ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

খরচ কম ও লাভজনক হওয়ায় রাঙামাটিতে বাড়ছে আদা-হলুদ চাষ

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২০
খরচ কম ও লাভজনক হওয়ায় রাঙামাটিতে বাড়ছে আদা-হলুদ চাষ হলুদের ক্ষেত। ছবি: বাংলানিউজ

রাঙামাটি: পাহাড়ি জেলা রাঙামাটি। রূপ-লাবণ্য এবং প্রকৃতির জন্য এ জেলার যেমন আলাদা সুখ্যাতি রয়েছে তেমনি এ এলাকার আদা, হলুদের কদর রয়েছে পুরো দেশ জুড়ে।

মানুষের রসনা বিলাসে বর্তমানে দিনদিন মসলার জনপ্রিয়তা বাড়ছে। দিন যতই অতিবাহিত হচ্ছে ততই মসলার বাজার বড় হচ্ছে। বাড়ছে ফসলটির ব্যবসার পরিধিও।

রান্নার অন্যতম অনুসঙ্গ হচ্ছে হলুদ এবং আদা। বিয়ে বাড়ি, সাজগোজ কিংবা রান্না সব ক্ষেত্রেই আদা-হলুদের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। খরচের তুলনায় লাভ দ্বিগুন এবং চাষ করা যায় অন্য ফসলের সঙ্গে। আদা-হলুদের ক্ষেতে রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ তেমন একটা হয় না বললেই চলে। এ কারণে কৃষকের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে আদা-হলুদ চাষ এবং সাবলম্বী করছেন নিজেদের।

রাঙামাটির মাটি মসলা চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় এবং দাম ভাল পাওয়ায় আদা, হলুদ চাষের দিকে ঝুঁকছে পাহাড়ি কৃষকরা। এজন্য তারা পাহাড়ের প্রতি ভাজে ভাজে ঝুম ধান, কলা, পেঁপে চাষের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে আদা, হলুদ চাষে মনোনিবেশ করেছেন নিজেদের। তাই তাদের চাষের পতিত জমিতে এ ফসল চাষ করার কারণে অতিরিক্ত অর্থ নিজেদের পকেট ভরছে।

জেলা সদরের সাপছড়ি ইউনিয়নের যৌথ খামার এলাকার চাষি মানিক চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আমি ঝুম চাষের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে এইবার পাঁচ একর জমিতে আদা-হলুদের চাষ করেছি। আশাকরি এইবার আমার সংসারে অতিরিক্ত আয় বাড়বে।

মগবান ইউনিয়নের বড়াদম এলাকার কৃষক কালাচান চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আদা-হলুদ চাষ অধিক লাভজনক। কষ্ট কম, রোগ-বালাই নেই এ ফসলে। যে কারণে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় আমরা ফসলটির চাষ বাড়াচ্ছি।

এলাকার কৃষাণী তান্যাবী চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, এক সময় আমরা শুধু ঝুম চাষ বলতে চাল, মরিচ, গম, ভুট্টার চাষ করতাম। এখন বেশ কয়েক বছর ধরে অধিক লাভজনক ফসল হিসেবে আদা-হলুদের চাষ করছি। আমি স্বামী-সন্তান নিয়ে অনেক ভালো আছি।

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন গ্রামে চাষিরা এখন ব্যস্ত ক্ষেতের আদা-হলুদ চাষের পরিচর্যা নিয়ে। প্রতিবছর ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আদা ও হলুদের চাষ হচ্ছে। প্রতি হেক্টরে ১২ টন করে আদা ও চারটন করে হলুদ ফলন পাওয়া যাচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটি অঞ্চলের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শান্তিময় চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, পাহাড়ে দিনদিন আদা-হলুদের চাষ বাড়ছে। কারণ ফসলটিতে খরচ কম, অধিক লাভ এবং রোগ-বালাই প্রতিরোধক হওয়ায় কৃষকরা এসব ফসল চাষের দিকে বেশি ঝুঁকছেন।

তিনি আরও বলেন, ভাল মানের আদা-হলুদ চাষে নিয়মিত চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষি বিভাগ থেকে। তাই যেকোনো কৃষক কৃষি বিভাগ থেকে সাহায্য এবং পরামর্শ চাইলে যতো দ্রুত সম্ভব সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটি অঞ্চলের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক বাংলানিউজকে জানান, এ এলাকায় আগে থেকেই আদা-হলুদের জন্য সুপরিচিতি। বর্তমানে এ ফলন চাষের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। কেননা কম খরচে অধিক মুনাফা লাভ করা যাচ্ছে। বাংলা বছরের অগ্রহায়ণ মাসে নতুন করে আদা-হলুদের চাষ শুরু করা হয়।

তিনি আরও জানান, এ বছরে রাঙামাটিতে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে আদা-হলুদের চাষ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে চাষ করতে আড়াইটন আদা কিংবা হলুদের বীজ ব্যবহার করা হয়। এ ফসলগুলোর মেয়াদকাল ৩০০ দিন। এর মধ্যে হেক্টর প্রতি ১২ টন আদা এবং চারটন শুকনা হলুদ পাওয়া যাচ্ছে।

পাহাড় ও পতিত জমিতে দরিদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের দিয়ে চাষ বাড়ানো গেলে মসলা জাতীয় ফসল চাষে রাঙামাটিতে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।