ঢাকা: লকডাউনের মতো পরিস্থিতিতে অর্ডারের বাড়তি চাপ দেখা দেয় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোতে। আর অর্ডার করা পণ্য গ্রাহক ও ভোক্তাশ্রেণির দ্বোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে কাজ করে ই-লজিস্টিক্স উইং ও প্রতিষ্ঠানগুলো।
গত সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে সাত দিনের লকডাউন চলছে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে। গেল বছরের লকডাউনের অভিজ্ঞতা বলছে, এমন সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ নানান পণ্য ও সেবা পাওয়ার প্রধান মাধ্যম হয়ে ওঠে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোতে আসা এসব অর্ডার গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিতে তাই বাড়তি চাপ থাকে লজিস্টিক্স বা পণ্য পৌঁছে দেওয়া তথা ডেলিভারি করা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর। অনেক ই-কমার্সই আবার এ চাহিদার কারণে গড়ে তুলেছে নিজেদের ই-লজিস্টিক্স উইং।
জনপ্রিয় ই-কমার্স ও ই-লজিস্টিক্স প্ল্যাটফর্ম চালডাল ডট কম-এর প্রধান নির্বাহী জিয়া আশরাফ বলেন, সাধারণত আমাদের প্রতিদিন আট হাজার পণ্য ডেলিভারির চাহিদা থাকে। কিন্তু লকডাউনের মতো পরিস্থিতিতে এটা ১৫ হাজার পর্যন্ত চাহিদায় পৌঁছায়। সামনেই আবার রমজান ও ঈদ। তাই আমাদের ক্যাপাসিটি (সক্ষমতা) বাড়াতে হচ্ছে। ডেলিভারি থেকে শুরু করে অন্যান্য ডিপার্টমেন্টেও লোকবল বাড়াচ্ছি আমরা। সেইসঙ্গে আমাদের ওয়্যারহাউস ক্যাপাসিটিও বাড়াচ্ছি। এখন আমাদের ঢাকায় ১৫টি, নারায়ণগঞ্জে দু’টি ও চট্টগ্রামে দু’টি ওয়্যারহাউজ আছে। এছাড়া চট্টগ্রামে আরও একটি ও যশোরে আরও একটি ওয়্যারহাউজ খুব শিগগিরই চালু করতে যাচ্ছি। আমাদের ‘গো গো বাংলা’ লজিস্টিক্স থেকে চালডালের পাশাপাশি আরও অন্তত ১৫০ থেকে ২০০টি মার্চেন্টকে সেবা দেওয়া হয়।
লজিস্টিক্স প্রতিষ্ঠান ই-কুরিয়ারের প্রধান নির্বাহী বিপ্লব ঘোষ রাহুল বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের ডেলিভারি প্রতিনিধিরা সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পণ্য সরবরাহ করছে। তাদের নিয়ে আমরা আরও কাজ করছি। তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। লজিস্টিক্স খাতের অবকাঠামোগত ও মানবসম্পদের ‘ব্যাক আপ’ নিয়ে কাজ করছি আমরা। দেশের ৬৪ জেলায় থাকা আমাদের কর্মীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিচ্ছি আমরা। রাজধানীর তেজগাঁওতে ২৬ হাজার বর্গফুটের একটি ওয়্যারহাউজ নিয়েছি আমরা। যেখানে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ অটোমেশনের ভিত্তিতে কাজ হবে, পার্সেল প্রসেস হবে। মাত্র ছয়জন লোক দিয়ে পুরো ওয়্যারহাউজের কাজ হবে।
বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় এক লাখ ২০ হাজার থেকে দেড় লাখ পণ্য ই-লজিস্টিক্স প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে ডেলিভারি হয়ে থাকে বলে জানান খাত সংশ্লিষ্টরা। একইসঙ্গে ডেলিভারি হওয়া এ পণ্যগুলোর বেশিরভাগই ঢাকা থেকে ঢাকার বাইরের অঞ্চলগুলোতে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
এ বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে ঢাকার বাইরেও নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছে লজিস্টিক্স প্রতিষ্ঠানগুলো।
ই-কুরিয়ারের প্রধান নির্বাহী বিপ্লব রাহুল বলেন, আমরা যেসব পণ্য ডেলিভারি করি তার বেশিরভাগই আউটবাউন্ড কেন্দ্রিক অর্থাৎ পার্সেল ঢাকা থেকে ঢাকার বাইরে যায়। ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের জন্য আরেকটি সমস্যা হচ্ছে রাজধানীর বাইরের একটি জেলা থেকে অন্য অনেক জেলায় পণ্য সরবরাহ করতে গেলে পণ্যটিকে আগে ঢাকায় আসতে হয়। ধরেন খুলনা থেকে একটি পার্সেল বরিশালে যেতে হলে আগে ঢাকায় আসে তারপর বরিশাল যায়। অর্থাৎ সবকিছু ঢাকা কেন্দ্রিক। এটাকে আমরা এখন থেকে বিকেন্দ্রীকরণের জন্য কাজ করছি।
তিনি বলেন, আমরা চাই ৬৪ জেলার পার্সেল ৬৪ জেলায় যাবে। এতে গ্রাহকের কাছে পার্সেল পৌঁছাতে প্রয়োজনীয় সময় আরও কমে আসবে। ব্যবসায়ীরা লাভ হবেন সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ে মানবসম্পদ উপকৃত হবে। এটা করতে হলে আমাদের দেশের ১৮টি জেলায় হাব তৈরি করতে হবে। এ হাবে সেসব স্থানীয় মানবসম্পদই তো কাজ করবেন। অর্থাৎ অনেক চাকরির সুযোগও তৈরি হবে।
বাড়তি চাহিদা পূরণে নতুন জনবল নিয়োগ করা হচ্ছে বলেও জানায় কোম্পানিগুলো। জিয়া আশরাফ বলেন, আমাদের সঙ্গে এখন প্রায় ৭০০ জন কর্মী কাজ করছেন। আরও অন্তত ১০০ জন বাইকারের চাহিদা রয়েছে। আমরা তাদের নিয়োগে কাজ করছি।
বিল্পব ঘোষ বলেন, ই-কুরিয়ারে এখন প্রায় ৬০০ জন কর্মী কাজ করছেন। আরও অন্তত ৫০০ কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। ২০০ জন রাজধানীর জন্য ও বাকিরা রাজধানীর বাইরের জন্য। এ খাত এমনিতেও বড় হচ্ছে। শুধু করোনা বা লকডাউনের জন্য নয়। এ খাতের চাহিদাও রয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পেপারফ্লাই বা আমাজন-আলিবাবার লজিস্টিক্স উইংয়ের দিকে দেখেন। তাদের বড় হতে তো করোনা লাগেনি। করোনার আগে থেকেই এ খাত সেসব দেশে বড় হয়েছে। আমাদের দেশেও এর বড় সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৬২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০২১
এসএইচএস/আরবি