ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ভোলার দুর্গম চরে সবজি চাষে বিপ্লব

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০২১
ভোলার দুর্গম চরে সবজি চাষে বিপ্লব সবজি ক্ষেতে ঝুলছে চিচিঙ্গা। ছবি: বাংলানিউজ

ভোলা: মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর ভোলার চরাঞ্চলে সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। চরের বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেতে এখন সবুজের সমারোহ।

 

কৃষকের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে রয়েছে ক্যাপসিকাম, শসা, বটবটি, চিচিঙ্গা, করলা, লাউ, টমোটো, খিরা, মিষ্টি কুমড়া ও শিম।  

সূত্র জানিয়েছে, জেলার সদর উপজেলার মাঝের চর, রামদাসপুর চর, চর চটকিমারা, চর হোসেন, দৌলতখান উপজেলার মদনপুর চর, মাঝের চর, বোরহানউদ্দিনের চর লতিফ, গঙ্গাপুর চর, লালমোহনের কচুয়াখালীচর, চর শাহজালাল, তজুমদ্দিনর উপজেলার চর জহিরুদ্দিন, মনপুরার চর কলাতলি, ঢালচর, বদনার চর এবং  চরফ্যাশনের কুকরি-মুকরি, চর পাতিলাসহ বিভিন্ন চরে ধানের পাশাপাশি সবজি চাষ চলছে কয়েক বছর ধরে। এসব চরে এ বছর শত শত হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়েছে। এখানকার সবজি স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে নৌ পথে চলে যায় ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এছাড়া মাঝের চরের উৎপাদিত ক্যাপসিকাম দেশের বাইরেও রপ্তানি হচ্ছে। যা চরাঞ্চলের কৃষি খাতকে আরো সমৃদ্ধ করে তুলছে।

মদনপুরের বাসিন্দা লুৎফর পাটোয়ারী বলেন, বিগত বছরের মতো এ বছরও মদনপুরে সবজির বাম্পার আবাদ হয়েছে। এখানকার দুই শতাধিক চাষি সবজি আবাদ করছেন। তাদের সবার ক্ষেতের ফসলই ভালো হয়েছে এবং এতে তারা বেশ খুশি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মিনারা বেগম বলেন, চরের জমিতে ফসলের সমারোহ। এবার ফসলের ক্ষেতে শসা, খিরা, চিচিঙ্গাসহ সবজির চাষ হয়েছে। ফলন অনেক ভালো। এখানকার সবজি ভোলা শহরসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে।  

সবজি চাষি মো. ফিরোজ বলেন, এ বছর তিনি এক একর জমিতে চিচিঙ্গার চাষ করেছি। এ পর্যন্ত দেড় লাখ টাকার সবজি বিক্রি হয়েছে। আবাদ করতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ৪ লাখ টাকা। সামনে আরো ৫ লাখ টাকার সবজি বিক্রি হবে আশাকরি।  

মাঝের চরের ক্যাপসিক্যাম চাষি মো. হান্নান বলেন, এ বছর ৩ লাখ টাকা খরচ করে প্রায় ২ একর জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত ৩ লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি করেছি। মাঠে যে ক্যাপসিকাম আছে তা আরো ৫ লাখ টাকা মূল্যের হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোলার চরাঞ্চলে বছরের অন্য সময়টাতে ধান চাষ করা হলেও শুষ্ক মৌসুমে ব্যাপক পরিমাণে সবজির চাষ হয়। শুষ্ক মৌসুমে ৪ থেকে ৫ মাস সবজির বিপ্লব সাধিত হয় পুরো চরে। বিশেষ করে গত কয়েক বছর ধরে এসব চরে বাণিজ্যিকভাবে ক্যাপসিক্যাম চাষ অর্থনীতির নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা রাসেদ হাসনাত বলেন, ভোলার চরাঞ্চলে এ বছর সবজি আবাদ অনেক ভালো হয়েছে। আবহাওয়া, প্রতিবেশ ও বৃষ্টির পরিমাণ সব কিছু অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। এছাড়াও কৃষকদের কৃষি প্রণোদনা দেওয়ার ফলে কৃষকরা বেশ আগ্রহী ছিলেন চাষাবাদে। বর্তমানে সবজির বাজার দরও অনেক ভালো।

জানতে চাইলে ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু মো. এনায়েতউল্লাহ বলেন, এ বছর জেলায় ৯ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ২ হাজার হেক্টর সবজি আবাদ হয়েছে চরাঞ্চলে। ওই সব জমির ফলন ভালো হয়েছে। একদিকে যেমন আবহাওয়া অনুকূলে ছিলো অন্যদিকে পোকা-মাকড়ের আক্রমণও কম ছিলো। তাছাড়া কুয়াশার তেমন প্রভাব পড়েনি। এতে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। সবজির দামও ভালো পাচ্ছেন তারা।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।