের জন্য সর্বাধিক অনুকূল গন্তব্য হয়ে উঠেছে।
বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের নতুন নতুন বাজার খোঁজার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কীভাবে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ করা যায় সেটা খুঁজে বের করতে হবে।
ইকোনোমিক কূটনীতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন ডিপ্লোমেসিটা হয়ে গেছে ইকনোমিক ডিপ্লোমেসি। এখন আর শুধু পলিটিক্যাল দিক দেখলে হবে না। ব্যবসা-বাণিজ্য কীভাবে সম্প্রসারণ করা যায়, কীভাবে নতুন নতুন বাজার খুঁজে পাওয়া এবং নতুন নতুন পণ্য আমরা যাতে রপ্তানি করতে পারি, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।
বিভিন্ন দূতাবাসে বাণিজ্যিক উইং খোলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাণিজ্যিক উইং খোলা হয়েছে যাতে এই ব্যবসা-বাণিজ্যটা আরও সহজ হয়।
রপ্তানি বাড়াতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
নতুন বাজার খোঁজার পাশাপাশি পণ্যমুখীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রপ্তানির ক্ষেত্রে আমি বলবো একটা দুইটা পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা না। আরও অধিক পরিমাণে পণ্য যেন আমরা উৎপাদন করতে পারি, রপ্তানি করতে পারি আবার দেশের বাজারেও বা প্রতিবেশী দেশগুলোতে যাতে সেই পণ্যটা প্রয়োজন হয় সেদিকে আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছি।
পণ্য রপ্তানিতে প্রতিবেশী দেশগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা।
বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন তিনি।
দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য সারাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
তথ্য-প্রযুক্তি সেক্টরের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যত বেশি ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন, ব্যবহার এবং রপ্তানি করতে পারবো, আমাদের অর্থনীতিতে তা আরও বেশি অবদান রাখতে পারে। আমি মনে করি, আইসিটি সেক্টরটাই আমাদের সব থেকে বড় একটা সেক্টর হবে ভবিষ্যতে। এই পণ্য রপ্তানি করে আমরা বিশাল অংকের অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হবো।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে মেলার প্রাঙ্গণের প্রধান গেটে ফিতা কেটে ২৫ তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী মেলার ভেতরে প্রবেশ করেন এবং বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়নসহ বিভিন্ন স্টল ও প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ জাফর উদ্দিন, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান ফাতিমা ইয়াসমিনসহ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।
আরও পড়ুন>>পুরনো সব ফাইল ক্লিয়ার করে প্রধানমন্ত্রীর নতুন বছর শুরু
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো আয়োজিত এ মেলায় এবার বাংলাদেশসহ ২১টি দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৪৮৩টি প্যাভিলিয়ন ও স্টল স্থান পেয়েছে।
মেলায় প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন রাখা হয়েছে ৬৪টি। এছাড়া সাধারণ প্যাভিলিয়ন ১৩টি, সাধারণ মিনি প্যাভিলিয়ন ৫৯টি, প্রিমিয়াম মিনি প্যাভিলিয়ন ৪২টি। মেলা প্রাঙ্গণে রেস্তোরাঁ থাকবে দু’টি, স্ন্যাকস বুথ সাতটি, প্রিমিয়ার স্টল ৮৪টি, সংরক্ষিত প্যাভিলিয়ন ছয়টি, সংরক্ষিত মিনি প্যাভিলিয়ন আটটি, সাধারণ স্টল ১০৭টি, ফুড স্টল ৩৫টি রাখা হয়েছে। পাশাপাশি থাকছে ২৭টি বিদেশি প্যাভিলিয়ন, বিদেশি মিনি প্যাভিলিয়ন ১১টি এবং বিদেশি প্রিমিয়াম স্টল রাখা হয়েছে ১৭টি।
মেলা প্রতিদিন দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য সকাল ১০টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। মেলায় প্রবেশের জন্য প্রাপ্ত বয়স্কদের টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৩০ টাকা। তবে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের টিকিটের মূল্য আগের মতো ২০ টাকায় রাখা হয়েছে।
১৯৯৫ সালে শুরু হয় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ফেয়ার (ডিআইটিএফ)।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০২০
এমইউএম/এএটি