ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

বান্দরবানের পাহাড়ে হচ্ছে চা চাষ, বিদেশে রপ্তানির আশা

কৌশিক দাশ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২০
বান্দরবানের পাহাড়ে হচ্ছে চা চাষ, বিদেশে রপ্তানির আশা ছবি: বাংলানিউজ

বান্দরবান: বান্দরবানের সবুজ পাহাড়জুড়ে হচ্ছে চায়ের চাষ। আম, জাম, লিচু, কমলার পাশাপাশি স্থানীয় চাষিরা বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে করছে চায়ের চাষ।

এদিকে চা উৎপাদনের পাশাপাশি বান্দরবানেই প্রক্রিয়াজাত করতে পারায় খুশি স্থানীয় চাষিরা।  

বান্দরবান চা বোর্ডের আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রকল্পের আওতায় ২০০৪ সাল থেকে বান্দরবানে শুরু হয় চা চাষ।

বান্দরবান জেলা সদর ছাড়া ও রুমা এবং রোয়াংছড়ি উপজেলার প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে চা বোর্ডের নিবন্ধিত ৩২৬ জন চাষি চা চাষ করছেন। দীর্ঘদিন চা চাষ করে বাজারজাত করতে নানা সমস্যা হলে গত বছর থেকে সেই সমস্যা সমাধানে বান্দরবানের সুয়ালক ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়ায় প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হয়েছে চা প্রক্রিয়াজাত কারখানা। আর চা প্রক্রিয়াজাত কারখানা চালু হওয়ায় চাষিরা এখন আগের চেয়ে চা চাষে আগ্রহ পাচ্ছেন আরও বেশি।

বান্দরবানের সুয়ালক এলাকার চা চাষি মো. আব্দুর রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, ২০১০ সাল থেকে আমি চা চাষ শুরু করি এবং চাষ শুরু করে প্রথমে অনেক কষ্ট পেয়েছি এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তবে পরবর্তীকালে বান্দরবানের সুয়ালক ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়ায় ২০১৯ সাল থেকে নতুন চা কারখানা তৈরি হওয়ায় আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। এখন আমাদের সবুজ চা পাতা নষ্ট হয় না। ফলে কারখানায় বিক্রি করতে পারছি।

বান্দরবানের রোয়াংছড়ির লাপ্পাইমুখ এলাকার চা চাষি মেম্যানু মার্মা বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশ চা বোর্ডের বান্দরবান আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে চা চাষ শুরু করেছি। পরবর্তীকালে আমার দেখাদেখি অনেকে চা চাষে উদ্ভুদ্ধ হয়েছে।

বান্দরবানের সুয়ালক এলাকার চা চাষি মো. ইয়াকুব আলী সিকদার বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বান্দরবানে চা চাষ করে আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাই। একদিন বান্দরবানে চা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে যাবে, এমনটাই আশা আমাদের।

ছবি: বাংলানিউজ

বান্দরবানের চা বোর্ডের আঞ্চলিক কার্যালয়ের তথ্যমতে, বান্দরবানে শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৯ লাখ ৫০ হাজার চা চারা উৎপাদন করা হয়েছে এবং বিনামূল্যে ক্ষুদ্র চাষিদের সাড়ে ৫ লাখ চারা বিতরণ করা হয়েছে।  

চা বোর্ডের আঞ্চলিক কার্যালয়ের তথ্যমতে আরও জানা যায়, নতুন প্রক্রিয়াজাত কারখানা স্থাপিত হওয়ায় বান্দরবানের চা গুণেমানে উৎকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন চা বোর্ডের কর্মকর্তারা। আর এই কারখানা পুরোদমে চালু হলে বান্দরবানের চা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হবে।

বাংলাদেশ চা বোর্ড বান্দরবান আঞ্চলিক কার্যালয়ের সিনিয়র টি মেকার মো. আমীর আলী বাংলানিউজকে বলেন, বান্দরবানের সুয়ালক ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়ায় একটি চা ফ্যাক্টরি তৈরি হওয়ায় এখানকার চাষিরা নতুনভাবে চা চাষে আগ্রহ পাচ্ছেন। এই ফ্যাক্টরি স্থাপনের ফলে পার্বত্য এলাকার চা চাষিরা এখন আর সবুজ চা পাতা বিক্রি ও প্রক্রিয়াজাত করতে ভোগান্তিতে পড়বেন না।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের বান্দরবান আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক সুমন সিকদার বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশে চা উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করে রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ চা বোর্ড বৃহদায়তন চা বাগানগুলোর পাশাপাশি ক্ষুদ্রতায়ন চা চাষ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে বান্দরবানে প্রকল্পের আওতায় ক্ষুদ্র চা বাগান মালিকদের চা পাতার ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রকল্পের আওতায় একটি চা প্রক্রিয়াজাত কারখানা বান্দরবানে স্থাপন করা হয়েছে। কারখানাটি লাভজনক অবস্থায় যেতে বান্দরবান থেকে যে পরিমাণ সবুজ চা পাতা প্রয়োজন, তা পেতে আনুমানিক ৩-৪ বছর সময় লাগবে। শুরুর দিকে যদিও কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে তাই ভর্তুকি দিয়ে কারখানা চালানো হচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে বাগানগুলো থেকে সবুজ পাতার উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে বান্দরবানের কারখানাটি লাভজনক পর্যায়ে চলে যাবে।  

ছবি: বাংলানিউজ

সুমন সিকদার আরও বলেন, বান্দরবানের মাটি উন্নতজাতের চায়ের জন্য খুবই উপযোগী হওয়ায় এখান থেকে সেরামানের চা পাওয়া সম্ভব। যা একটি স্বতন্ত্র ব্র্যান্ড হিসেবে বিদেশে রপ্তানি করা যাবে।

এদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে বান্দরবানের চা বাগান ও কারখানা পরিদর্শন করেছেন চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. জহিরুল ইসলাম (এনডিসি, পিএসসি)। পরিদর্শন শেষে তিনি আগামীতে পার্বত্য এলাকায় আরও নতুন নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে চা চাষ সম্প্রসারণ করে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা পরির্বতনে কাজ করে যাবার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।  

চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলা চা চাষের জন্য বেশ উপযোগী। আর চা চাষিরা যদি বাগানে পর্যাপ্ত সময় আর শ্রম ব্যয় করেন, তাহলে বাগান থেকে প্রচুর সবুজ পাতা উৎপাদন হবে এবং বান্দরবানের ফ্যাক্টরি সার্বক্ষণিক খোলা রাখার পাশাপাশি চাষিদের উন্নয়ন হবে।

বর্তমানে বান্দরবান জেলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম ক্ষুদ্রায়তন চা চাষ প্রকল্পের আওতায় ৮৭ দশমিক ৫০ হেক্টর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। এতে প্রতি মাসে প্রায় ৫ হাজার কেজি সবুজ চা পাতা পাওয়া যাচ্ছে। আগামীতে আরও বাগান আর চা চাষি বাড়লে উৎপাদন আরও বাড়বে। আর বান্দরবানের চা দেশের পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে বলে আশাবাদ চা বোর্ডের কর্মকর্তা ও চা ব্যবসায়ীদের।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২০
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।