পাশাপাশি আগামী ২০২০-২০২১ বাজেটে করপোরেট কর কমিয়ে আনা হবে। এসব বিষয় পর্যালোচনা করছে অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
জানা গেছে, চলতি বাজেটের আর মাত্র দুই মাস বাকি রয়েছে। এ সময়ের জন্য হলেও করপোরেট কর কমিয়ে দেওয়া হতে পারে। বিষয়টি এনবিআরকে পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছে। আবার শিল্প খাতের ঋণগ্রহীতাদের হিসাব আপডেট রাখতে বলা হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। কেউ যেন করোনাভাইরাসের প্রভাবের কারণে নতুন করে ঋণখেলাপি না হন সেদিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে সরকার সুদ বাবদ ভর্তুকি দিয়ে শিল্পোদ্যোক্তাদের সহায়তা দেবে বলে জানানো হয়েছে। তবে কী পরিমাণ ভর্তুকি দেওয়া হবে বা করপোরেট কর কতটুকু কমানো হবে তা এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিপর্যস্ত শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে সরকারের উচিত দ্রুত পুনরুদ্ধার কার্যক্রম গ্রহণ করা। যদিও একাধিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে কিন্তু সেটি শিল্প-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে যথেষ্ট নয়। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অনুধাবন করতে পেরেছেন। ফলে তিনি ইতিমধ্যে শিল্পোদ্যোক্তাদের ব্যাংক ঋণের সুদের বিষয়ে চিন্তা না করার পরামর্শ দিয়েছেন।
তারা মনে করেন, প্রণোদনা প্যাকেজ পলিসির পাশাপাশি শিল্প খাতকে রক্ষায় আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফ করা অত্যন্ত জরুরি। শিল্পোদ্যোক্তাদের থাকা ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফ করা হলে বরং শিল্প খাতের বিপর্যয় ঠেকানো সহজ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ ক্ষেত্রে সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যবসায়ী, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সমন্বয় করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন পলিসি নির্ধারণের পরামর্শ দিয়েছেন শিল্প খাত-সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে প্রণোদনার বাস্তবায়ন ও শিল্পোদ্যোক্তাদের ব্যাংক সুদের বিষয়ে কীভাবে সহায়তা দেওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে ব্যাংকের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভিডিও কনফারেন্স করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আর ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দিতে ইতিমধ্যে ব্যাংকগুলোর দৈনন্দিন নিরাপত্তা সঞ্চিতি ও বিধিবদ্ধ জমার হার (সিআরআর, এসএলআর) কমানো হয়েছে। একই সঙ্গে করোনার প্রভাব কেটে গেলে বেসরকারি শিল্প খাতে ঋণপ্রবৃদ্ধি বাড়ানোর বিষয়েও ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) সাবেক প্রেসিডেন্ট ও এ কে খান অ্যান্ড কোম্পানির পরিচালক আবুল কাশেম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কভিড-১৯-এর প্রভাবে পুরো শিল্প খাতই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে নেমে এসেছে স্থবিরতা। ফলে শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে সরকারের উচিত দ্রুত একটা কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়া। ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফ করা খুবই জরুরি। অন্যথায় করোনা-পরবর্তী দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা হবে আরও নাজুক, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কর্মসংস্থান ও সামষ্টিক অর্থনীতিতে। এ নিয়ে শিল্প খাতের উদ্যোক্তারা চরম উদ্বিগ্নতায় দিন কাটাচ্ছেন। একদিকে জনজীবন বিপর্যস্ত, অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ। কিন্তু ব্যাংক ঋণের সুদ তো আর থেমে নেই। কিস্তি স্থগিত করা হয়েছে। কিন্তু সেটি তো পরে দিতেই হবে। ফলে এটি সাময়িক স্বস্তিদায়ক হলেও দীর্ঘস্থায়ী কোনো সমাধান নয়। এ ক্ষেত্রে সরকার চাইলে একটি সমন্বিত পলিসি নিয়ে সুদ বাবদ ভর্তুকি দিতে পারে। তাহলে শিল্পমালিকদের ওপর চাপ কিছুটা হলেও কমে আসবে। পৃথিবীর অনেক দেশেই এ সংকট মোকাবিলায় এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন
বাংলাদেশ সময়: ১২৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২০
টিএ