ঢাকা: করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বহু মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ায় সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন এই খাতের বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে সত্যিকারের যোগ্য ব্যক্তিরা যাতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে ঢুকতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করতে যত দ্রুত সম্ভব একটি ডাটাবেজ তৈরির তাগিদ দিয়েছেন তাঁরা।
শনিবার (৩০ জানুয়ারি) ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ডিজেএফবি) ও বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি) আয়োজিত অনলাইন সেমিনারে বক্তারা আরও বলেন, প্রতিবছর বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়, তার বড় একটি অংশই চলে যায় সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশনের পেছনে। এতে নিম্ন আয়ের মানুষদের কাছে সামাজিক সুরক্ষার বরাদ্দের পরিমাণ খুব কম পৌঁছে। তাই বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে মোট জিডিপির চার শতাংশ বরাদ্দ করার প্রস্তাব করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
‘কোভিড ১৯: সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি ও স্বাস্থ্য অধিকার’ শিরোনামের সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মফিদুল ইসলাম, অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট এর নির্বাহী পরিচালক জামিল এইচ চৌধুরী, ডিজেএফবির সভাপতি হুমায়ুন কবীর, এনজিও সংগঠক শাহ মবিন জিন্নাহ, মমতাজ আরা বেগম, এসএম হারুন আর রশিদ লাল, ড. জাহিদ মাসুদ, শিক্ষক রাবেয়া বিনতে করিমসহ অন্যরা। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন ডিজেএফবির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সুশান্ত সিনহা।
মূল প্রবন্ধে ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে নতুন করে অসংখ্য মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। তাদের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। সেটি করতে হলে এই খাতে অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে একসময় ভুলত্রুটি ছিল। অবশ্য সেটি এখন অনেকটাই কমে এসেছে।
সেমিনারে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের প্রধান (অতিরিক্তি সচিব) মফিদুল ইসলাম বলেন, জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। সেটি বাস্তবায়নে সরকার চলমান অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনতে বিভিন্ন কর্মপন্থা ঠিক করা হয়েছে।
অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট এর নির্বাহী পরিচালক জামিল এইচ চৌধুরী বলেন, গত বছর মার্চে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের পর বহু মানুষ ঋণ করে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটিয়েছে। সরকারের অনেক সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি আছে। তবে সেটি গ্রামকেন্দ্রীক। শহরকেন্দ্রীক কর্মসূচি নেই। কোভিডের সময় দেশের স্বাস্থ্য সেবা কতটা নাজুক সেটা ফুটে ওঠেছে। কতজন দরিদ্র মানুষ নিজেদের কোভিড পরীক্ষা করিয়েছেন আমরা জানি না। নিম্ন আয়ের মানুষরা টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে কতটা অগ্রাধিকার পাবে, সেখানেও আছে দুশ্চিন্তা।
স্বাস্থ্য খাতে যে বরাদ্দ তাকে অপ্রতুল উল্লেখ করে এই খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি। একইসঙ্গে সামাজিক সুরক্ষা খাতেও বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান জামিল এইচ চৌধুরী।
সেমিনারে জানানো হয়, চলতি অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা মোট বাজেটের ১৭ শতাংশ। মোট জিডিপির তিন শতাংশ। অবশ্য এর মধ্যে বড় একটি অংশ চলে যায় পেনশনের পেছনে। সত্যিকারের দরিদ্র মানুষের কাছে বরাদ্দ পৌঁছে মোট জিডিপির মাত্র ১.২৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২১
এমআইএস/এইচএডি