সিলেট: ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটকে সামনে রেখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির উদ্যোগে প্রাক-বাজেট আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (২৯ মার্চ) দুপুরে ভিডিও কনফারেন্সে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, জাতীয় বাজেটে ব্যবসায়ী মহলের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত প্রস্তাবনাগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। প্রাক-বাজেট আলোচনা সভাটি আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সিলেট চেম্বার নেতাদের তিনি ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য বান্ধব বাজেট প্রণয়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কাজ করে যাচ্ছে। তিনি সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিসহ সারাদেশের ব্যবসায়ী মহলের কাছ থেকে প্রাপ্ত উপযুক্ত প্রস্তাবনাসমূহ যথাযথভাবে বিবেচনার আশ্বাস দেন।
স্বাগত বক্তব্যে সিলেট চেম্বারের সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব বলেন, জাতীয় বাজেট ঘোষণার প্রাক্কালে ব্যবসায়ী মহলের সঙ্গে মিলিত হওয়া ব্যবসাবান্ধব বাজেট প্রণয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
তিনি বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে যেসব বৃহৎ পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে রাজস্ব আহরণের বিকল্প নেই। তবে চলমান করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের সুবিধা-অসুবিধার প্রতি লক্ষ্য রাখাও একান্ত প্রয়োজন।
তিনি ইনওয়ার্ড রেমিটেন্সের ওপর ১০ শতাংশ কর মওকুফ, পর্যটন শিল্পের বিকাশে হোটেল ও রিসোর্ট নির্মাণের ক্ষেত্রে ১০ বছরের কর অবকাশ প্রদান, করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ, ট্রেড লাইসেন্স নতুন/নবায়নের ক্ষেত্রে অগ্রিম কর প্রদান রহিতকরণসহ বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, কয়লাসহ যেকোনো পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে আমদানিকারকগণ অগ্রিম শুল্ক-কর পরিশোধ করে থাকেন, কিন্তু কোন কারণে পণ্য আমদানি না হলে সরকারী কোষাগারে জমাকৃত অর্থ ফেরৎ পেতে আমদানিকারকদের অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। তাই কয়লাসহ যেকোনো পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে অগ্রিম শুল্ক-করাদি পরিশোধের বিধান রহিত করা একান্ত প্রয়োজন। তিনি ব্যবসাবান্ধব বাজেট প্রণয়নে সিলেট চেম্বারের প্রস্তাবনা যথাযথভাবে মূল্যায়নে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সভায় বক্তারা বলেন, বর্তমানে করোনা মহামারির কারণে ব্যবসায়ীরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। অনেক ব্যবসায়ী প্রায় দেউলিয়া হয়ে গেছেন। তাই বাজেট প্রণয়নে ব্যবসায়ীদের দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। বক্তারা করোনাকালীন ট্যাক্স রিটার্নের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের ফাইল অডিটে না ফেলা, জীবন রক্ষাকারী মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট এর আমদানি শুল্ক মওকুফ করা, দেশীয় কৃষি মেশিনারিজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে আমদানিকৃত কৃষি মেশিনারিজ এর আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করা, কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সমূহকে অগ্রিম ট্যাক্স থেকে অব্যাহতি দেওয়া, পর্যটন খাতে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রণোদনা প্রাপ্তি সহজীকরণ, করোনাকালীন হোটেল-মোটেল এর ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট হ্রাস করে ৫ শতাংশ ধার্য্যকরণ, সিলেটের সব শুল্ক স্টেশনে ব্যাংক বুথ স্থাপন, করদাতার আয় বছরপ্রতি ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি হলে সেই করদাতাকে অডিট থেকে অব্যাহতি প্রদানসহ বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
ভিডিও কনফারেন্সে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কাস্টম্স এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট সিলেটের কমিশনার মোহাম্মদ আহসানুল হক, কর অঞ্চল-সিলেটের কর কমিশনার মো. সাইফুল হক, কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ সফিউর রহমান, সিলেট চেম্বারের সিনিয়র সহসভাপতি চন্দন সাহা, মেট্রোপলিটন চেম্বারের সিনিয়র সহ সভাপতি শফিউল আলম চৌধুরী, পরিচালক ও ভ্যাট, বাজেট, কর সাব কমিটির আহ্বায়ক মো. এমদাদ হোসেন, পরিচালক মো. আতিক হোসেন, আলীমুল এহছান চৌধুরী, সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি শাহ আলম, সাবেক পরিচালক মো. বশিরুল হক, মুজিবুর রহমান মিন্টু, সিলেট জেলা আয়কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি অধ্যাপক শফিকুর রহমান, ওমেন্স চেম্বারের সভাপতি স্বর্ণলতা রায়, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহিত চৌধুরী, সিলেট হসপিটাল অ্যান্ড ডায়গনস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির সভাপতি ডা. নাসিম হোসেন প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২১
এনইউ/এমআরএ