ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সবুজ শিল্পবিপ্লব ঘটতে যাচ্ছে বাংলাদেশে, প্রকল্প উঠছে একনেকে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২১
সবুজ শিল্পবিপ্লব ঘটতে যাচ্ছে বাংলাদেশে, প্রকল্প উঠছে একনেকে ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: সবুজ শিল্পবিপ্লব ঘটতে যাচ্ছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে। দুটি ব্লকে প্রায় এক হাজার একর জায়গাজুড়ে পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা (গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি) গড়ে তোলার মাধ্যমে এই বিপ্লব ঘটাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা)।

আর এতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে যাচ্ছে দেশের বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ।  

প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ঋণ ৩ হাজার ৯৬৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। প্রকল্পে সরকারি অর্থায়ন ৩৭৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।  

অর্থনৈতিক জোন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরী (বিএসএমএসএন) সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি দেশের শিল্প খাতের জন্য মডেল হিসেবে কাজ করবে। একইসঙ্গে এটিই হবে দেশের সবচেয়ে বড় ইকোনমিক জোন, যার মোট আয়তন ৩০ হাজার একর। এতে কর্মসংস্থান হবে অন্তত ১৫ লাখ মানুষের।

পরিকল্পনা কমিশন ও বেজা সূত্র জানায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উন্নয়ন প্রকল্প’ উঠছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায়।

মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এ প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।

বেজার নির্বাহী সদস্য (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মোহাম্মদ ইরফান শরীফ বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্বপ্নের। বাংলাদেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে নতুন দ্বার উন্মোচন হবে। সকল সুযোগ সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমেই সবুজ শিল্পবিপ্লব ঘটাতে যাচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উন্নয়ন প্রকল্প’।

প্রকল্পটি ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে করিডোর ও বঙ্গোপসাগর উপকূলের নিকটবর্তী স্থানে চট্টগ্রামের মীরসরাই ও সীতাকুন্ড এবং ফেনী সোনাগাজী উপজেলায় যোগাযোগ সুবিধা থাকায় অভিবাসন বা সেটেলমেন্টর প্রয়োজন না থাকায় উক্ত এলাকায় সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিল্প নগরের জোন ‘২এ’ এবং জোন ২বিসহ অন্যান্য জোনসমূহে অবকাঠামো উন্নয়ন ও ইউটিলিটি সুবিধা সৃষ্টি করে অত্যাধুনিক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার লক্ষ্যে মীরসরাই ও সোনাগাজী উপজেলায় প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্প এলাকায় অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা হবে। শিল্পনগরকে পরিবেশ সহনশীল গ্রিন অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে লক্ষ্য হচ্ছে টেকসইকরণ এবং পরিবেশ সহনশীলতা নীতি ব্যবহারের উপকারিতাসমূহ প্রদর্শন করা। অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণপূর্বক নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। প্রকল্পটি তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের আওতায় প্রায় ৩০টি জোনে বিভক্ত।  

শিল্পনগরের জোন-১ (মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল) এর আওতাভুক্ত ৫৪৮ একর ভূমি উন্নয়নসহ অন্যান্য জোনের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ইউটিলিটি সেবা সৃষ্টি করা হবে। জোন ২এ-তে ৯৩৯ একর ও জোন ২বি-তে ৪৭৪ একরেরও উন্নয়ন করা হবে।

শিল্পনগরে ৩০ কিলোমিটার চারলেন সড়ক, পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস নেটওয়ার্ক, নিরাপত্তা বেষ্টনী, প্রশাসনিক ব্যবস্থা উন্নয়ন, ডিস্যালাইনেশন প্ল্যান্ট, স্টিম নেটওয়ার্ক, বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট, সোলার প্যানেল ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্থাপনের মাধ্যমে ‘গ্রিন ইকোনোমিক জোন’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

এ শিল্পনগরী ঘিরে আশপাশের এলাকাগুলোতেও গড়ে উঠছে বিভিন্ন শিল্প-কারখানা। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরীর সঙ্গে যুক্ত হবে চট্টগ্রামে নির্মিতব্য বে-টার্মিনাল। এতে সহজ হবে পণ্য আমদানি-রপ্তানি। বিশেষ করে এই শিল্পনগরীতে উৎপাদিত পণ্য সরাসরি রপ্তানি হবে বে-টার্মিনাল দিয়ে। এখন পর্যন্ত এ শিল্পনগরীতে দেশের বিভিন্ন কোম্পানির পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারী হিসেবে এগিয়ে এসেছে জাপান, চীন, ভারত, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া।

জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরীর সবুজ অংশে ৫০০ একর জায়গাজুড়ে নির্মিত হচ্ছে বসুন্ধরা শিল্পাঞ্চল। এই শিল্পনগরীতে জমি বরাদ্দ পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে বসুন্ধরাই সর্বপ্রথম ভারী শিল্প স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। এ লক্ষ্যে দ্রুত এগিয়ে চলেছে শিল্প-কারখানা স্থাপনের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। ইতোমধ্যে প্রশাসনিক ভবনের বেইজমেন্টের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। সম্পন্ন হয়েছে ডরমেটরি ভবনের দোতলার ছাদ। আর বসুন্ধরা কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের কাজ শুরু হবে আগামী মাসেই। সব ঠিক থাকলে আগামী বছরের ডিসেম্বরে উৎপাদন শুরু হবে এই কারখানায়। বসুন্ধরা মাল্টি স্টিল মিলস নির্মাণকাজ উদ্বোধনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এটিরও ২০২১ সালের মধ্যে উৎপাদনে যাওয়ার কথা। আর বসুন্ধরা প্রি-ফেবরিকেটেড কোম্পানির কারখানা নির্মাণকাজের সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে। এমনকি এ শিল্পনগরীতে বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন নিয়মিত দাফতরিক কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে আগামী মাস থেকেই। শুধু বসুন্ধরা ইকোনমিক জোনেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অন্তত ৪০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এছাড়া সবুজ শিল্পাঞ্চল অংশে এশিয়ান পেইন্ট, মডার্ন সিনটেক্সের শিল্প-কারখানার অবকাঠামোর নির্মাণযজ্ঞ চলছে দ্রুতগতিতে।

শুধু বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনকে ৫০০ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।  

বেজার তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর পর্যন্ত দেশি-বিদেশি মিলিয়ে অন্তত ১৯ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে এই শিল্পনগরীর অনুকূলে, যার ১০ বিলিয়ন ডলারই বিদেশি বিনিয়োগ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২১
এমআইএস/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।