ঢাকা: বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানি ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড (ইউবিএল) তার কর্মীদেরকে সব ধরনের হয়রানি ও সহিংসতা থেকে সুরক্ষা দিতে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা প্রণয়ন করেছে।
সম্প্রতি গৃহীত এই নীতিমালা দু’টি ইউনিলিভারের বৈশ্বিক নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চালু করা হয়েছে, যা সামাজিক অন্তর্ভুক্তিকে উৎসাহিত করবে এবং কর্মীদের সুরক্ষায় কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
প্রিভেনশন অন সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট (পিওএসএইচ) এবং সাপোর্ট সারভাইভরস অব অ্যাবিউস' (এসএসওএ) শীর্ষক নীতিমালা দু’টিতে ইউবিএলে কর্মরত প্রতিটি কর্মীর জেন্ডার, জাতিগত, যৌন আচরণ, প্রতিবন্ধিতা, ধর্ম, বয়স ও চরিত্র সংক্রান্ত যেকোনো ধরনের হয়রানি, ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও আক্রমণাত্মক আচরণ থেকে সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়টি সমুন্নত রাখা হয়েছে।
বিগত ২০২০ সালের জুন মাসে ইউএন (জাতিসংঘ) উইমেন থেকে প্রকাশিত বৈশ্বিক হিসাব অনুযায়ী, এর আগের এক বছরে বিশ্বজুড়ে প্রায় ২৪ কোটি ৩০ লাখ নারী ও মেয়ে শিশু তাদের ঘনিষ্ঠজনও সহকর্মীদের মাধ্যমে যৌন হয়রানি, শারীরিক নির্যাতন বা জবরদস্তির শিকার হয়েছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, সামাজিক ও আর্থিক কার্যক্রমের অভাবই এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রধান কারণ।
বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অন্য এক গবেষণা বলছে, ২০২০ সালের মার্চ ও এপ্রিলে দেশে নারী ও মেয়ে শিশুর ওপর সহিংসতার ঘটনা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৭০ শতাংশ বেড়েছে।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ বা বাড়িতে থেকে কাজ করা এখন নিউ নর্মাল বা নতুন স্বাভাবিকতায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, যারা কর্মস্থলকে নিজেদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বিবেচনা করতেন, নতুন স্বাভাবিকের এই সময়ে তারা পারিবারিক সহিংসতার শিকার হতে পারেন এবং সুরক্ষার অনুপস্থিতির কারণে তাদের উৎপাদনশীলতা কমে যেতে পারে। এছাড়া স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির পাশাপাশি তাদের মধ্যে হতাশা বাড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
ইউনিলিভার মনে করে, জেন্ডার অসমতার কারণে নারীরা পারিবারিকভাবে নির্যাতন ও অমর্যাদার শিকার হয়ে থাকে। তাই ইউনিলিভার বাংলাদেশের চালু করা বিশ্বমানের নীতিমালা এদেশের সরকারের গ্রহণ করা নীতিমালার সমান্তরালে কাজ করার মাধ্যমে নারী ও পুরুষের মধ্যে সমতা জোরদারে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় ইউনিলিভারে এখন নারী ব্যবস্থাপকদের আনুপাতিক হার অনেক বেশি। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ইউনিলিভার এর নারী ব্যবস্থাপকের হার প্রায় ৫০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যেটি ২০১০ সালে মাত্র ৩৮ শতাংশ ছিলো। ইউনিলিভার বাংলাদেশ তার কর্মীদের মধ্যে যারা পারিবারিক সহিংসতা বা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কিংবা হতে পারেন, তাদের সবাইকে সহায়তা প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কর্মীদের কল্যাণসাধনের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়েই নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করবে ইউনিলিভার।
ইউনিলিভার বাংলাদেশের অন্যতম লক্ষ্য হলো-প্রতিষ্ঠানটির যেসব কর্মী শারীরিক নির্যাতন ও পারিবারিক সহিংসতার শিকার হবেন, তাদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠা। যেসব কর্মী এ ধরনের নির্যাতন ও অমর্যাদার শিকার হবেন, তারা নিজেদের পাশাপাশি পরিবারের জন্যও ইউনিলিভার এর কাছ থেকে চিকিৎসা সেবা এবং মানসিক সহায়তা ও পরামর্শ পাবেন। উপরন্তু এসব ক্ষেত্রে কর্মীরা ১০ দিন পর্যন্ত সবেতন ছুটিও নিতে পারবেন। এছাড়া কর্মীরা চাইলে ওই সময়ে দেশে ইউনিলিভার এর যেকোনো কার্যালয়ে কাজ করার সুবিধাও পাবেন।
কর্মীদের কল্যাণসাধনের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথা উল্লেখ করে ইউবিএলের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেদার লেলে বলেন, ইউনিলিভার বাংলাদেশ তার সব কর্মীর জন্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কোম্পানি হিসেবে 'ব্যবসায়ের মৌলিক নীতিমালা'র আলোকে ইউনিলিভার শ্রদ্ধা, মর্যাদা ও প্রমিত ব্যবহার এর নীতি গ্রহণ করেছে। সে অনুযায়ী ইউবিএল এমন এক পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যেখানে মানবাধিকার, সমান সুযোগ-সুবিধা এবং যৌন হযরানিসহ সব ধরনের হয়রানিমুক্ত পরিবেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠবেন। সার্বিকভাবে আগামীর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে একটি সুন্দর ও নিরাপদ কর্মস্থল গড়ে তোলার লক্ষ্যেই নীতিমালা দু’টি গ্রহণ করেছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ।
ইউনিলিভার বাংলাদেশের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক সাকশী হান্ডা বলেন, অতীতে আমাদের যুগোপযোগী কর্মনীতি যেমন অগ্রনায়কের ভূমিকা পালন করেছে, এই নতুন স্বাভাবিক সময়েও একই ভূমিকায় অবতীর্ণ হলো। মহামারি শুরুর পর থেকেই সন্দেহাতীতভাবে অধিকাংশের জন্য বাড়িই এখন বর্ধিত কর্মস্থল। কর্মক্ষেত্র এবং বাড়ি- দুটোই অনিরাপদ হতে উঠতে পারে এবং এ ব্যাপারে ইউনিলিভার বাংলাদেশে সচেতন রয়েছে। আর সে কারণেই আমরা উক্ত নীতিমালা দু’টি বাস্তবায়ন করেছি। যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কেবল জিরো টলারেন্সই যথেষ্ট নয়, বরং যারা হয়রানির মুখোমুখি হচ্ছেন, তাদেরকে সহায়তা প্রদানও জরুরি। আমরা আশা করি, নতুন চালুকৃত নীতিমালাগুলো কর্মক্ষেত্রকে নিরাপদ করার পাশাপাশি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সহায়তা করবে। তাছাড়া সমাজের ক্ষত না সারিয়ে ভালোভাবে ব্যবসাও করা সম্ভব না। তাই চাকরিদাতাদেরকেই এই সমস্যা সমাধানে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২১
এএটি